Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal News

জয় শ্রীরাম নিয়ে ক্যানিং লোকালে ধুন্ধুমার, স্লোগান না দেওয়ায় যুবককে মারধর, ট্রেন থেকে ফেলার অভিযোগ

শাহরুফ জানান, হঠাৎতাঁদের কামরাতেও গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়।তাঁর অভিযোগ,‘‘হিন্দু সংহতির কয়েকজন আমাকে গালিগালাজ করা শুরু করে। প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করে।

আক্রান্ত যুবক শাহরুফ হালদার (বাঁ  দিকে)। আহত সুপ্রিয় সর্দার। —নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত যুবক শাহরুফ হালদার (বাঁ দিকে)। আহত সুপ্রিয় সর্দার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ১৫:১৫
Share: Save:

জয় শ্রীরাম স্লোগানকে ঘিরে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে ধুন্ধুমার। এক মাদ্রাসা শিক্ষকের অভিযোগ, ওই স্লোগান না দেওয়ায় তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পার্ক সার্কাস স্টেশনে তাঁকে ট্রেন থেকে ফেলেও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওই যুবকের। অন্য দিকে অভিযোগের আঙুল যাদের দিকে সেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘হিন্দু সংহতি’যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। উল্টে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ায় তাদের সমর্থকদের পাথর ছুঁড়ে জখম করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছে ওই সংগঠন। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

অভিযোগকারী শাহরুফ হালদার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর চুনাখালির বাসিন্দা। বছর কুড়ির শাহরুফ আরামবাগের হিয়াতপুর হিজবুল্লা নবাবিয়া সুলতানিয়া আশরফিয়া মাদ্রাসার আরবির শিক্ষক। ওই মাদ্রাসাটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। শাহরুফ জানিয়েছেন, রমজানের ছুটি কাটিয়েগত ২০ জুন বৃহস্পতিবার তিনি বাসন্তীরবাড়ি থেকে মাদ্রাসা কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ তিনি ক্যানিং স্টেশন থেকে শিয়ালদহমুখী ট্রেনে ওঠেন। মঙ্গলবার ওই যুবক বলেন,‘‘সে দিন ক্যানিং এবং তালদি স্টেশন থেকে গোটা ট্রেনেই হিন্দু সংহতির বেশ কিছু কর্মী সমর্থক উঠেছিলেন।ট্রেন বেশ কয়েকটা স্টেশন পেরোতেই চিৎকার চেঁচামেচি কানে আসতে থাকে। বোঝা যাচ্ছিল, পাশের কামরায় কোনও কিছু নিয়ে গন্ডগোল হচ্ছে।তবে কী নিয়ে প্রথমে তা কিছু বুঝতে পারিনি।’’

শাহরুফ জানান, হঠাৎতাঁদের কামরাতেও গন্ডগোল শুরু হয়ে যায়।তাঁর অভিযোগ,‘‘হিন্দু সংহতির কয়েকজন আমাকে গালিগালাজ করা শুরু করে। প্রতিবাদ করায় আমাকে মারধর করে। ওরা ১০-১৫ জন ঘিরে ধরে আমাকে জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়ার জন্য জোর করতে থাকে।”শাহরুফের দাবি, তিনি স্লোগান দিতে চাননি। ফলে মারধর আরও বেড়ে যায়। ট্রেন তত ক্ষণে ঢাকুরিয়া স্টেশন পেরিয়েছে। পুলিশের কাছেঅভিযোগে ওই যুবক জানিয়েছেন, তিনি কোনও রকমে পার্ক সার্কাস স্টেশনে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাঁকে ট্রেনের কামরাতেই আটকে রাখা হয়। তারপরে ধাক্কা মেরে প্ল্যাটফর্মে ফেলে দেওয়া হয়। শাহরুফ এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘আমার পরনে ছিল লম্বা কামিজ-পাজামা, মাথায় ছোট টুপি এবং মুখে দাড়ি।’’ তাঁকে চিহ্নিত করেই মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ শাহরুফের।শাহরুফের দাবি, তাঁকে প্ল্যাটফর্মের লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে তপসিয়া থানায় নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় বালিগঞ্জ রেল পুলিশ থানাতে। সেখানে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন।

যে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাহরুফ অভিযোগ করেছেন, সেই হিন্দু সংহতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য কী বলছেন? এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেবতনু বলেন,‘‘সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমাদের কেউ কাউকেই জোর করে জয় শ্রীরাম বলতে বলেনি। বরং আমাদের উপরেই আক্রমণ করা হয়েছিল।” তাঁর অভিযোগ,যে কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যদের মতোতাঁদের কর্মীরাও ট্রেনে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাতে বাধা দেওয়া হয়। দেওয়া হয়হুমকি। পার্ক সার্কাসে ট্রেন ঢোকার আগে ফোন করে কিছু যাত্রী ওই এলাকার কিছু লোককে খবর দিয়ে ডেকে পাঠায় বলে দেবতনুর অভিযোগ। তাঁর কথায়: ‘‘ওরা বাইরে থেকে আমাদের কর্মীদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। তাতে আমাদের বেশ কয়েক জন আহত হয়। সুপ্রিয় সর্দার নামে তালদির বাসিন্দা এক যুবকের হাতে পাথর এসে লাগে। সে গুরুতর জখম হয়। সুপ্রিয়ও শিয়ালদহ জিআরপিতে অভিযোগ দায়ের করেছেন।”

শিয়ালদহ জিআরপি-তে অভিযোগ জানাচ্ছেন আহত সুপ্রিয় সর্দার। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: বাতিল হচ্ছে মেহুল চোক্সির অ্যান্টিগার নাগরিকত্ব, শীঘ্রই প্রত্যর্পণের সম্ভাবনা

তবে এই অভিযোগ মানতে চাননি শাহরুফ। তিনি বা ওই কামরার কেউ ফোন করে কাউকে ডেকে পাঠাননি বলেই তাঁর দাবি। আপাতত চুনাখালির বাড়িতেই রয়েছেন ওই যুবক। চার ভাই এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় শাহরুফ ডায়মন্ডহারবারের একটি মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করে আরামবাগে শিক্ষকের কাজে যোগ দেন। এ দিন তিনি বলেন,‘‘আমি রীতিমতো আতঙ্কিত। তাই বাড়িতেই আছি। পুলিশ বলেছে তাঁরা অভিযুক্তদের খুঁজে বের করতেচেষ্টা করছেন।”

রেল পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনারতদন্ত শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন হিন্দু সংহতির একটি সভা ছিল শ্যামবাজারে। সেই সভায় যোগ দিতে ওই সংগঠনের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক ওই ট্রেনে উঠেছিলেন। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই সমর্থকরা ট্রেনে খুব জোরে জোরে জয় শ্রীরামস্লোগান দিচ্ছিলেন। তা নিয়ে ট্রেনের অনেক যাত্রীই প্রতিবাদ করেন।

আরও পড়ুন: চার নব্য জেএমবি জঙ্গি গ্রেফতার শিয়ালদহ ও হাওড়া স্টেশন থেকে, উদ্ধার আইএস নথি

তদন্তকারীদের সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ওই স্লোগান দেওয়া ঘিরে চলন্ত ট্রেনেই যাত্রীদের একাংশের সঙ্গে হিন্দু সংহতির কর্মী-সমর্থকদের ধস্তাধস্তি-হাতাহাতি হয়। তবে এই বচসা কোনও নির্দিষ্ট সম্পদ্রায়ের সঙ্গে নয় বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। রেল পুলিশ সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, শাহরুফ ছাড়াও অন্য এক ব্যক্তি ওই বচসা নিয়ে সোনারপুর থানাতে একটি এফআইআর করেছেন। তিনি যদিও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নন। রেল পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘যারা ওই দিন গন্ডগোল করেছিল তাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে কিছু মানুষ বিষয়টি কিছুটা বিকৃত করেই প্রচার করছেন। সেটা একেবারেই ঠিক নয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jai Shree Ram Park Circus Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy