Advertisement
E-Paper

শস্য কাটার পরেই বিনা চাষে গম

আমন ধান কাটার পর গম বুনতে-বুনতে ডিসেম্বর মাস হয়ে যায়। অথচ গম বোনার উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগ। চাষে দেরির জন্য গমের ফলন কমছে রাজ্যে। এই অবস্থায় বিনা কর্ষণ বা শূন্য কর্ষণ পদ্ধতি গম চাষের একমাত্র সমাধান।আমন ধান কাটার পর গম বুনতে-বুনতে ডিসেম্বর মাস হয়ে যায়। অথচ গম বোনার উপযুক্ত সময় নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষভাগ। চাষে দেরির জন্য গমের ফলন কমছে রাজ্যে। এই অবস্থায় বিনা কর্ষণ বা শূন্য কর্ষণ পদ্ধতি গম চাষের একমাত্র সমাধান।

ভবানী দাস

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৩৭
Share
Save

সাধারণ ভাবে মাটি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করার পর গম বীজ বোনা হয়। কিন্তু বিনা কর্ষণ পদ্ধতিতে আগের ফসল তোলার পর জমিতে কোনও রকম চাষ ছাড়াই বীজ বোনা হয়। অর্থাৎ বীজ বোনার জন্য জমি তৈরির দরকার পড়ে না। আমন ধান কাটার এক-দু’দিন পরেই শূন্য কর্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গম বুনলে সঠিক সময়ে (নভেম্বর মাসের মধ্যে) চাষ করা সম্ভব হয়।

শূন্য কর্ষণ যন্ত্র

এটি ট্রাক্টর চালিত একটি বীজ বপন যন্ত্র। এই যন্ত্রে দু’টি প্রকোষ্ঠ থাকে। পেছনের প্রকোষ্ঠে বীজ ও সামনের প্রকোষ্ঠে সার রাখা হয়। প্রকোষ্ঠ দু’টির পাইপ নীচে ২০ সেমি দূরত্বে লাগানো ফলার পেছনে যুক্ত থাকে। যন্ত্রটি চালালে পাইপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট দূরত্বে ও গভীরতায় সার ও বীজ ফলার পেছনে সৃষ্ট নালায় পড়ে। বীজ ও সার একসঙ্গে পাশাপাশি পড়ে বলে সারের অপচয় কম হয় এবং গাছ পূর্ণ মাত্রায় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো সারির দূরত্ব ও গভীরতা কম বা বেশি করা যায়। শূন্য কর্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে ৩০-৪০ মিনিটে এক বিঘা জমিতে বীজ বোনা যায়।


গম চাষ পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে গম চাষ করতে হলে ধান কাটার সময় ধানের গোড়া ৬ ইঞ্চি রেখে কাটতে হবে। পরবর্তী সময়ে ছেড়ে রাখা ধানের গোড়া (নাড়া) পচে জমিতে জৈব সার হিসাবে যুক্ত হবে এবং মাটির উর্বরতা বাড়াবে। মনে রাখতে হবে মাটিতে খুব বেশি রস থাকলে যন্ত্রটি চালাতে অসুবিধা হয়। মাটির রস কমিয়ে বীজ বোনা উচিত।

জমি ও গমের জাত

বেলে মাটি ছাড়া প্রায় সব প্রকার মাটিতে এই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। তবে বেলে-দোঁয়াশ, পলি ও এঁটেল-দোঁয়াশ এবং দোঁয়াশ মাটি সবচেয়ে ভাল। মাঝারি উঁচু জল নিকাশিযুক্ত সমতল জমি এই পদ্ধতির চাষের জন্য উপযুক্ত। গমের পিবিডব্লিউ ৩৪৩, এইচডি ২৭৩৩, নঙ ১০১২, ডি বি ডব্লু ৩৯ জাতগুলি ভাল ফলন দেয়।

আগাছা নিয়ন্ত্রণ

যেহেতু জমি চাষ করা হয় না, তাই আগাছার উপদ্রব কম হয়। ধান কাটার পর জমিতে আগাছা থাকলে, আগাছামুক্ত করে তবেই বীজ বোনা উচিত। এর জন্য বীজ বোনার ৭-১০ দিন আগে অনির্বাচিত আগাছানাশক হিসাবে গ্লাইফসেট (অন্তর্বাহী) ৬-৭ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে মাটিতে স্প্রে করতে হবে। খুব বেশি আগাছা থাকলে সাত দিন অন্তর দু’বার আগাছানাশক দেওয়া যেতে পারে। গম বীজ বোনা পরবর্তী ও অঙ্কুরোদ্গম পূর্ববর্তী আগাছানাশক হিসাবে পেন্ডিমিথালিন জাতীয় আগাছানাশক ২-২.৫ মিলি/লিটার জলে গুলে বীজ বোনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তী ৩০-৪০ দিন জমি আগাছামুক্ত থাকবে। এ ছাড়া গাছ জন্মানো পরবর্তী সময়ে জমিতে যদি চওড়া পাতা, আগাছা ও মুথা দেখা যায়, ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে ২, ৪, ডি এর সোডিয়ামক লবণ বা এস্টার প্রতি লিটার জলে ১.৫-২.০ গ্রাম গুলে স্প্রে করলে ফল পাওয়া যায়।

বীজ বপন

এই পদ্ধতিতে বীজ অনেক কম লাগে। ছিটিয়ে গম বুনলে যেখানে বিঘা প্রতি ১৮-২০ কেজি বীজ লাগে, সেখানে এই পদ্ধতিতে বিঘা প্রতি ১৩ কেজি বীজ দরকার। বীজের প্রকোষ্ঠে বীজ ও সারের প্রকোষ্ঠে ৩০ কেজি দানাদার মিশ্র সার (এন: পি: কে ১০: ২৬: ২৬) দিয়ে যন্ত্রটি চালাতে হবে। যন্ত্র চালালে একসঙ্গে বীজ ও সার যন্ত্রের ফলা দ্বারা সৃষ্ট নালায় পড়বে। মনে রাখতে হবে বীজ শোধন করেই বীজ বোনা উচিত এবং যেন গুঁড়ো ও ভেজা সার ব্যবহার না করা হয়।

জলসেচ

বীজ বোনার সময় যদি মাটিতে রসের ঘাটতি থাকে, তবে বোনার ৭-১০ দিন আগে হাল্কা সেচ দিতে হবে অথবা বীজ বোনার ১-২ দিনের মধ্যেই হাল্কা সেচ দেওয়া যেতে পারে। তবে কোনও মতেই জমিতে যেন জল না জমে। গমে সর্বোচ্চ ৬টি সেচ দেওয়া যায়। তবে আমাদের এখানে ৩-৪টি সেচ দিলেই হবে। প্রথম সেচ বোনার ২১ দিনের মাথায় (মুকুট শিকড় দশা) অবশ্যই দিতে হবে। দ্বিতীয় সেচ ৪০-৪২ দিন পর (সর্বোচ্চ পাশকাঠি), তৃতীয় সেচ ৬৫ দিনে (ফুল আসার সময়) এবং শেষ তথা চতুর্থ সেচ দানা পুষ্টির সময় দিলে সর্বোচ্চ ফলন পাওয়া যায়।

সার ও অণুখাদ্য

ধান বোনার সময় মূল সার হিসাবে ৩০ কেজি দানাদার মিশ্র সার দেওয়া হয়েছিল। এরপর দু’বার (২১ ও ৪২ দিনে) চাপান সার হিসাবে ১৫ কেজি ইউরিয়া দিতে হবে। দ্বিতীয় চাপানের সঙ্গে ৩-৪ কেজি পটাশ সার দিতে হবে। বোরণ ও জিঙ্কের অভাব থাকলে ৩০ ও ৪৫ দিন অন্তর দু’বার স্প্রে করতে হবে।

রোগপোকা

এই পদ্ধতিতে রোগ পোকা কম হয়। অনেক সময় গাছ ছোট অবস্থায় উই পোকা ও কাটুই পোকা দেখা যায়। এর জন্য ক্লোরোপাইরিফস ২০ % ইসি ২.৫ মিলি প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তী কালে গোড়া পচা, পাতা ঝলসানো রোগ হলে কার্বেন্ডাজিম ৫০% এক গ্রাম প্রতি লিটার প্রয়োগ করতে হবে। বাদামি দাগ ও ভূষা রোগ দেখা দিলে ম্যানকোজেব ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করলে ফল মেলে।

ফসল কাটা

প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় ৭-১০ দিন আগে পাকে গম। সারিতে বোনা হয় বলে কাটতে মজুর কম লাগে। সময় মতো বোনা হয় বলে ফলন বেশি হয়।

লেখক মালদহ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (শস্য বিভাগ)।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}