কান্নায় ভেঙে পড়েছেন উত্তমের মা-বাবা।
রিকশায় বাড়ি ফেরার পথে দু’দল সমাজবিরোধীর গুলি চালাচালির মধ্যে পড়ে মারা গিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া যুবক। কৃষ্ণনগরের বেলেডাঙা মোড়ের সেই ঘটনার দু’মাসও কাটেনি, শুক্রবার রাতে সমাজবিরোধীদের বোমায় কালী পুজোর মণ্ডপের সামনেই মারা গেলেন এক শিক্ষক।
এক সাধারণ ছাত্র ও শিক্ষকের, সমাজবিরোধীদের গুলি-বোমায় মৃত্যুর পরপর এই দু’টি ঘটনা কৃষ্ণনগরের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিরোধীরা। কৃষ্ণনগরের উপকণ্ঠে আসাননগরের ওই ঘটনায় স্থানীয় সমাজবিরোধী প্রসেনজিৎ মল্লিক ওরফে দুষ্টু-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পাশ করে মাস কয়েক আগে চাপড়ার পুখুরিয়া হাইস্কুলে যোগ দিয়েছিলেন উত্তম সিকদার (৩২)। তার আগে বাড়ির কাছেই আসাননগরের উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পার্শ্ব শিক্ষক ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা নির্মল সিকদার বলেন, “সামান্য ক’টাকা মাইনে পেত। সংসারের হাল ধরতে তাই মরিয়া হয়ে ক’বছর ধরে পাকা চাকরি জন্য চেষ্টা করছিল উত্তম।” মাস কয়েক আগে স্কুল সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করে সেই ‘স্বপ্ন’ও পূরণ হয়েছিল তাঁর। নির্মলবাবুর আক্ষেপ, “বলেছিল, এ বার পাকা চাকরি। আর তোমাকে অন্যের জমিতে কাজ করতে হবে না। সে চাকরি কি রাখতে পারলি বাবা!”
স্থানীয়রা জানান, ক’বছর ধরেই প্রসেনজিতের দাপটে ‘তটস্থ’ আসাননগর। এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তার তোলা আদায় ছিল নিয়মিত ঘটনা। রেয়াত করত না পাড়া-পড়শিকেও। পালাবদলের পরে এখন সে তৃণমূলের ‘ছত্রচ্ছায়াতেই’ ছিল বলে দাবি আসাননগরের বাসিন্দাদের। শাসক দলের কাছাকাছি আসায় সম্প্রতি তার ‘দৌরাত্ম্য’ও বেড়েছিল বলে জানান তাঁরা। তৃণমূলের জেলা নেতারা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।
উত্তম সিকদার
কালী পুজো শেষ। শুক্রবার রাতে, বিসর্জনের তোড়জোড় চলছিল। ভ্যানরিকশায় প্রতিমা তোলার আগে প্রবল জোরে বাজছিল ঢুলি-নাকাড়া। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আচমকা মদ্যপ অবস্থায় অঙ্গভঙ্গি করে নাচতে শুরু করে প্রসেনজিৎ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। উত্তমবাবু এগিয়ে এসে, প্রসেনজিৎকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। পুজো কমিটির এক কর্তা বলেন, “সেই সময়ে মণ্ডপের সামনে পাড়ার প্রবীণ এবং মহিলারাও ছিলেন। প্রসেনজিতের অশ্লীল নাচ দেখেই তাঁকে সেখান থেকে সরে যেতে বলেছিলেন উত্তম।” তারই ‘শাস্তি’ পেতে হয় ওই শিক্ষককে।
উত্তমবাবুর বন্ধু সৈয়দ আলি বিশ্বাস বলেন, “আচমকা দুষ্টু বোমা ছুড়ল। তার পরেই মোটরবাইকে পালাল। দেখি, ধোঁয়ার মধ্যেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে উত্তম।” ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই স্কুল শিক্ষক। গুরুতর জখম বিশ্বনাথ মণ্ডলকে ভর্তি করানো হয় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে।
এর পরেই উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ অবশ্য ওই দিন রাতেই গাংনাপুর এলাকা থেকে প্রসেনজিৎ ও তার দুই সাগরেদ সোমনাথ এবং সুবীরকে গ্রেফতার করে। শনিবার তাদের কৃষ্ণনগর আদালতে তোলা হলে প্রসেনজিতের চার দিন পুলিশ হেফাজত এবং অন্য দু’জনের ১৪ দিন জেলহাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। জেলা পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বোমার আঘাতেই মারা গিয়েছেন ওই শিক্ষক। তবে উত্তমবাবুর সঙ্গে প্রসেনজিতের পূর্ব-শত্রুতা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy