(বাঁ দিক থেকে) জগন্নাথ সরকার এবং শান্তনু ঠাকুর। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটায় যে বুথে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ভোট দেন, সেখানে যে বিজেপি হেরে গিয়েছে, তা জানা গিয়েছিল মঙ্গলবারেই। বুধবার পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ফলাফলও স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দেখা গেল, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার মতুয়া মহল্লায় ‘ধাক্কা’ খেয়েছে বিজেপি। নদিয়ায় তবু গ্রাম পঞ্চায়েতে কিছু মানরক্ষা করার মতো আসন পেয়েছে তারা। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনায় বিজেপির ‘শক্ত’ মাটিতে থাবা বসিয়েছে তৃণমূল।
২০১৯-এর লোকসভা ভোট থেকেই নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার মতুয়া অধ্যুষিত এলাকাকে নিজেদের ‘গড়’-এ পরিণত করেছিল বিজেপি। বনগাঁয় শান্তনু এবং রানাঘাটে জগন্নাথ সরকার জিতে সাংসদ হয়েছিলেন। শান্তনু এখন কেন্দ্রের মন্ত্রীও। তবে দুই সাংসদই বুধবার দাবি করেছেন, পঞ্চায়েতের কোনও প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে না। আনন্দবাজার অনলাইনকে বুধবার শান্তনু বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূল ছাপ্পা দিয়ে জিতেছে। যেখানে আমাদের প্রার্থী জেলা পরিষদ আসনে পাঁচ হাজার ভোটে জিতেছেন, সেখানে তাঁকে সার্টিফিকেট না দিয়ে তৃণমূলের হেরোকে জয়ী বলে ঘোষণা করেছে! লোকসভায় এ সব হবে না।’’ আর জগন্নাথের বক্তব্য, ‘‘এখানে কোনও ভোট হয়নি। ফলে লোকসভায় প্রভাব পড়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই।’’
শুধু ২০১৯ সালের লোকসভা নয়, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটেও মতুয়া মহল্লা থেকে বেশ কিছু আসন বিজেপির প্রার্থীরা জিতেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বাগদার বিশ্বজিৎ দাস। তিনি আবার তৃণমূলে ফিরেও গিয়েছেন। বুধবার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘শান্তনু ঠাকুর মতুয়াদের দেবোত্তর সম্পত্তিকে পৈতৃক সম্পত্তি ভেবেছিলেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নবজোয়ার যাত্রার সময়ে মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দিতে চেয়েছিলেন। তাঁকে লোক দিয়ে হেনস্থা করিয়েছিলেন শান্তনু। মানুষ তার সপাটে জবাব দিয়েছেন!’’ বিশ্বজিতের আরও বক্তব্য, ‘‘শান্তনু মতুয়াদের রাজনীতির বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করতে চান। মানুষ ওঁর চালাকি ধরে ফেলেছেন।’’
তবে নদিয়ার মতুয়া অধ্যুষিত বেশ কিছু এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েত আসন জেতার ক্ষেত্রে তৃণমূলের প্রায় কাছাকাছি জায়গায় রয়েছে বিজেপি। কোথাও কোথাও পদ্মশিবির খানিকটা এগিয়েও রয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। যেমন কৃষ্ণগঞ্জে মোট গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ১৪১টি। সেখানে বিজেপি পেয়েছে ৬৬টি আসন। তৃণমূল পেয়েছে ৬১টি। হাঁসখালিতে মোট গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ২৯২টি। বিজেপি পেয়েছে ১২২টি। ১৪১টি আসন জিতেছে তৃণমূল। মুকুল রায়ের বিধানসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর উত্তরের অধীনস্থ গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে আবার তৃণমূলের জয় নজর কাড়ার মতো। ১৮০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে গিয়েছে ১১০টি আসন। সেখানে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৩৭টি।
উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভা চারটি। বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা এবং গাইঘাটা। এই চারটি বিধানসভায় জেলা পরিষদের মোট আসন ৯টি। সবক’টিই জিতেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েত সমিতির ১২৪টি আসনের মধ্যে ১১২টি ঘাসফুল শিবিরের দখলে গিয়েছে।
গত লোকসভা ভোটে নাগরিকত্বের ইস্যু-সহ নানা বিষয় প্রচারে তুলে এনেছিল গেরুয়া শিবির। তার পর সেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর না হওয়া নিয়ে শান্তনু মাঝে ক্ষোভের জ্বালামুখ খুলে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে বিজেপি নেতৃত্বকে শান্তনুর মান ভাঙাতে বেশ পরিশ্রমও করতে হয়েছিল। এমনকি, উত্তর ২৪ পরগনার তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক শান্তনুকে খোলাখুলি তৃণমূলে শামিল হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও শান্তনু এগোননি। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ার মতুয়া অধ্যুষিত এলাকায় তুলনামূলক ভাল ফল করেছিল বিজেপি।
মতুয়াদের ‘বড়মা’ বীণাপাণি দেবীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক ছিল সর্বজনবিদিত। সে কথা মমতা প্রায়ই বলেন। ক্ষমতায় আসার অনেকটা আগে থেকেই ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে সমন্বয় রাখতেন তৃণমূলনেত্রী। গত লোকসভার আগে পর্যন্ত মতুয়া ‘ভোট ব্যাঙ্ক’ ছিল তৃণমূলের দখলেই। কিন্তু ও পার বাংলা ছেড়ে-আসা মানুষের যন্ত্রণাকে কিছুটা উস্কে দিয়েই বিজেপি নাগরিকত্বের ইস্যু নিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছেছিল। অনেকের মতে, যে প্রত্যাশা বিজেপি তৈরি করেছিল, তা অনেকাংশেই পূরণ হয়নি। যে কারণে শান্তনুও মাঝে অন্য সুরে কথা বলছিলেন। পঞ্চায়েতে মতুয়া মহল্লায় এই ‘ধাক্কা’ বিজেপি লোকসভায় সামলাতে পারবে কি? সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy