প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এ মাসের ৭ তারিখেই সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন রাজ্যপাল। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের টুইটার অ্যাকাউন্টে রয়েছে সেই ছবি।
মেয়াদ শেষের সাত মাস আগেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিতে পারেন এম কে নারায়ণন। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অথবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ তাঁকে ফোন করে এ ব্যাপারে কোনও নির্দেশ দেননি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী ফোন করে জানতে চেয়েছেন যে, তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন কি না। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ নারায়ণন ঠিক করেছেন যে, সরাসরি নির্দেশ না দিলেও স্বরাষ্ট্রসচিবের মাধ্যমে কেন্দ্র যখন তাঁর মন বুঝতে চাইছে, তখন ইস্তফা দিয়ে দেওয়াই ভাল।
এই কারণে আগামী মাস থেকে নারায়ণন রাজ্যপাল হিসেবে কোনও কর্মসূচি রাখছেন না। মঙ্গলবার তাঁর সচিবালয়ের অফিসারদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে এ কথা জানিয়েও দিয়েছেন তিনি। ১ জুলাইয়ের পর রাজ্যপালের যে সব সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলি আপাতত স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। নতুন কোনও অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণও গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জুন মাসে তাঁর নির্ধারিত কর্মসূচি এখনও বহাল রয়েছে বলে রাজভবনের এক কর্তা জানিয়েছেন।
রাজ্যপালের ইস্তফা সংক্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজভবনে যান তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তাও হয়। নারায়ণনের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, আসলে ব্যাপারটি কী হয়েছে। রাজভবন সূত্র বলছে, নারায়ণন মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, রাজ্যপাল পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কোনও নির্দেশ আসেনি ঠিকই। কিন্তু তাঁর মনে হচ্ছে, কেন্দ্রের দিক থেকে একটা পরোক্ষ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি রাজ্যপাল পদ ছেড়ে দিলে দিল্লি অখুশি হবে না। এমন অবস্থায় চলে যাওয়াই ভাল।
ক’দিন আগেই দিল্লি এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন নারায়ণন। তাঁদের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনাও হয়। তখন কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ইস্তফা দিতে বলেননি। উল্টে নবনিযুক্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল বঙ্গভবনে আসেন নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করতে। নিরাপত্তার বিষয়ে নারায়ণনের পরামর্শও নেন এই অনুজ গোয়েন্দা কর্তা। মনে করা হচ্ছে, মোদীর নির্দেশেই তিনি সে দিন রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কলকাতায় ফিরে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্মেরও কোনও পরিবর্তন হয়নি। তার পরে আজ এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় অনেকেই বিস্মিত।
যদিও কেন্দ্রে সরকার বদলের পরে শিষ্টাচার মেনেই নারায়ণন-সহ অন্য রাজ্যপালদের সরে যাওয়া উচিত ছিল। সে যদি ইউপিএ ফের ক্ষমতায় আসত, তা হলেও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রীতিই অনুসরণ করা হয়। এ দেশে অবশ্য তেমন রেওয়াজ নেই। কেন্দ্রের বার্তার পরেও কোনও রাজ্যপাল যদি ইস্তফা দিতে না চান, তা হলে জোর করে তাঁকে সরানো হবে না বলেই খবর।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য কেন্দ্রের এই আচরণে যথেষ্ট অখুশি। মুখ্যমন্ত্রী মনে করছেন, বিজেপি এ বার পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল পদে সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ কাউকে নিয়োগ করতে পারে। সংবিধান অনুসারে, কেন্দ্র রাজ্যপাল নিয়োগ করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই। কিন্তু রাজ্য সরকার যদি কোনও রাজ্যপালের নামে আপত্তি করে, সে ক্ষেত্রে সেই আপত্তিকে অগ্রাহ্য করারও সাংবিধানিক অধিকার আছে কেন্দ্রের। অতীতে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী যখন আর এক গোয়েন্দা কর্তা টি ভি রাজেশ্বরকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছিলেন, তখনও রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়াই তা করেছিলেন তিনি। তারও পরবর্তী সময়ে লালকৃষ্ণ আডবাণী এমন কাজ করেছিলেন। তখনও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়াই এ আর কিদোয়াইকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নিয়োগ করেন আডবাণী। একই ভাবে রাবড়ী দেবী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর আপত্তিকে অগ্রাহ্য করেই বিনোদ পাণ্ডেকে বিহারের রাজ্যপাল করে পাঠিয়েছিলেন তিনি। মমতার আশঙ্কা, এ বারে মোদী সেই একই কায়দায় রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়াই কাউকে রাজ্যপাল পদে নিয়োগ করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে নারায়ণনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী জানুয়ারি মাসে। প্রকাশ্যে কোনও নির্দেশ না দিলেও বিজেপি নেতৃত্ব কি চাইছেন যে, নারায়ণন নিজেই থেকেই ইস্তফা দিন? এবং তা এখনই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy