জেনিনে ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে নিহত ২২ বছরের প্যালেস্তাইনি যুবকের দেহ নিয়ে বিক্ষোভ প্যালেস্তাইনিদের। পড়ে রয়েছে ইউসেফ মুহেসেনের নিহতদের দেহ। ছবি: রয়টার্স।
পশ্চিম ভূখণ্ডে ইজ়রায়েলি সেনার অভিযানে নিহত হলেন ১০ জন প্যালেস্তাইনি। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, ২০০৫-এর পরে পশ্চিম ভূখণ্ডে এত বড় ইজ়রায়েলি হানা হয়নি। ইজ়রায়েলের দাবি, প্যালেস্তাইনি জঙ্গিরা ইজ়রায়েলে বড় ধরনের হামলার ছক কষছিল। জঙ্গিদের খুঁজতেই অভিযান চালানো হয়। জঙ্গি ঘাঁটি থেকেই প্রথমে গুলি চালানো হয় বলেও দাবি তাদের। অন্য দিকে, শুক্রবার জেরুসালেমের একটি সিনাগগে এক বন্দুকবাজের গুলিতে সাত জন ইজ়রায়েলি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক ৭০ বছরের বৃদ্ধও। জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও তিন জন। ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে জঙ্গিও।
পশ্চিম ভূখণ্ডের উত্তরে জেনিন শহরের প্যালেস্তাইনি শরণার্থী শিবিরে বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালায় ইজ়রায়েলি সেনা। প্যালেস্তাইনি স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, এই হামলায় ন’জন নিহত হয়েছেন। অন্তত ২০ জন প্যালেস্তাইনি জখম হয়ে হাসপাতালে বন্দি। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সারা রাত অভিযান চালিয়ে শুক্রবার ভোর রাতে এলাকা ছাড়ে ইজ়রায়েলি সেনা।
রামাল্লার কাছে আল-রামে ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে আর এক প্যালেস্তাইনি নিহত হয়েছেন। প্যালেস্তাইনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, জেনিনে প্যালেস্তাইনি হত্যার প্রতিবাদে আল-রামে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন এক দল প্যালেস্তাইনি। ইজ়রায়েলি সেনা বিক্ষোভকারীদের উপরে গুলি চালালে এক জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। জখম হয়েছেন আরও কয়েক জন।
জেনিনে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৬১ বছর বয়সি এক মহিলা— মাজেদা ওবেদ। তাঁর মেয়ে কেফিয়াতের কথায়, ‘‘মা তখন সবে প্রার্থনা শেষ করেছেন। হট্টগোল শুনে জানলা দিয়ে মাথা বাড়িয়েছিলেন। তখনই তাঁর গলায় গুলি লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি।’’ কার্পেটের উপরে চাপ চাপ রক্ত পড়ে রয়েছে, সাংবাদিকদের দেখিয়েছেন ২৬ বছর বয়সি কেফিয়াত।
বহু প্রত্যক্ষদর্শী প্যালেস্তাইনি জানিয়েছেন, নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছিল ইজ়রায়েলি সেনা। এলাকার বেশির ভাগ বাড়ির জানলার কাচ চুরমার হয়ে গিয়েছে। এলাকার এক বাসিন্দা উম ইউসুফ আল-সাওয়ালমির কথায়, ‘‘দেখতে পাবেন, গুলির চিহ্ন বাড়ির ভিতরের আসবাবপত্র ও রেফ্রিজারেটরেও। নির্বিচারে গুলি না চালালে তা হবে কী করে!’’ ইজ়রায়েলি সেনার অবশ্য দাবি, জঙ্গিরা যে দিক থেকে সেনার উপরে হামলা করছিল, তারা শুধু সে দিকেই গুলি চালিয়েছে। বাড়ির ভিতরে থেকেও মাজেদার বয়সি এক সাধারণ মহিলা কী ভাবে নিহত হলেন, সেই প্রশ্ন করাতে ইজ়রায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র মন্তব্য করেন, ‘‘তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
জেনিন সরকারি হাসপাতালের ডিরেক্টর ওয়াসিম বকর জানিয়েছেন, কাঁদানে গ্যাসে অসুস্থ হয়ে বহু প্যালেস্তাইনি শিশুও তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
জেনিনে হামলার ‘বদলা নেওয়া হবে’, আজ সকালেই দাবি করেছিল প্যালেস্তাইনি জঙ্গি সংগঠন হামাস। তার পরে স্থানীয় সময় রাত সওয়া আটটায় পূর্ব জেরুসালেমের নেভে ইয়াকভে এক সিনাগগে গুলি চালিয়েছে এক বন্দুকবাজ। ঘটনাস্থলেই নিহত হন পাঁচ জন। জখম পাঁচ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারা যান গুরুতর জখম দু’জন। বাকি তিন জনের প্রাণের আশঙ্কা নেই বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তাঁদের মধ্যে এক ৭০ বছরের বৃদ্ধও রয়েছেন। ইজ়রায়েলি সেনার গুলিতে নিহত হয়েছে জঙ্গিও। এখনও পর্যন্ত কোনও জঙ্গি সংগঠন অবশ্য এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
জেরুসালেমের সিনাগগে এই হামলার নিন্দা করেছে আমেরিকা। আমেরিকান বিদেশ দফতরের এক মুখপাত্র বেদান্ত পটেল বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা ইজ়রায়েলের পাশে আছি। আক্রান্তদের পরিবারকে সমবেদনা জানাই।’’ সামনের সপ্তাহেই ইজ়রায়েল সফরে যাওয়ার কথা আমেরিকান বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। তবে আজকের হামলার পরে সেই সফরসূচিতে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পটেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy