বিজয় মিছিল পিটিআই সমর্থকদের। ছবি: রয়টার্স।
পাকিস্তানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা পরেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার ধারে-কাছে নেই কোনও দল। যে দলটির সমর্থনে প্রার্থীরা সব থেকে বেশি সংখ্যক আসন পেয়েছেন, সেই দলের নেতা জেলবন্দি। একটি দল পাওয়া আসনের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও নিজেদের ‘জয়ী’ বলে ঘোষণা করে ফেলল। আর একটি দলের সঙ্গে ‘জোট’ সরকার গড়ার হবে, এ রকমও ইঙ্গিত দিয়ে দিল। অন্য দলটির নেতা আবার বলে বসলেন, কারও সঙ্গে জোটের কোনও কথাই হয়নি।
এই ডামাডোলের মধ্যেই দেশের ‘সব থেকে ক্ষমতাশালী’ সেনাবাহিনীর প্রধান দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিলেন, ‘‘পাকিস্তানের রাজনৈতিক বহুত্বকে তুলে ধরতে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত জোট সরকারই।’’ কোন কোন দল এই ‘জোট সরকার’ গঠন করবে সে বিষয়ে সেনাপ্রধান মুখ না খুললেও নির্বাচনের আগে থেকেই দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলে আসছেন, এ বার সেনার ‘পছন্দের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী’ পিএমএল(এন) সর্বেসর্বা নওয়াজ় শরিফ। আর গত কাল নওয়াজ় নিজেই বলেছিলেন, পিপিপি-সহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট সরকারের বিষয়ে তাঁরা কথাবার্তা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন।
আজ পাক সেনাপ্রধান সৈয়দ আমির মুনিরের তরফে প্রকাশিত এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘‘নির্বাচনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের মানুষের সেবা করা। এটা কোনও প্রতিযোগিতা নয়। পাকিস্তানের মানুষ সংবিধানে আস্থা রেখেছেন। এ বার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরও উচিত, সংগঠিত ভাবে সরকার গঠনে উদ্যোগী হওয়া। ২৫ কোটি মানুষের এই দেশের প্রগতির জন্য এই ঐক্যের প্রয়োজন।’’
ভোটের পরে দু’দিন পার হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত ফলাফল সম্পূর্ণ ঘোষণা করা হয়নি। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর দাবি, গণনায় ব্যাপক কারচুপি করতে এবং অনৈতিক ভাবে নওয়াজ় শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ় (পিএমএল-এন)-কে জেতাতে নির্বাচন কমিশন ফল প্রকাশ করতে দেরি করছে। কমিশনের অবশ্য দাবি, ভোটের দিন মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার জন্য গণনায় দেরি হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ২৫৭টি আসনের ফল প্রকাশিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, পিটিআই এবং পিটিআই সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা ৯৪টি আসন পেয়েছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে পিএমএল(এন) ও বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। এই দু’টি দলের পাওয়া আসনের সংখ্যা যথাক্রমে ৭৩ এবং ৫৪। নওয়াজ়ের আর এক পছন্দের জোটসঙ্গী জমিয়ত উলেমা-এ-ইসলাম-এফ (জেইউআই-এফ) পেয়েছে তিনটি এবং অন্যান্য দল ৩৩টি আসন। পাকিস্তানে সরকার গড়তে প্রয়োজন অন্তত ১৬৯টি আসন। পিএমএল(এন), পিপিপি এবং জেইউআই-এফ জোট বাঁধলেও এখনও পর্যন্ত ম্যাজিক নম্বরের অনেক দূরে তারা। দলীয় সূত্রের খবর, সে জন্যই অন্যান্য ছোট দল বা নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন জোগাড় করতে ইতিমধ্যেই সচেষ্ট হয়েছেন দলের নেতারা। তবে আজ একটি পাক সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিলাবল দাবি করেছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও দলের সঙ্গে তাঁদের জোট সরকার গঠন করা নিয়ে কথা হয়নি। গত কাল তাঁর বাবা আসিফ আলি জ়ারদারির সঙ্গে নওয়াজ়ের বৈঠকের খবর কি তা হলে ভুল? বিলাবলের জবাব, ‘‘এ বিষয়ে মন্তব্য করার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।’’
আজ জেল থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ‘বিজয় ভাষণ’ দিয়েছেন ইমরান খান। আগে রেকর্ড করা এই বক্তৃতায় ইমরান দেশের মানুষকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘‘আপনাদের ব্যালট যা বলেছে, তা বাস্তবে রূপায়িত করতে আপনাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।’’ পিটিআইয়ের তরফে আজও দাবি করা হয়েছে, সরকার গড়বে তারাই। এবং কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, ইমরান-ই তা ঠিক করে দেবেন।
আজ ১২টি মামলায় জামিন পেয়েছেন ইমরান খান। তাঁর গ্রেফতারের পরে বিভিন্ন সামরিক ভবনে পিটিআই কর্মী-সমর্থকেরা তাণ্ডব চালালে দলের নেতা ইমরানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এই সব মামলায় জামিন পেলেও তথ্য ফাঁস ও তোষাখানায় মামলায় আপাতত জেলেই থাকছেন কাপ্তান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy