ইংরেজবাজার থানা থেকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মালদহ মেডিক্যাল কলেজে অভিযোগকারিণীকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
অনেক কাণ্ডের পরে অবশেষে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ নথিভুক্ত করাতে পারলেন ইংরেজবাজারের বিধবা মহিলা। ওই মহিলা ও তাঁর বাবার উপর তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ রিন্টু শেখ নামে এক যুবকের হামলার চার দিন পর তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ লেখাতে পারলেন তিনি। তাঁর দাবি, এর আগে তিনি ধর্ষণের চেষ্টার বিষয়টি জানালেও, পুলিশ তাঁর নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে তা নথিভূক্ত না করে, কেবল মারধরের মামলা রুজু করেছিল। শনিবার গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সদস্যদের সঙ্গে ইংরেজবাজার থানায় গেলে, পুলিশ তাঁর অভিযোগ নথিভুক্ত করে। ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু করে পুলিশ। মহিলাকে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য মালদহ মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর ফলে কার্যত নিজেদের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি সরে গেল মালদহ পুলিশ। এত দিন পুলিশ দাবি করে আসছিল, ওই মহিলা কেবল তাঁর বাবাকে মারধরের অভিযোগই করেছেন, ধর্ষণের চেষ্টার উল্লেখ করেননি। এমনকী হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এই মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার পুলিশ জানায়, প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনায় ধর্ষণের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তখনই প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর বলেন, ওই মহিলা চাইলে ফের পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। সংবাদমাধ্যমে তা জানতে পেরে এ দিন ফের অভিযোগ দায়ের করেন ওই মহিলা। এ দিন থানায় পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন না। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী। পরে তিনি বলেন, “রিন্টু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে।”
তা হলে আগে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি কেন? সে জন্য কি সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এএসপি-র দাবি, “সব অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনায় মালদহ জেলা পুলিশ এবং তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। রিন্টুর বিরুদ্ধে মহিলা অভিযোগ করার পরেই কৃষ্ণেন্দু সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ওই মহিলা স্বেচ্ছায় সহবাস করেছেন, তাই ধর্ষণের প্রশ্ন ওঠে না। ওই মহিলার অভিযোগ, এর পর পুলিশ তাঁকে চাপ দিয়ে তাঁর বয়ান বদলের চেষ্টা করে। তিনি তাতে রাজি হননি। কিন্তু বৃহস্পতিবার আদালতে রিন্টুকে পেশ করার পর দেখা যায়, ধর্ষণের চেষ্টার ধারাই দেয়নি পুলিশ। কেবল মারধরের ধারা দিয়েছে। এর পরেই হাইকোর্ট এই মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি কৃষ্ণেন্দুকে মন্ত্রিত্ব থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও পুকুরিয়া থানার ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন। শেষমেশ রিন্টুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নথিভূক্ত করায় স্পষ্ট, চাপের মুখে পিছু হঠেছে পুলিশ।
এ দিন অভিযোগকারিণীর সঙ্গে ছিলেন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির মালদহ জেলা সম্পাদক রত্না ভট্টাচার্য-সহ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। আগাম খবর পেয়ে থানায় উপস্থিত ছিলেন মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী। তিনিই অভিযোগ নেওয়ার সময়ে তদারকি করেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “অভিযোগ পেয়েই রিন্টু শেখের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা রুজু হয়েছে।” তা হলে আগে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি কেন? সে জন্য কী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এএসপির দাবি, “যাবতীয় অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিন মহিলা অভিযোগ দায়ের করার পর জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, “অবশেষে পুলিশ ওই মহিলার অভিযোগ নিতে বাধ্য হল। এ বার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে আশাবাদী।” বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দুশেখর রায়ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশা জানান। অন্য দিকে, মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “যে কেউই কোনও অভিযোগ করতে পারেন। পুলিশ তা খতিয়ে দেখবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy