Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

জমি দিয়ে আয়ের দিশা কাজ হারানো যুবকদের

যুবকেরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে অল্প কিছু আনাজ বিক্রি হয়েছে। বাকিটাও বাজারজাত করে দিন বদলের আশায় আছেন তাঁরা।

বিকল্প: গ্রামের মাঠে আনাজ ফলাচ্ছেন লকডাউনের জেরে কর্মহীন যুবকেরা। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রামে। ছবি: সঙ্গীত নাগ

বিকল্প: গ্রামের মাঠে আনাজ ফলাচ্ছেন লকডাউনের জেরে কর্মহীন যুবকেরা। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রামে। ছবি: সঙ্গীত নাগ

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০৬:১৫
Share: Save:

লকডাউনে কাজ হারিয়ে ফিরেছিলেন গ্রামে। দেখেছিলেন, কাজ হারিয়ে আরও কষ্টে দিন কাটছে গ্রামেরই দশ যুবকের। নিজের জমির কিছুটা তাঁদের চাষ করতে দেন পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের কৃষ্ণপুর গ্রামের দয়াময় মণ্ডল। ওই যুবকদের জন্য নিজেদের জমি ছেড়ে দেন গ্রামের আরও দু’জন। সব মিলিয়ে দাঁড়ায় প্রায় তিন একর। লকডাউন পর্বে ওই যুবকদের চেষ্টায় সেখানে ফলেছে ঢেঁড়শ, লাউ, শশা, করলা, বরবটি, কুমড়ো আর ভুট্টা।

যুবকেরা জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যে অল্প কিছু আনাজ বিক্রি হয়েছে। বাকিটাও বাজারজাত করে দিন বদলের আশায় আছেন তাঁরা। আর দয়াময়বাবু বলছেন, ‘‘কাজ হারানোর যন্ত্রণা ভালই বুঝি। তাই ছেলেগুলোকে জমি দিতে দ্বিতীয় বার ভাবিনি।’’

কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা বছর বাইশ থেকে বত্রিশের ওই দশ যুবক। তাঁদের মধ্যে কাজল নন্দী, শান্তি পাল, উজ্জ্বল মাজি রঘুনাথপুরে অটো চালাতেন। চন্দন পাল, অপূর্ব নন্দীরা ছিলেন অনলাইন কেনাকাটার ওয়েবসাইটের ‘ডেলিভারি বয়’। সোমনাথ নন্দী ডেকরেটর কর্মী। বাকিরা সংসার টানতে যখন যেমন কাজ পেতেন, করতেন। লকডাউনের গোড়াতেই সবার কাজ যায়। নিজেদের জমিও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান গ্রামেরই দয়াময়বাবু, বৈদ্যনাথ কর্মকার ও মানস কর্মকার। তাঁদের জমি আছে। সবটা নিজেরা চাষ করেন না। প্রস্তাব দেন, কাজলেরা চাইলে সে জমি ব্যবহার করতে পারেন।

আরও পড়ুন: ফেরানো যাবে না কোভিড রোগী

দয়াময়বাবু নিজে পুরুলিয়া শহরের রেস্তোরাঁর রাঁধুনি ছিলেন। মার্চ মাসে ‘জনতা কার্ফু’র দিনে কাজ হারান তিনি। গ্রামে ফিরে নিজের জমিতে আনাজ চাষ শুরু করেছিলেন। নিজেই ওই যুবকদের হাতে ধরে শিখিয়ে দেন কী ভাবে চাষ করতে হয়। দ্বিতীয় দফার লকডাউন থেকে উঠে-পড়ে লাগেন ওই যুবকেরা। তাঁরা জানান, প্রত্যেকে সামর্থ্য মতো চাঁদা দিয়ে তিরিশ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে কাজে নেমেছিলেন। সে টাকায় কেনা হয়েছিল আনাজের বীজ, সার, জলের পাম্প। কিছু টাকা খরচ হয়েছে ট্রাক্টর ভাড়া করতে। কাজল, উজ্জ্বলেরা বলেন, ‘‘বিনা শর্তে নিজেদের জমিতে চাষ করতে দিয়েছেন দয়াময়বাবু, বৈদ্যনাথবাবু, মানসবাবু। ওঁদের জন্যই রোজগারের একটা হিল্লে হল।’’

আরও পড়ুন: ‘আপন-পর’ চেনাল করোনা

তবে বৈদ্যনাথবাবু, মানসবাবুরা বলেন, ‘‘আমাদের অনেকটা জমি অনাবাদি পড়েছিল। ছেলেগুলো কাজ হারিয়েছে। এই অবস্থায় গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি মাত্র।” গ্রামের প্রান্তে দীর্ঘদিন আবাদ না-হওয়া জমিতে এখন সবুজের সমারোহ। কাজল, সোমনাথেরা বলছেন, ‘‘লকডাউন ওঠার পরে হয়তো পুরনো কাজ ফিরে পাব। কিন্তু আনাজ চাষ বন্ধ করব না।” দয়াময়বাবুরা বলেন, ‘‘জমি পড়েই ছিল। এতটা চাষ করা সম্ভব নয়। ওরা কিছু করলে, সেটা তো ভালই।’’

রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউড়ি বলেন, ‘‘লকডাউনের পরিস্থিতিতে মানুষ যদি এ ভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়ান, তার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না।’’

কিছু দিন আগে ওই যুবকেরা গিয়েছিলেন রঘুনাথপুরের উদ্যানপালন দফতরের আধিকারিক তামসী কোলের কাছে। তিনি বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তামসীদেবী বলেন, ‘‘কয়েক মাসের মধ্যেই কৃষ্ণপুর গ্রামের ওই যুবকেরা চাষ ভালবেসে ফেলেছেন। ওঁরা চাষ চালিয়ে গেলে দফতর থেকে সাহায্য করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Migrant Workers Agriculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy