Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

‘বেঁচে থাকতে কাশ্মীরমুখো হব না আর’, বলছেন ঘরে ফেরা শ্রমিকরা

সেই বিভীষিকার ভূস্বর্গ থেকে মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি ফিরে এসেও যেন আতঙ্ক কাটছে না লুতফুরের। পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী— এ দিন যাঁর সঙ্গেই দেখা হয়েছে সকাল থেকে প্রত্যেককেই তিনি বলছেন, বেঁচে থাকতে আর তিনি যেতে চান না কাশ্মীরে।

শ্রীনগর। —ফাইল চিত্র

শ্রীনগর। —ফাইল চিত্র

অভিজিৎ সাহা
কালিয়াচক শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

বরাবর ভাড়া করা বাড়িতেই থাকেন। কিন্তু কুলগামে পাঁচ বাঙালি শ্রমিক খুনের ঘটনায় ওঁরা এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, তারপর টানা তিনদিন সেই বাড়িতে আর থাকার সাহস পাননি। পড়শি এক কাশ্মীরির বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিলেন মালদহের কালিয়াচকের বাসিন্দা লুতফুর শেখ ও তাঁর সঙ্গী শ্রমিকেরা।

সেই বিভীষিকার ভূস্বর্গ থেকে মঙ্গলবার ভোরে বাড়ি ফিরে এসেও যেন আতঙ্ক কাটছে না লুতফুরের। পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী— এ দিন যাঁর সঙ্গেই দেখা হয়েছে সকাল থেকে প্রত্যেককেই তিনি বলছেন, বেঁচে থাকতে আর তিনি যেতে চান না কাশ্মীরে। এমনকি, ছেলেদেরও পাঠাবেন না আর। তিনি বলেন, “২৫ বছর ধরে কাশ্মীরে যাচ্ছি। ওখানে কাজ করেই দশটি পেট চালিয়েছি। তবে এই কয়েক মাসে যেন বদলে গিয়েছে পুরো উপত্যকা। খুন হয়ে গেলেন রাজ্যের পাঁচ শ্রমিক। তাই বেঁচে থাকতে আর কাশ্মীর-মুখো হব না।”

কালিয়াচক থানার কালিয়াচক-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের করারি চাঁদপুর গ্রামের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব লুতফুরের আট ছেলেমেয়ে। প্রত্যেকেই বিবাহিত। বড় ছেলে সারিফ এবং ইব্রাহিম দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত যাচ্ছেন কাশ্মীরে। সেখানে কখনও নির্মাণ শ্রমিক, কখনও আপেল বাগান পরিচর্যার কাজ করেছেন তাঁরা। তিনজনে মিলে কাজ করে চলে যাচ্ছিল সংসারটা। কিন্তু ৩৭০ ধারা কাশ্মীরে উঠতেই বদলে যায় লুতফুরের বাড়ির ছবিটা। কাশ্মীর অশান্ত হয়ে ওঠায় সারিফ এবং ইব্রাহিমকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লুতফুর। তবে তিনি থেকে গিয়েছিলেন।

কেন ফেরেননি? লুতফুরের কথায়, “কাশ্মীরে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ধান কাটা শুরু হয়। আর অক্টোবর পর্যন্ত কাজ চলে। ধান কাটার কাজ করলে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দৈনিক মেলে। তাই বাড়তি উপার্জনের আশায় থেকে যাই।”

কাশ্মীরের বারামুলা জেলার কানিসপুরায় থাকতেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলেন বীরভূমের আরও ২০ জন। সকলে মিলে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। এজন্য প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে প্রত্যেককে দিতে হত। কানিসপুরা থেকে কুলগামের দুরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার। শ্রমিক খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁরা। লুতফুর বলেন, “আতঙ্কে রাতে ঘরে থাকতে পারতাম না। আমাদের ঘরেও যদি জঙ্গিরা হামলা চালায়, সেই আশঙ্কায় তিন রাত কাটিয়েছি কাশ্মীরি ভাইদের বাড়িতেই।” তিনদিন পর ঘরে ফেরার জন্য সেনা ক্যাম্পে যান তাঁরা। তিনি বলেন, “সেনারাই আমাদের পৌঁছে দেন শ্রীনগরে। সেখান থেকে বিশেষ ট্রেনে কলকাতায়। তারপর সরকারের সাহায্যে ভোর তিনটে নাগাদ বাড়িতে পৌঁছই।”

লুতফুর ফিরতেই যেন প্রাণ ফিরে পেল টালির ছাউনি দেওয়া বাড়িটা। লুতফুরের স্ত্রী রেনা বিবি বলেন, “আর কখনও যেতে দেব না কাশ্মীর।” লুতফুরের ছেলে সারিফ বলেন, “এখানকার থেকে কাশ্মীরে দ্বিগুন শ্রমিকের মজুরি। যার জন্য বাইরে যাওয়া।” সকালেই লুতফুরের বাড়িতে যান কালিয়াচক-১ ব্লকের বিডিও সন্দীপ ঘোষ। তিনি বলেন, “সরকারি যা সাহায্য করার তা করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kaliachak Malda Bengali Workers Kulgam Killing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy