শপথের পরে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করতে গেলেন জাকির। —নিজস্ব চিত্র।
তিনি কোন দলে— ১২৬ না ১৬৯?
শুক্রবার মাঝ-দুপুর থেকে বিলি বলয় জুড়ে প্রশ্নটা, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
ঠাঠা রোদ্দুর, সাইকেলে বিড়ি ফ্যাক্টরির গেটে নেমেই আসলাউদ্দিন প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন, ‘‘চাচা আমাগো দিন ফুরাইল, মজুরি আর বাড়ার কোনও কারণ দেহি না!’’
বিড়ি বেঁধে তিন কুড়ি পার করা আসলাউদ্দিনের মুখের বলিরেখায় যে দুশ্চিন্তাটা জাঁকিয়ে বসেছে, সেই স্বস্তিটা গুমরে উঠছে বিড়ি মালিক আবু বক্করের চোখেমুখে— ‘‘জাকির ভাই যখন মন্ত্রী হয়সেন তখন আমাগো নিশ্চয় নিরাশ করব্যান না!’’
সেই স্বস্তি আর অস্বস্তির মাঝে মাথা কুটে মরছে ১২৬ আর ১৬৯!
বিড়ি শ্রমিকদের তিন দশকের মজুরি বৃদ্ধির দাবি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়লেও, সরকার নির্ধারিত ১৬৯ টাকা রোজের প্রশ্নে এখনও মুখ ঘুরিয়ে রয়েছেন বিড়ি মালিকেরা। এখনও ১২৬ টাকাতেই থমকে রয়েছে শ্রমিকদের দৈনিক ভাতা।
তাই, শিব বিড়ির মালিক জাকির হোসেন শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতেই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে বিড়ি বলয়।
পালা বদলের পরে, রাজ্য সরকার বরাবরই বিড়ি শ্রমিকদের ন্যূনতম সরকারি মজুরি ১৬৯ টাকার পক্ষে সওয়াল করে এসেছে। উল্টো দিকে মালিক পক্ষও তাদের ১২৬’এর দাবিতেই ছিলেন অনড়। এই অবস্থায়, পেশায় বিড়ি মালিক জাকির হোসেনের পক্ষে শ্রম দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বিড়ি শ্রমিকদের সেই পুরনো দাবি মেনে নেওয়া কতটা সম্ভব হবে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। তিনি এ বার কোন পক্ষে?
সিটুর জেলা সভাপতি আবুল হাসনাত খান মনে করেন, ‘‘বিড়ি শ্রমিকদের হাজারো সমস্যা। পরিচয়পত্র, লগবুক, মজুরি, চিকিৎসা, প্রফিডেন্ড ফান্ড। জাকির নিজে যতই আন্তরিক হোন এগুলি কার্যকর করতে হলে তাঁকে এখন বিড়ি মালিকদের প্রবল বাধার মুখে পড়তে হবে।’’ এত দিনের পুরনো সহযোগীদের সেই বাধা টপকে জাকির কি বাস্তবিকই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে পারবেন?
আসলাউদ্দিনের মতো প্রায় সাড়ে ৯ লক্ষ বিড়ি শ্রমিক ঘোর সংশয় নিয়ে এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।
আইএনটি ইউসির বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক বাদশার আলি অবশ্য মনে করেন, ‘‘বিড়ি মালিক হিসেবে শ্রমিকদের সমস্যাগুলি ভাল করেই জানেন জাকির। মন্ত্রী হিসেবে শ্রমিকেরা চাইবেন জাকির তাঁদের পাশে থাকুন। তবে, কতটা পারবেন সময়ই সে কথা বলবে।’’
আর তৃণমূলের বিড়ি শ্রমিক সংগঠনের জেলার সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান দাবি করছেন, “শ্রমিক সংগঠন হিসেবে শ্রমিকদের সমস্যার সমাধানের দাবিই জানাবো আমরা। বিড়ি শ্রমিকদের ন্যূনতম সরকারি মজুরি চালুর দাবি থেকে আমরা সরছি না।”
স্বাধীনতার পর এই প্রথম মন্ত্রী পেয়েছে বিড়ি শিল্পাঞ্চল। তাও আবার শ্রম দফতরের রাষ্ট্র মন্ত্রিত্বের দায়িত্বে। স্বভাবতই জাকির হোসেনের মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে এক দিকে যেমন আশা তেমনই পাল্টা ভ্রূকুঞ্চনও রয়েছে।
সঙ্গে দোসর, কেন্দ্রীয় টোব্যাকো আইন নিয়ে বিড়ি শিল্পের সঙ্কট। শাঁখের করাতে পড়ে জাকির কী বলছেন, ‘‘আমি বলার কেউ নই, দিদি যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনই কাজ হবে।’’
বিড়ি মালিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার জৈন বলেন, “শুধুমাত্র মালিক–শ্রমিক বিরোধ মেটানোই তো সব নয়। কখনও বিড়ি শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বলার কেউ ছিল না । ফলে পিছিয়ে রয়েছে এই এলাকা। সেখানেও আমাদের নতুন মন্ত্রীকে অনেক কাজ করতে হবে।’’
ইন্দ্রনগর কলোনির বিড়ি শ্রমিক বরুণ হালদার সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন। বলছেন ,“এলাকায় পানীয় জল নেই। রাস্তায় চলাফেরা করা যায় না। এ সবই জাকির সাহেবের চেনা।’’ মজুরির সঙ্গে তাঁদের প্রত্যহিক বেঁচে থাকার এই লড়াইয়েও জাকির কতটা এগিয়ে আসেন, সে দিকেও তাকিয়ে রয়েছে বিড়ি বলয়।
মহালদারপাড়ার রসিকুল শেখ যেমন বলছেন, “অরঙ্গাবাদে আইন শৃঙ্খলা অন্যতম সমস্যা। বোমাবাজির দাপটে এলাকা সন্ত্রস্ত। সাধারণ মানুষের আশা, এ সবও বন্ধ করতে সক্রিয় হবেন জাকির।”
কিন্তু, সাত সকালে সেই যে প্রশ্নটা উঠছে— ১২৬ না ১৬৯?
জঙ্গিপুরের স্থানীয় এক নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘এটা আসলে এক ধরনের টাগ অফ ওয়ার, দড়িটা জাকির জাপ্টে ধরেন না হাল্কা চালে ছেড়ে দেন তা দেখতেই উদগ্রীব হয়ে রয়েছে বিড়ি-দুনিয়া!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy