একটাও গুলি খরচ করতে হয়নি কাউকে। যুদ্ধ-যুদ্ধ রবের মধ্যেই গত কাল ক্রিমিয়া উপদ্বীপের এক রকম দখল নিয়ে ফেলেছে রুশ সেনা। এ বার তাই ইউক্রেন জুড়ে আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। গোটা দুনিয়ার চোখ এখন রাশিয়ার দিকে। ইউক্রেনের মাটিতে রুশ আগ্রাসনের পরিণতি কী হবে, প্রশ্ন অগুনতি মানুষের মনে। ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের কথায়, “২১ শতকের ইউরোপে ইউক্রেনই সব চেয়ে বড় সঙ্কট।”
যার প্রভাব পড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও। ইউক্রেনের মতো ইউরোপের অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ এলাকায় রুশ হানার আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে বেড়ে গিয়েছে তেলের দাম। তার সঙ্গেই ধস নেমেছে রুশ শেয়ার বাজারেও। ইউক্রেনের মাধ্যমে গোটা ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী রুশ সংস্থা ‘গ্যাজপ্রমের’ শেয়ার পড়ে গিয়েছে ১৩ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে ইউক্রেন। দেশে এক দিকে বিপুল সংখ্যক রুশ সেনা ঢুকছে। মাথার উপরে চক্কর কাটছে যুদ্ধ বিমান। তার উপরে ক্রিমিয়ার একেবারে পূর্বে একটি ফেরি-টার্মিনালের কাছে রুশ সেনার সাজোঁয়া গাড়ির জটলা আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকারের। ইউক্রেনের তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াতসেনিয়ুক সরাসরি বলেছেন, “পুতিন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।”
ক্রিমিয়ার যে অংশে রুশ সাজোঁয়া গাড়ির জমায়েত হয়েছে, সেই এলাকাটি থেকে জলপথে রাশিয়ার দূরত্ব মাত্র কুড়ি কিলোমিটার। আজ সকাল থেকেই সেখানে ছিল সেনার আনাগোনা। রাশিয়াগামী বহু জাহাজ ওই ফেরি-টার্মিনাল থেকেই ছাড়ে। কিন্তু সেখানে উপস্থিত সেনাদের তরফে কেউই কিছু জানাতে চাননি বলে সংবাদসংস্থার দাবি। তবে তাদের রুশ ভাষাতেই কথা বলতে শোনা গিয়েছে। সেখানে হাজির সব গাড়িতেও ছিল রাশিয়ার নম্বরপ্লেট।
রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের যুক্তি, ক্রিমিয়ার পরিস্থিতি যত দিন না স্থিতিশীল হচ্ছে, তত দিন সেনা মজুত রাখতেই হবে। তবে এই পদক্ষেপের ফলে জি-৮ সদস্যপদ খোয়ানোর আশঙ্কা বা আগামী জুন মাসে সোচিতে শীর্ষ সম্মেলন বয়কটের যে হুমকি আমেরিকা-সহ পশ্চিমের অন্য দেশগুলি দিয়েছে, তাকে বিশেষ পাত্তা দিচ্ছে না রাশিয়া। পশ্চিমী দেশগুলির এমন আচরণে বেশ রুশ বিদেশমন্ত্রী। জি-এইট বিতর্কে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সরাসরি কোনও মন্তব্য না করলেও তাঁর মুখপাত্র দিমিত্রি এস পেস্কভ বলেন, “এতে রাশিয়ার কিছু যাবে আসবে না। জি-৮-এ রাশিয়ার অনুপস্থিতি বুঝবে সবাই।” রুশ প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভ এ দিনও বলেছেন, উপস্থিতি বোঝা না গেলেও পদচ্যুত ভিক্টর ইয়ানুকোভিচই এখনও ইউক্রেনের বৈধ শাসক।
প্রতিবেশী দেশ অনেক শক্তিশালী জেনেও অবশ্য বসে নেই ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যেই প্রায় রুশ সেনার দখলে চলে যাওয়া ক্রিমিয়ায় নতুন কয়েক জন গভর্নর নিয়োগ করেছে তারা। সেখানকার ধনী ব্যবসায়ীদের সমর্থন জোগাড়ের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। ক্রিমিয়ায় রুশপন্থী সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আজই দেশের নৌবাহিনীর প্রধানকে বরখাস্ত করেছে সরকার।
কিয়েভে আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠক ছিল। কূটনীতিকদের দাবি, তাঁরা এখনই রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার হুমকি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় সমাধানের কথা ভাববেন। ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠান (ওএসসিই) জানিয়েছে, সঙ্কট মেটাতে তারা একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী তৈরি করতে চাইছে। বস্তুত গত কাল রাতে ফোনে পুতিনকেও সেই বার্তাই দিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা মের্কেল। পুতিনকে তিনি জানান, রাশিয়া ক্রিমিয়ায় সেনা পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে এর রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে। জার্মানির সরকারি মুখপাত্রের দাবি, পুতিন মের্কেলের কথায় সায় দিয়েছেন। মের্কেল গত কাল কথা বলেছেন ওবামার সঙ্গেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy