Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

রোজ দেহ তল্লাশি কুণালের, দরকারে গোপন অঙ্গেও

হাসপাতাল ঘুরে জেলে ফেরার পর দেহতল্লাশি থেকে এ বার আর ছাড় পাবেন না ‘সাংসদ’ কুণাল ঘোষ। প্রতিদিন জেলবন্দিদের দেহতল্লাশি করার নিয়ম থাকলেও সাংসদের মতো ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিদের সাধারণত ছুঁতেন না কারারক্ষীরা। কিন্তু কুণাল জেলের মধ্যেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে কুণাল, সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত সরকারের মতো বন্দিদের সেল থেকে শুরু করে শরীরের সর্বত্র তল্লাশি হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

টুপি দিয়ে কুণালের মুখ আড়াল করার চেষ্টা পুলিশের। এসএসকেএম হাসপাতালে।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

টুপি দিয়ে কুণালের মুখ আড়াল করার চেষ্টা পুলিশের। এসএসকেএম হাসপাতালে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৩৪
Share: Save:

হাসপাতাল ঘুরে জেলে ফেরার পর দেহতল্লাশি থেকে এ বার আর ছাড় পাবেন না ‘সাংসদ’ কুণাল ঘোষ।

প্রতিদিন জেলবন্দিদের দেহতল্লাশি করার নিয়ম থাকলেও সাংসদের মতো ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দিদের সাধারণত ছুঁতেন না কারারক্ষীরা। কিন্তু কুণাল জেলের মধ্যেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর ঠিক হয়েছে, এ বার থেকে কুণাল, সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, দেবব্রত সরকারের মতো বন্দিদের সেল থেকে শুরু করে শরীরের সর্বত্র তল্লাশি হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক কারাকর্তা জানান, কুণাল ওষুধ খাওয়ার আগে তাঁর সেলে তল্লাশি চালিয়ে ওষুধের স্ট্রিপ পাওয়া যায়নি। এর অর্থ, কুণাল নিজের শরীরের মধ্যে ঘুমের ওষুধ লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার থেকেই এত বড় কাণ্ড ঘটেছে। তাই এ বার থেকে শরীর তো বটেই, প্রয়োজনে গোপন অঙ্গেও তল্লাশি চালানো হবে। পাশাপাশি, বন্দিদের হাতের নাগালের মধ্যে ওষুধ, দড়ি বা ফিনাইলের মতো কোনও সামগ্রী যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে। প্রেসিডেন্সি জেলের এক অফিসার জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কুণাল ঘুমের ওষুধ খান। আর শুক্রবার সকালে অন্য এক বন্দি ফিনাইল খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ওই বন্দিকে এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি এখন বিপন্মুক্ত।

শনিবার এডিজি (কারা) অধীর শর্মা প্রতিটি জেলের সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন, প্রাণসংশয় হতে পারে এমন ওষুধ আর বন্দিদের হাতে দেওয়া যাবে না। এখন থেকে কারারক্ষীরা দাঁড়িয়ে থেকে বন্দিদের ওষুধ খাইয়ে দেবেন। এই নিয়ম অবশ্য আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের হেলদোল ছিল না। কুণাল-কাণ্ডে সরকার চরম অস্বস্তিতে পড়ায় জেলকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে এডিজি জানিয়েছেন, বন্দিদের ওষুধ খাওয়ানোর নিয়মাবলি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। এই নিয়ে গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না।

তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ আত্মহত্যার চেষ্টা করার পর নিজেই বলেছিলেন, তিনি কোথা থেকে অতগুলো ঘুমের ওষুধ পেলেন, তা দেখা হোক। সেই রহস্যের জট খুলতে এ দিন প্রেসিডেন্সি জেলে সেলের মধ্যে তল্লাশি চালানো হয়। কারাকর্তারা বুঝতেই পারছেন, এক শ্রেণির কারারক্ষীর মদত ও গাফিলতিতেই ওষুধ কিংবা অন্য নানা সামগ্রী বন্দিদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। কুণালের ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়েছে কি না, তদন্তে তা-ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ঘুমের ওষুধ বাইরে থেকে আসেনি তো? জেলের এক কর্তা জানান, কুণালের সেল থেকে অ্যালপ্রাজোলাম (০.৫ মিলিগ্রাম) ওষুধের যে স্ট্রিপ মিলেছে, তার ব্যাচ নম্বর জেলের ওষুধ-খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।

এডিজি এ দিন প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে কারারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেন। সাসপেন্ডেড জেল সুপার নবীন সাহাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেন তিনি। পাশাপাশি, এ দিন সিবিআইয়ের বিচারক অরবিন্দ মিশ্রের কাছে এ নিয়ে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ। সারদা-কাণ্ডে রাঘব বোয়ালদের ধরা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ তুলে ঘুমের ওষুধ খেয়েছেন কুণাল, তাতে কিন্তু আমল দিতে নারাজ সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তার কথায়, কোনও অভিযুক্ত তদন্তে অভিমুখ ঠিক করতে পারেন না। তদন্তের গতি-প্রকৃতি ঠিক করবেন তদন্তকারীরাই। তাঁদের হাতে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকলে কাউকে গ্রেফতার করা হবে। তখন তিনি রাঘববোয়াল না চুনোপুঁটি, দেখা হবে না।
কুণাল-কাণ্ডের জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে শনিবার নারায়ণগড়ে এক দলীয় কর্মিসভায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “যিনি আপনাকে খবরের কাগজে প্রচার করে মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছিলেন, তিনি জেলেই ঘুমের বড়ি খেলেন। জেলের ভিতরে আপনার তো নজরদারি থাকার কথা। এখন বলছেন ‘সাসপেন্ড করে দিয়েছি’। আমি বলছি আগে আপনাকে সাসপেন্ড করা উচিত।”

অন্য বিষয়গুলি:

kunal ghosh saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy