পিতাপুত্র: রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আনন্দবাজার পত্রিকার আর্কাইভ থেকে।
তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য। বিশ্বভারতীকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সমসাময়িক অনেকের থেকেই তাঁর ভাবনাচিন্তা ছিল আলাদা। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু বিতর্কিত বিষয়-সহ নানা কারণে বিশ্বভারতীর সঙ্গে বিভিন্ন ধাপে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে তাঁর। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর তিনি বিশ্বভারতী তো বটেই, এই বাংলা থেকেই অনেক দূরে কাটিয়েছেন। সেই রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাজকর্মকে এত দিন পরে স্বীকৃতি দিতে চলেছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র হিসেবেই পরিচিত রথীন্দ্রনাথ। অথচ এই রথীন্দ্রনাথই উদ্যোগী হয়ে ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতীকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন ১৯৫১-র মে মাস থেকে ১৯৫৩ সালের অগস্ট পর্যন্ত। কবি-পুত্রের বাইরেও যে তাঁর একটা শিল্পীসত্তা, লেখার প্রতিভা ছিল তা প্রকাশ পায়নি। কোনও অজ্ঞাত কারণে বিশ্বভারতীর তরফ থেকেও সে রকম কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেই অপেক্ষা এ বার মিটতে চলেছে। ১৮৮৮ সালে জন্ম রথীন্দ্রনাথের জীবনাবসান হয় ১৯৬১ সালের জুন মাসে। তার এত বছর পরে তাঁর বিভিন্ন লেখা, চিঠিপত্র, ডায়েরির পাতা, আঁকা ছবি, শিল্পকর্ম সমস্ত কিছুকে এক জায়গায় করে চারটি খণ্ডে বই প্রকাশ করতে চলেছে বিশ্বভারতী। বইগুলির সম্পাদনা করছেন বিশ্বভারতী রবীন্দ্রভবনের প্রাধিকারিক নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘প্রথম খণ্ডের কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে প্রথম খণ্ড প্রকাশের চেষ্টা চলছে।’’
নীলাঞ্জনবাবু জানান, প্রথম খণ্ডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রথীন্দ্র রচনা সংগ্রহ’। সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় সম্পাদিত এই বইটিতে রথীন্দ্রনাথের লেখাগুলি বিষয়ভিত্তিক ভাবে সাজানো হয়েছে। তাঁর লেখা গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ যেমন রয়েছে, তেমনই অপ্রকাশিত লেখা, অসম্পূর্ণ লেখাও রয়েছে। এ ছাড়াও প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ ‘প্রাণতত্ত্ব’, ‘অভিব্যক্তি’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছায় অনুবাদিত অশ্বঘোষের ‘বুদ্ধচরিত’ প্রথম খণ্ডে জায়গা পাবে। দ্বিতীয় খণ্ডের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য আর্ট অব রথীন্দ্রনাথ টেগোর’। এটি প্রকাশিত হবে ইংরেজি ভাষায়। রথীন্দ্রনাথের মিশ্র মাধ্যমে আঁকা ছবি, কাঠের কাজ, চামড়ার কাজ, উদ্যান ভাবনা থাকছে এই খণ্ডে। তৃতীয় খণ্ড ‘কালেক্টেড ইংলিশ রাইটিংস অব রথীন্দ্রনাথ’।
ইংরেজিতে লেখা কিছু ডায়েরির পাতাও যুক্ত হবে। শেষ খণ্ডটি বাংলা ও ইংরেজি ভাষা মিলিয়ে। নাম ‘রথীন্দ্র পত্র সংগ্রহ’। বিশ্বভারতীর সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে কাজের চিঠি এবং ব্যক্তিগত চিঠিপত্র জায়গা পাবে এই খণ্ডে। কালানুক্রমিক বিন্যাসে চিঠিগুলি সাজানোর চেষ্টা করছেন কর্তৃপক্ষ। এক বছরের মধ্যেই চারটি খণ্ড প্রকাশ পেয়ে যাবে বলে আশা রাখছে বিশ্বভারতী।
এ নিয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিশ্বভারতীর উন্নতির জন্য রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বইগুলি প্রকাশের মধ্যে দিয়ে তাঁকে আমরা স্বীকৃতি দিতে চলেছি। বইগুলি পড়লে রথীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক ধারণারই বদল ঘটবে। আমি ভীষণ খুশি।’’
শিল্প সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিশ্বভারতীর সংগ্রহে থাকা বিষয়গুলি কেবলমাত্র স্থান পাবে। তবে লেখা, চিঠিপত্রের ক্ষেত্রে অন্যান্য সূত্র থেকে কিছু পাওয়া গেলে সেগুলি যুক্ত করার কথা ভাববেন কর্তৃপক্ষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি সংরক্ষণে সব থেকে বেশি ভূমিকা ছিল রথীন্দ্রনাথের। বিদেশ যাত্রাকালে বহু বার তিনি বাবার সফরসঙ্গী হয়েছেন। রবীন্দ্রভবন সংগ্রহশালার একটা বড় অংশ জুড়ে তাঁর অবদান রয়েছে। কৃষিবিজ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও তিনি যে ভাবে উদ্যান চর্চা, সাবান তৈরি, সুগন্ধি তৈরি, কাঠের কাজ, ছবি আঁকা, জ্যাম-জেলি বানানোর কাজে পারদর্শী ছিলেন সে ব্যাপারে অনেক কিছুই অজানা। এই চারটি খণ্ড প্রকাশের মধ্যে দিয়ে সেই ‘অজানা’ রথীন্দ্রনাথ সামনে আসতে চলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy