উদয়পুরে সৌরভ। নিজস্ব চিত্র
৮৪ দিনে ৮৫০০ কিলোমিটার!
পরিবেশ রক্ষায় সাইকেল ব্যবহারের উপযোগিতার কথা প্রচার করতে এতটা পথ পাড়ি দেওয়াই এখন পাখির চোখ হাওড়ার ‘বাইসাইকেল মেয়র’-এর। গত ১৬ ডিসেম্বর শিবপুরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিহার-উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি-রাজস্থান ছুঁয়ে বর্তমানে গুজরাতে পৌঁছেছেন বছর পঁচিশের সৌরভ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গী শুধুই সাইকেল আর ব্যাকপ্যাক।
মাস দুয়েক আগে আমস্টারডামের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার (বিওয়াইসিএস) ‘ফিফটি বাই থার্টি’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাওড়ার ‘বাইসাইকেল মেয়র’ নির্বাচিত হয়েছেন সৌরভ। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ যাতে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন সাইকেল— এই লক্ষ্যে কাজ করছে ওই সংস্থা। সেই একই লক্ষ্যে নিজের সফরেও পরিবেশ রক্ষা এবং সাইকেলের ব্যবহারের সুবিধার কথা প্রচার করছেন সৌরভ। বলছেন, ‘‘বেরোনোর দিন ছয়েক আগে ভাবনাটা হঠাৎ মাথায় আসে। দ্রুত সব ব্যবস্থা হয়ে যায়।’’
আরও পড়ুন: ‘দক্ষিণপন্থী’ ভিড় কমাতে প্ল্যাকার্ড, বিতর্কে চিকিৎসক
তবে কোনও পোস্টার বা প্ল্যাকার্ড নিয়ে নয়, সাইকেলে গন্তব্যের দিকে যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সৌরভ সরাসরি কথা বলছেন স্থানীয়দের সঙ্গে। বোঝাচ্ছেন সাইকেল ব্যবহারের উপকারিতা। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা মোটরবাইক চালাচ্ছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসা করছি কতটা পথ যাতায়াত করতে হয় তাঁদের। যাঁরা কম দূরত্বে যান, তাঁদের সাইকেল ব্যবহার করতে অনুরোধ করছি।’’ এ ছাড়া বিভিন্ন শহরের সাইকেলআরোহীদের সঙ্গেও কথা বলছেন সৌরভ। তাঁদের এলাকায় সাইকেল চালানোর পরিকাঠামো এবং সে সংক্রান্ত সমস্যা আছে কি না, তা জানতে চাইছেন। নয়ডা, উদয়পুরের ‘বাইসাইকেল মেয়র’দের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন ওই যুবক। বলছেন, ‘‘নিজের শহরে সাইকেল সংক্রান্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার প্রচারে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।’’
আরও পড়ুন: মমতার সামনে বিক্ষোভ, মামলা করল পুলিশ
সাইকেলে দেশভ্রমণে বেরিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দেওয়ার লক্ষ্য থাকে পেশায় সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সৌরভের। এর জন্য প্রতিদিন সাইকেল চালাচ্ছেন পাঁচ-ছ’ঘণ্টা ধরে। মাঝেমধ্যে অবশ্য জিরিয়ে নেন। যাত্রা শুরু করার ঠিক এক মাস পরে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমদাবাদ পৌঁছেছেন সৌরভ। তার পরে গুজরাত ছাড়িয়ে মুম্বই, পুণে হয়ে দক্ষিণের দিকে যাবেন তিনি। উপকূলের রাস্তায় পড়লে আরও দ্রুত এগোতে পারবেন বলে আশাবাদী সৌরভ। বলছেন, ‘‘মানুষ এত উৎসাহ দিচ্ছেন যে, কখনও ক্লান্ত লাগে না। আর রোজ আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা হচ্ছে। দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে।’’
এই ক’দিনের যাত্রার অভিজ্ঞতা কেমন? সৌরভ জানাচ্ছেন, এই সফরে মানুষের আন্তরিকতাই সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে তাঁকে। রাত্রিবাস নিয়ে কোনও দিন চিন্তা করতে হয়নি। সাইকেল চালানোর সূত্রে পরিচিত কারও বাড়িতে আশ্রয় মিলেছে কোনও দিন। কখনও আবার তাঁর উদ্যোগের কথা শুনে টাকা নেয়নি হোটেল। টোল প্লাজ়ায় তাঁর সঙ্গে নিজেদের রাতের খাবার ভাগ করে খেয়েছেন সেখানকার কর্মীরা। রাজস্থানের কোটপুটলিতে এক সন্ধ্যায় জাতীয় সড়কের উপরে টায়ার পাংচার হয়ে গিয়েছিল। তখন আলো নিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা।
একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত সৌরভ বাড়ি থেকে বানতলার অফিসে যান সাইকেলে চেপেই। সফর শেষে ফিরে এসে মানুষের মধ্যে সাইকেল নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করতে চান তিনি। সাইকেল নিয়ে আরও বেশি মানুষ পথে নামলে সরকারি তরফেও এই সংক্রান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নের চেষ্টা হবে বলে আশাবাদী সৌরভ। তিনি বলছেন, ‘‘হেলমেট পরে, ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে সাইকেল চালালে কিন্তু ব্যস্ত রাস্তাতেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সবুজ সাথী প্রকল্পে সাইকেলের সঙ্গে হেলমেটও দেওয়া হলে ভাল হয়। তাতে নিরাপত্তার দিকটিও গুরুত্ব পাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy