Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

শোভনে আস্থা রেখেই পুর-যুদ্ধে যাচ্ছেন মমতা

পুরভোটে শোভন চট্টোপাধ্যায়কেই সামনে রেখে বিজেপি-র মোকাবিলা করবে তৃণমূল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে বুধবার দলের কর্মিসভায় তাঁর পুরযুদ্ধের কৌশল আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবামাধ্যমের একাংশকে ‘উচ্ছিষ্ট’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, “সংবাদ মাধ্যেম যতই লিখুক। পুর নির্বাচন এগিয়ে এসেছে।

নিজস্ব সংবাদদাত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

পুরভোটে শোভন চট্টোপাধ্যায়কেই সামনে রেখে বিজেপি-র মোকাবিলা করবে তৃণমূল।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে বুধবার দলের কর্মিসভায় তাঁর পুরযুদ্ধের কৌশল আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবামাধ্যমের একাংশকে ‘উচ্ছিষ্ট’ বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, “সংবাদ মাধ্যেম যতই লিখুক। পুর নির্বাচন এগিয়ে এসেছে। ওদের বলছি। নির্বাচন যথা সময়ই হবে। আর কলকাতা পুরসভা তৃণমূলের দখলে থাকবে। কানন (শোভন চট্টোপাধ্যায়ই) ফের মেয়র হবে।”

কালীঘাটে বৈঠক করে পুরভোটের ঢাকে কাঠি বাজিয়েই দিয়েছিলেন মমতা। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ দিন পৈলানে দলীয় কর্মিসভায় সেই প্রস্তুতিতে আরও গতি আনলেন তিনি। রাজ্যে বিজেপিই যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ তা কালীঘাটের বৈঠকে যেমন বুঝিয়েছিলেন, এ দিনও দলীয় কর্মীদের সামনে তা আরও স্পষ্ট করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কলকাতার পুরভোট নির্দিষ্ট সময়ে হবে জানিয়েও, এখন থেকেই প্রধান প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় কী করণীয় তার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিজেপি এবং আরএসএসের শাখা সংগঠন দুর্গা বাহিনী, বনবাসী কল্যাণ সমিতি, টাইগার ফোর্স এবং হিন্দু জাগরণ সমিতির নাম করে মমতা দলীয় কর্মীদের নজর রাখতে বলেছেন। তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি বললাম। আপনারা শুনলেন। আর ঘুমিয়ে পড়লেন। তা চলবে না। আমি সব খবর নেব।” এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এলাকায় নতুন মুখ দেখলে খোঁজ রাখুন। তেমন কিছু হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। আর ওই অভিযোগের একটা কপি আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তাছাড়া পার্থদা, বক্সীদা, অরূপ, শোভনকে ওই কাগজ পাঠিয়ে দিন। প্রশাসন তার মতো ব্যবস্থা নেবে। দল দলের মতো।”

বিজেপি থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখতে দলীয় কর্মীদের প্রচারের কৌশল দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর এ রাজ্য দাঙ্গার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দলীয় কর্মীদের ব্যাখা করেন তিনি। অনুপ্রবেশের বিষয়টি তুলে তাঁর অভিযোগ, লোকসভা ভোটে রাজ্যে অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজেপি সরব হয়েছিল। এখন রাজ্যে তারা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাঁর কথায়, “একটা নিদিষ্ট জাতির বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। আর আরেক দিকে বিদেশ থেকে টাকা নিয়ে এসে নানা সংগঠন এখানে কাজ করছে, সেই বিষয়ে কোনও নামগন্ধ করা হচ্ছে না। আমার কাছেও খবর আছে। কোথায় থেকে টাকা আসছে। আর কী করা হচ্ছে। আমি সব নজর রাখছি।” এই জেলায় সংখ্যালঘু ভোটারদের তৃণমূলের দিকে সংঘবদ্ধ রাখতেই দলনেত্রীর এটা প্রচার কৌশল বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।

ঘটনাচক্রে এ দিনই কলকাতায় অনুপ্রবেশের প্রশ্নে কড়া সুরই বজায় রাখলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া। বাংলাদেশ থেকে যে সব মুসলিম ভারতে আসছে তাদের অনুপ্রবেশকারী বলে মনে করেন তিনি। তিন কোটিরও বেশি অনুপ্রবেশকারী এ দেশে ঢুকেছে বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয় দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এ দেশে ঢুকছে। তারপর সারা দেশেই ওরা ছড়িয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কাজকর্ম করছে। ওরা দেশের নিরাপত্তর পক্ষেও বিপজ্জনক। অবিলম্বে ওই সব অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠাক সরকার।” এখানে যারা থাকবে তাদের প্রত্যেকেরই দেশের হিন্দু ভাবাবেগকে মর্যাদা দিতে হবে বলেও তিনি ফের এ দিন উল্লেখ করেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পঞ্চাশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় হিন্দু সমাবেশ হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনই বিজেপি-র কলকাতার চার জেলা কমিটি ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করে। দলীয় সূত্রে খবর, ওয়ার্ড ভিত্তিক এলাকার মানুষের আবেগ জড়িত এমন দু’টি বিষয়কে নিয়ে প্রচার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি তৃণমূল যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে গতবার পুরভোটে জয়ী হয়েছিল, পাঁচ বছরে তার কতগুলি বাস্তবায়িত হয়নি তা নিয়েই ভোটের ইস্তেহার তৈরির সিদ্ধান্ত এ দিনের বৈঠকে নেওয়া হয়েছে। এ দিন কলকাতায় রাজ্য বিজেপি-র প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সূচনা করেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দীনেশ শর্মা। তিনি দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সদস্যপদ নবীকরণের মাধ্যমে এই অভিযানের সূচনা করে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, এ রাজ্যে সদস্য সংখ্যা অন্তত তিন গুণ বৃদ্ধি করা।”

মুখ্যমন্ত্রী দলীয় কর্মীদের এলাকায় বিজেপিকে প্রতিরোধের কৌশলের পাশাপাশি নিজেদের সংগঠন জোরাদার করার পরামর্শও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “নতুন প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসুন। নতুন ছেলে-মেয়েদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করুন। ওদের সঙ্গে কথা বলুন।” সম্প্রতি মোবাইলের মেসেজের মাধ্যেমে সদস্যপদ সংগ্রহের পন্থা নিয়েছে বিজেপি। সেই কারণে পাল্টা ব্যবস্থার পথ বাতলেছেন তাঁদের নেত্রী বলে মনে করেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy