ইয়ানের দাপটে বিপর্যস্ত ফ্লরিডার অরেঞ্জ কাউন্টি। উদ্ধারে নেমেছে দমকল বাহিনী। পিটিআই
বলা যায়, বন্দুকের গুলি প্রায় কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে আমাদের। প্রাথমিক ভাবে যখন ইয়ানের জন্য সতর্কতা জারি হচ্ছিল তখন বলা হয়েছিল ট্যাম্পাতেও আছড়ে পড়বে ‘ক্যাটেগরি ৪’ ঘূর্ণিঝড়। কিন্তু ল্যান্ডফলের ঠিক ঘণ্টা দুই আগে গতিপথ পরিবর্তন করে এখান থেকে ৮০-১০০ মাইল (১২৮-১৬০ কিলোমিটার) দক্ষিণে ফোর্ট মায়ারসে ঝড়় আছড়ে পড়ায় বেঁচে গেল ট্যাম্পা। এখনও পুরো খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু যেটুকু জেনেছি তাতে যে যে শহর ইয়ানের সম্মুখীন হয়েছে সেগুলির অবস্থা বেশ বিপর্যস্ত। কোথাও কোথাও হাইওয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভেঙে পড়েছে বাড়ি-ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাও। অনেক জায়গাতেই স্টর্মসার্জ (ঝড়ের ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা) হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ ফুট। হাওয়ার বেগ ছিল প্রায় ১৮০ মাইল প্রতি ঘণ্টা (২৮৯ কিলোমিটার)। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছে ঝড়ের তাণ্ডব। আজ সকাল দশটা পর্যন্ত জেনেছি, প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ এখনও বিদ্যুৎহীন। ঝড়ের গতিপথের বাইরের এলাকায় ঝড় চলাকালীন বিদ্যুৎ না থাকলেও পরে তা এসে যায়। কিন্তু সঙ্কটে রয়েছেন সেই মানুষেরা যাঁদের শহরের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে এই ঝড়। এখনও পর্যন্ত কোনও প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি, এটাই স্বস্তির।
ফ্লরিডায় যাতে সাধারণ মানুষের খুব বেশি ক্ষতি না হয়, তাই উদ্ধারকর্মীদের আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। অন্তত ৩০০টি অ্যাম্বুল্যান্সকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেই মতো। মজুত রাখা হয়েছে প্রায় ৩৭ লক্ষ মানুষের খাবার ও ৩৫ লক্ষ লিটার জল। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল একটি ঝড়ের ভিডিয়োতে দেখা যায়, এক জন সাংবাদিক ঝড়ের মধ্যে খবর করছেন। হঠাৎ হাওয়ার তীব্রতায় তিনি প্রায় মুখ থুবড়ে পড়েন।
আমাদের এখানে বৃষ্টি থামলেও ২৫ থেকে ৩০ মাইল (৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার) প্রতি ঘণ্টা বেগে হাওয়া বইছে। আকাশে ঘন মেঘ। নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দর। শহরের প্রশাসন জানিয়েছে, এখন রাস্তায় না বেরোনোই ভাল। জোরকদমে কাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। এই মাত্র যেমন জানতে পারলাম, স্যারাসোটা শহরে ভেনিস থিয়েটারের ছাদ ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে শেষ পাওয়া খবর, কাল আকাশ কিছুটা পরিষ্কার হবে। তার পরেই দুর্গাপুজোর সূচনা হবে আমাদের। ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল বলেই পুজোর জোগাড় আগে থেকে করে রেখেছিলাম। তবে ট্যাম্পার বাইরের মানুষেরা কতটা আসতে পারবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ঝড় যে হবে সেটা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সতর্ক করেছিল প্রশাসন। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম ফ্লরিডায় দাপট চালিয়ে ইয়ান এখন পূর্ব ফ্লরিডাগামী। তবে, তার তীব্রতা বেশ খানিকটা কমে গিয়েছে বলেই শোনা যাচ্ছে। ২০০১ সাল থেকে এই নিয়ে বেশ কয়েকটি ঝড়ের অভিজ্ঞতা হল আমার ফ্লরিডায়। এপ্রিল-মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে হারিকেনের সময়। এখানে থাকার এটা একটা অভিজ্ঞতা বলা চলে। এখানে যেমন সমুদ্র রয়েছে, কলকাতার মতো আবহাওয়া রয়েছে তেমনই ঝড়ও রয়েছে। এই নিয়েই থাকা।
(লেখক ট্যাম্পায় সাইবার সিকিয়োরিটি নিয়ে কর্মরত প্রযুক্তিবিদ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy