Advertisement
E-Paper

‘তোমার মতোই ঘরে ফিরতে চাই মা’

সহায়সম্বলহীন হয়ে বাংলাদেশে চলে আসার পরে সে বছর দুর্গাপুজোর সময়ে উদ্‌যাপন করার মতো অবস্থায় ছিলেন না এই রোহিঙ্গা হিন্দুরা।

গত বছরের মণ্ডপ। ফাইল চিত্র

গত বছরের মণ্ডপ। ফাইল চিত্র

সীমন্তিনী গুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৪৮
Share
Save

আদৌ সম্ভব হবে কি না, তাই নিয়ে সংশয় ছিল এই সে দিন পর্যন্ত। অবশেষে হাসি ফুটেছে রমা-স্বপনদের মুখে। মা আসছেন। হ্যাঁ, তাঁদের শরণার্থী শিবিরেও।

পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। দু’বছর আগে মায়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিলেন দশ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী। তাঁরা প্রায় সবাই মুসলিম। শুধু ৫২৩ জন হিন্দু ছিলেন শরণার্থীদের মধ্যে। মায়ানমারে সেনা নিগ্রহের শিকার হচ্ছিলেন তাঁরাও। বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে কক্সবাজারের কাছে উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন তাঁরা। তবে মূল শিবিরে নয়। সেখান থেকে কিছুটা দূরে।

সেটা ২০১৭-র অগস্ট মাসের কথা। সহায়সম্বলহীন হয়ে বাংলাদেশে চলে আসার পরে সে বছর দুর্গাপুজোর সময়ে উদ্‌যাপন করার মতো অবস্থায় ছিলেন না এই রোহিঙ্গা হিন্দুরা। তবে গত বছর রীতিমতো প্যান্ডেল করে দুর্গাপুজো করতে পেরেছিলেন। এ বছরেও প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। রাত পোহালেই দেবীকে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় তাঁরা।

কুতুপালং শিবিরের ইউনেস্কো-স্বেচ্ছাসেবক শাকিব আলি জানালেন, শরণার্থী শিবিরের শত কষ্ট ভুলে গিয়ে এই কয়েক দিন পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন হিন্দু রোহিঙ্গারা। গত বছর কুতুপালং গিয়ে আলাপ হয়েছিল স্বপন পালের সঙ্গে। শাকিবের ফোনে ধরা গেল তাঁকে। বললেন, ‘‘কয়েক মাস ধরে যা চলছে! এ বছর তো ভেবেছিলাম পুজো করাই যাবে না।’’ কেন, বুঝিয়ে দিলেন শাকিব-ই। ‘‘২৪ অগস্ট টেকনাফে খুন হন যুব লিগ নেতা ওমর ফারুক। তদন্তে নেমে পুলিশের নজর পড়ে শিবিরের কয়েক জন রোহিঙ্গার উপরে। তার

পর থেকে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশি পুলিশের বেশ কয়েক বার সংঘর্ষ হয়েছে।’’

কয়েক লক্ষ শরণার্থীর বসবাস যে শিবিরে, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা সহজ নয়। গত দু’মাস খুব কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলেছে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু অবস্থা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মহা ফাঁপরে পড়ে যান হিন্দু শরণার্থীরা। মূল শরণার্থী শিবির থেকে মাইল দুয়েক দূরে থাকেন তাঁরা। কিন্তু গন্ডগোলের আঁচ তাঁদের গায়ে লাগতেও বেশি সময় লাগেনি। ফলে এ বার দুর্গাপুজো করা আর সম্ভব নয় বলে ধরেই নিয়েছিল শিবিরের বাসিন্দা ১১২টি পরিবার।

কিন্তু সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পেরেছেন শরণার্থীরাই। সাহায্যে স্থানীয় প্রশাসন। আস্তে আস্তে জোগাড় করেছেন পুজোর সব উপাচার। স্থানীয় মৃৎশিল্পীর কাছ থেকে প্রতিমা আনারও ব্যবস্থা হয়েছে। শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গা বধূ রমা বারুই বললেন, ‘‘কাছেই কোটবাজার। সেখানেই মূর্তি গড়া হয়েছে। ষষ্ঠীর আগেই নিয়ে আসা হবে।’’ স্বপনের কাছ থেকে জানা গেল, প্রায় ৮৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে পুজোয়।

তবে মূর্তির খরচ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যখন মায়ানমারে থাকতাম, তখন তো প্যান্ডেল করে দুর্গাপুজো

করার কোনও সুযোগ ছিল না। শুধু মন্দিরে পুজো হত। গত বছর কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও উখিয়া উপজেলা প্রশাসন আমাদের অনেক সাহায্য করেছে বলেই পুজোর কয়েকটা দিন আমরা খুব আনন্দ কাটাতে পেরেছিলাম।’’ তিনি জানালেন, গত বছর সরকারের তরফে শরণার্থীদের নতুন জামাকাপড় ও ভাল খাবারদাবার দেওয়া হয়েছিল। সে বার পুজো দেখতে এসেছিলেন অনেক মুসলিম শরণার্থীও। সকলে মিলে হাসি-আনন্দে কেটেছিল কয়েকটা দিন। এ বছরও দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী এসে অশান্তি-অসুরকে নিধন করবেন, আশায় তাঁরা।

অঞ্জলির সময়ে মায়ের কাছে কী চাইবেন? উত্তর দিতে গিয়ে ভারী

হয়ে আসে রমার গলা। বলেন, ‘‘শুধু বলব, আমাদের দেশে ফিরে যেতে দাও মা। তুমি যেমন ঘরে ফেরো, আমরাও সে রকম ঘরে ফিরে

যেতে চাই।’’

Rohingya 2019 Durga Puja Special Myanmar Bangladesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।