পুলকেন্দু সিংহ। —ফাইল চিত্র
জেলার আনাচকানাচে পায়ে হেঁটে মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতিকে চিনেছিলেন পুলকেন্দু সিংহ। ‘ঝড়’, ‘বীক্ষণ’, ‘বোধোদয়’ প্রভৃতি স্থানীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রে সেই চেনা কথাই লিখে লিখে নাগরিক সমাজের সঙ্গে লোকশিল্পের পরিচয় ঘটিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সক্রিয় সহযোগিতায় মুর্শিদাবাদের বহু লোকশিল্পী আজ সম্মানিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভোর চারটেয় মারা গেলেন মুর্শিদাবাদের সেই লোক-গবেষক। গোরাবাজার শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার আলুগ্রামে তাঁর জন্ম হয় ১৯৩৬ সালে। বাবা সঙ্গীতশিল্পী সুধীর কুমার ছিলেন সংসার-উদাস মানুষ। ফলে পাঁচ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার প্রতি তাঁর কোনও নজর ছিল না। আলুগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা শুরু হলেও পরে ভর্তি হন পাঁচথুপি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানকার পাঠ শেষ করে চলে আসেন কান্দি রাজ হাইস্কুলে। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা যায়, পড়াশোনা শেষ না করেই পুলকেন্দু আরও তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আলাদা আলাদা স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা পাড়ি দিয়েছিলেন। পুলকেন্দু কবি হতে চেয়েছিলেন। ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় তাঁর লেখা কবিতা প্রকাশিতও হয়েছিল। কিন্তু ‘প্রবাসী’র তত্ত্বাবধায়ক যোগেশচন্দ্র বাগল তাঁকে প্রবন্ধ লিখতে উৎসাহিত করেন। কলকাতা থেকে মামার বাড়ি জামশেদপুরে বাউন্ডুলেপনা আটকাতে মামার কাছে পাঠিয়ে দেন মা। ততদিনে কবি হওয়ার স্বপ্ন পাল্টে প্রাবন্ধিক হওয়ার চেষ্টাও চালিয়ে গিয়েছেন পুলকেন্দু। স্কুলফাইনাল পাশ পুলকেন্দুবাবু পরে বাল্যবন্ধু তুষারকান্তি চন্দ্রের সহযোগিতায় গ্রাম সেবকের চাকরি পান। ‘গ্রাম সেবক’ হিসেবে কাজ করার সুবাদেই গ্রামের সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন তরুণ বয়সে। পরবর্তী সময়ে সেই আগ্রহেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন লোকসংস্কৃতির গবেষক। মূলত তাঁর উদ্যোগেই বেশ কিছু লোকশিল্পী ভারত ও ভারতের বাইরে নিজের নিজের আঙ্গিকের লোকশিল্প পরিবেশন করার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে জানান সারা বাংলা লোকশিল্পী সংসদের সভাপতি দীপক বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বিজ্ঞানসম্মতভাবে মুর্শিদাবাদ জেলার লোকসংস্কৃতি চর্চার তিনিই পথিকৃত”।
পুলকবাবুর লেখা বই ‘মুর্শিদাবাদের লোকায়ত সঙ্গীত ও সাহিত্য’, ‘লোকায়ত মুর্শিদাবাদ’, ‘মুর্শিদাবাদের লোকশিল্পী’, ‘ফিরে চল মাটির গানে’, ‘মধ্যবঙ্গের লোকসঙ্গীত’, ‘মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতি’, লোকসংস্কৃতির ভাবী গবেষকদের সহায়ক গ্রন্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy