Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Earthquake in Turkey and Syria

প্রাণে বাঁচলেও খাব কী, হাহাকার সিরিয়া-তুরস্কে

তুরস্কের সীমান্ত দিয়ে ভূমিকম্পে ধ্বস্ত সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ এখনও চলছে। তবে সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ থাকায় ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ কঠিন হয়ে পড়ছে।

A Photograph of aftereffects of earthquake in Turkey and Syria

ভূমিকম্পের পরে সপ্তাহ খানেক কেটে গিয়েছে। উদ্ধারকাজ এখন শেষের পথে। নানা দেশ থেকে আসা উদ্ধারকারী দলগুলি এ বার ফিরে যাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
আঙ্কারা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৪
Share: Save:

ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্কের হাটায় শহরে কংক্রিটের স্তূপের আড়ালে ২০৩ ঘণ্টা আটকে থাকার পরে আজ এক মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিপর্যয়ের পরে কারহামানমারাস শহরে চার দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে ছিল ১৭ বছরের আয়েশা। তার ক্ষীণ হয়ে আসা কণ্ঠস্বরের সূত্র ধরে প্রায় আট ঘণ্টার পরিশ্রমের পরে কিশোরীর হাতটা ধরেছিলেন উদ্ধারকারী ভিক্টর হোলজ়ার। ধ্বংসস্তূপের বাইরে অপেক্ষারত উদ্ধারকারী দলকে সে কথা জানাতেই হাততালি আর জয়ের উল্লাসে ফেটে পড়েছিলেন সকলে। বুদাপেস্টের বাড়িতে বসে সংবাদমাধ্যমের সামনে গত কয়েক দিনের সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিচ্ছিলেন ভিক্টর।

তুরস্কের ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত এলাকায় হাঙ্গেরি থেকে পাঠানো উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গিয়েছিলেন ২৬ বছরের ভিক্টর। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী ভিক্টরের জীবনে এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। চার দিন ধরে আটকে থাকা কিশোরীকে উদ্ধারের কথা বলতে গিয়ে বার বার উত্তেজনায় ফেটে পড়ছিলেন তিনি। আয়েশার বাড়ির লোকের খোঁজ মিলেছে। তাকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা গিয়েছে।

কিন্তু বাকিরা?

তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াট ওকতায় বলেছেন, ধ্বসংস্তূপের তলা থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুদের মধ্যে ৫৭৪ জনের বাবা-মায়ের খোঁজ মেলেনি। তাদের মধ্যে মাত্র ৭৬ জনকে নিকটাত্মীয়ের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। অন্য দিকে, এখনও সন্তানের খোঁজ পাননি বহু বাবা-মা। ছেলে-মেয়ের খোঁজ চেয়ে প্রশাসনের দেওয়া আপৎকালীন নম্বর আর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কাছে রোজ এমন হাজারো ফোন আসছে।

ভূমিকম্পের পরে সপ্তাহ খানেক কেটে গিয়েছে। উদ্ধারকাজ এখন শেষের পথে। নানা দেশ থেকে আসা উদ্ধারকারী দলগুলি এ বার ফিরে যাচ্ছে। হিসাব বলছে, মৃতের সংখ্যা ৩৬ হাজার পার করেছে। জখম আর ক্ষতিগ্রস্তের কোনও হিসাব নেই। কিন্তু সরকারের চিন্তা এখন অসহায়, সব হারানো মানুষগুলোকে নিয়েই।

কারহামানমারাসের বাসিন্দা সেরকান টোটাগলু চার সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তবে সব হারিয়ে আশ্রয় এখন ত্রাণ শিবিরেই। চোখের সামনে নিজেদের বাড়িটাকে গুঁড়িয়ে যেতে দেখার পরে ছ’বছরের ছোট মেয়েটা ক্রমাগত বাবাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে, ‘‘আমরা কি মরে যাব বাবা?’’ অসহায় টোটাগলু আর তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়েদের আস্বস্ত করে শুধু বলতে পারছেন, ‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ কিন্তু কী ভাবে? প্রাণে বাঁচলেও খাব কী— প্রশ্ন টোটাগলুর।

উত্তর জানা নেই ৫২ বছরের সেলমারও। নাতি-নাতনিদের যতটা পারছেন আগলে রাখছেন। ভূমিকম্প ছাড়া আর যে কোনও বিষয়ে কথা বলতে রাজি তিনি। বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা কিছুতেই মনে করতে চান না। তবু পিছু ছাড়ছে না প্রশ্ন। পাঁচবছরের নাতি থেকে থেকেই প্রশ্ন করছে, ‘‘ফের ভূমিকম্প হতে পারে?’’

তুরস্কে স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসকদের দলে রয়েছেন মনোবিদ সুয়েডা দেভেজি। বললেন, ‘‘শিশুমনে এই বিপর্যয়ের যে কালো ছাপ পড়েছে তার জন্য দীর্ঘ চিকিৎসা প্রয়োজন। পাশাপাশি বড়দের মনেরও যত্ন নিতে হবে।’’ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত এক মায়ের কথা জানালেন সুয়েডা। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ওই মহিলা ঘটনার অভিঘাতে একেবারে চুপ করে গিয়েছেন। সন্তানদের যত্ন নেওয়া তো দূর, নিজেও খেতে-ঘুমোতে পারছেন না। শিশুমনে ঘটনার অভিযাত পর্যবেক্ষণের জন্যে ওদের হাতে রং-তুলি তুলে দিয়েছেন সুয়েডারা। যেমন খুশি তেমন আঁকতে বলা হয়েছে ওদের। সুয়েডা জানালেন, নজর রাখতে হবে। হুট করে বেরিয়ে আসতে পারে অবসাদ বা স্বজন হারানোর ছবি।

পাশাপাশি, তুরস্কের সীমান্ত দিয়ে ভূমিকম্পে ধ্বস্ত সিরিয়ায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ এখনও চলছে। তবে সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ রাস্তা বন্ধ থাকায় বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলিতে ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ কঠিন হয়ে পড়ছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে আলোচনায় ওই রাস্তাগুলি খুলে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রধান আন্তোনিয়ো গুতেরেস জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে সিরিয়া সরকার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE