Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪
Ram Temple at Chandrakona

আড়ম্বর আছে, প্রচার নেই, চন্দ্রকোনায় রামমন্দিরের যজ্ঞ

যজ্ঞের উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দা, অধুনা আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসক দম্পতি জয়ন্ত এবং বনানী দীর্ঘাঙ্গীর। চন্দ্রকোনা শহরে ঢোকার আগে জয়ন্তীপুরে তাঁদের পারিবারিক রামমন্দিরে বছরভর পুজো হয়।

Ram temple

চন্দ্রকোনায় সোমযজ্ঞ। — নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৭
Share: Save:

অযোধ্যা থেকে চন্দ্রকোনা। প্রায় হাজার কিলোমিটার দূরত্বে এক মাসের ব্যবধানে ভিন্ন ছবি। সৌজন্যে অবশ্য সেই রাম।

অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে আড়ম্বর দেখেছিল বিশ্ব। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় রামমন্দির প্রাঙ্গণে ১৩ দিন ব্যাপী বৈদিক কর্মকাণ্ডেও আচার, আয়োজনের ব্যাপ্তি নেহাত কম নয়। বহু লক্ষ টাকা ব্যয়ে পুরোহিতদের ভিন্ রাজ্য থেকে আনা হয়েছে। তবে সবটাই হচ্ছে নিভৃতে। প্রচারের আড়ালে। বাংলার মাটিতে এই কর্মকাণ্ডে বাঙালির উপস্থিতিও কার্যত নামমাত্র।

যজ্ঞের উদ্যোগ স্থানীয় বাসিন্দা, অধুনা আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসক দম্পতি জয়ন্ত এবং বনানী দীর্ঘাঙ্গীর। চন্দ্রকোনা শহরে ঢোকার আগে জয়ন্তীপুরে তাঁদের পারিবারিক রামমন্দিরে বছরভর পুজো হয়। সেই প্রাঙ্গণেই ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সোমযজ্ঞ। চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উদ্যোক্তা জয়ন্ত-বনানীর কথায়, ‘‘বৈদিক চর্চার সঙ্গে এই যজ্ঞের সংযোগ রয়েছে। মানব কল্যাণেই যজ্ঞের আয়োজন।’’

ইতিমধ্যেই যজ্ঞ দেখতে এসেছিলেন যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। এসেছিলেন কয়েক জন অধ্যাপকও। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা বেদ ও বিদ্যা কেন্দ্রের প্রাক্তন নির্দেশক নবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেদ নিয়ে যাঁরা পড়াশোনা করছেন, তাঁদের কাছে এই যজ্ঞের সাক্ষী হওয়া সৌভাগ্যের।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের গবেষক সমীর মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমার বিষয় যজ্ঞ। এত দিন পড়ছিলাম। এ বার দেখলাম।’’

পারিবারিক রামমন্দির ২০০৮ সালে সংস্কার করেন জয়ন্ত এবং বনানী। প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন। পরে প্রতিষ্ঠান গড়ে ওই মন্দির প্রাঙ্গণেই শুরু হয় বেদ চর্চা। ক’বছর আগেই প্রতিষ্ঠানটি ‘কাঞ্চীকামকোটি পীঠম’ অধিগ্রহণ করে। পরবর্তী সময়ে ‘জয়েন্দ্র সরস্বতী শঙ্করাচার্য বেদ পাঠশালা’ চালু হয়। কেন্দ্রীয় পাঠক্রম মেনে পঞ্চম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠক্রম পড়ানো হয় এখানে। মূলত চতুবের্দের ১২ শাখার পঠনপাঠন হয়।

অযোধ্যায় রত্নখচিত রামলালার মূর্তি ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে। এখানে অবশ্য রামের সঙ্গে পূজিত হন লক্ষ্ণণ, সীতা, হনুমান। মন্দিরে রয়েছে কষ্ঠী পাথরের লক্ষ্মী-নারায়ণ, হয়গ্রিবা, শ্বেত পাথরের কন্যাকুমারী, আদি শঙ্করাচার্যের অষ্টধাতুর মূর্তি-সহ দু’শোর বেশি শালগ্রাম শিলা।

পুজো, বেদ চর্চা চলছিল নিয়মিত। এখন হচ্ছে যজ্ঞ। তবে এত আয়োজনেও কিছুটা হলেও বিষণ্ণ উদ্যোক্তারা। কারণ চিকিৎসক দম্পতি আমেরিকা থেকে নিজের জন্মভূমিতে ফিরে এত বড় আয়োজন করলেও গোটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলার প্রত্যক্ষ যোগ নেই। বেদ পাঠশালার ৩০ জন আবাসিক পড়ুয়াই ভিন্ রাজ্যের। অধ্যাপকরাও তাই। এমনকি, সোমযজ্ঞে যুক্ত পুরোহিতেরাও সব মহারাষ্ট্র থেকে এসেছেন। দীর্ঘাঙ্গী পরিবারের সদস্য দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী অবশ্য প্রত্যয়ী। বলছেন, ‘‘বেদ পাঠশালায় আগ্রহ বাড়ছে। আগামীতে হয়তো বাঙালিরাও আগ্রহী হবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lord Rama ghatal Chandrakona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE