সিএএ এবং এনআরসি-প্রতিবাদে মিছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ছবি: এএফপি।
সুর চড়িয়েছেন রাজ্যপাল। রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলতে শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু মহামিছিল শেষে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন— পিছু হঠার কথা ভাবছেনই না তিনি। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন(সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে সুর আরও চড়িয়ে সোমবার মমতার ঘোষণা— আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে কার্যকরী করতে হবে ওই আইন। নাম না করে রাজ্যপালকেও তীব্র আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলার অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে বিজেপি শাসিত অসম নিয়ে ভাবুন— সুর সপ্তমে চড়িয়ে মন্তব্য মমতার।
সিএবি সংসদে পাশ হওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা এবং হাওড়া জুড়ে তিন দিন মহামিছিল করবে তৃণমূল। কথা মতো সোমবার রেড রোড থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার পদযাত্রা করেন তিনি। সঙ্গে ছিল বিশাল মিছিল।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে ভাষণ দিচ্ছেন মমতা। নিজস্ব চিত্র।
মিছিল শেষ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সামনে ভাষণ দেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিএএ এবং এনআরসি যে পশ্চিমবঙ্গে কার্যকরী হতে দেবেন না, সে কথা আগে থেকেই নানা মাধ্যমে বলছিলেন মমতা। এ দিনের ভাষণে আরও জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে সিএএ বা এনআরসি কিছুতেই কার্যকরী করতে দেবেন না।
‘‘আমরা বাংলায় আছি। এখানে এনআরসি করতে হলে, আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে, এখানে সিএবি করতে হলে আমার মৃতদেহের উপর দিয়ে করতে হবে,’’— এই ভাষাতেই এ দিন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সুর চড়ান মমতা।
তাঁর সরকার ফেলে দিয়ে যদি পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির চেষ্টাও হয়, তা হলেও তিনি পিছু হঠবেন না— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন খুব স্পষ্ট করে এই বার্তাও দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও কোনও বিজেপি নেতা বলতে শুরু করেছেন, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন কেন জারি হবে না? আমাদের সরকার ফেলে দেবেন? ফেলে দিন। কিন্তু ইজ্জতের জন্য যখন লড়তে নেমেছি, তখন মাথা নত করব না।’’
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের নাম এ দিন করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট ছিল। তিনি বলেন, ‘‘এখানে আর একজন বড় বিজেপি নেতা এসেছেন। বলছেন— সাবধান করে দিচ্ছি, কেন অশান্তি হচ্ছে? আমি বলেছি, আগে অসমকে গিয়ে বলুন। সেখানে বিজেপির সরকার রয়েছে, তাদের বলুন।’’
প্রতিবাদ মিছিলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল সেন, এবং ব্রাত্য বসুরা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে সব সময়ই রাজ্যের বিষয় এবং সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের কোনও চেষ্টা যে তিনি পছন্দ করেন না, তা আগেও অনেক বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। গত চার দিনে রাজ্য জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেও যে তিনি সেই অবস্থানেই অনড় রয়েছেন, মমতা এ দিন তা-ও বুঝিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, সিআইএসএফ লাগবে? বিএসএফ লাগবে? আমি বলেছি, কিচ্ছু লাগবে না। আমাদের পুলিশই যথেষ্ট।’’ পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ এবং পুলিশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে পরিস্থিতি সামলে নেবেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই— এই বার্তাই এ দিন দিতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নাগরিকত্ব আইন নতুন করে তৈরি করার কোনও প্রয়োজন ছিল না— এ কথাই এ দিন জোর দিয়ে বলতে চেয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন। জমায়েতের উদ্দেশে এ দিন তিনি প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনারা ভোট দেন না? আপনাদের নাম ভোটার তালিকায় নেই? আপনাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়ে না? তা হলে আবার কিসের নাগরিকত্ব আপনাকে দেবে?’’
অশান্তির বিরুদ্ধেও এ দিন বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ট্রেন বা সরকারি সম্পত্তিতে আগুন দেওয়া বা রাস্তা অবরোধ করার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছেন। তবে তাঁর অভিযোগ, যাঁরা অশান্তি ছড়াচ্ছেন, তাঁরা বিজেপির কাছ থেকে টাকা নিয়েই এই পরিস্থিতি তৈরি করছেন।
সিএএ এবং এনআরসি প্রত্যাহার করতেই হবে— কেন্দ্রীয় সরকারকে এ দিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘যত ক্ষণ না প্রত্যাহার করা হচ্ছে, তত ক্ষণ আমরা রাস্তায় আন্দোলন চালিয়ে যাব। মনে রাখবেন, কেউ না থাকলেও, আমরা থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy