তেলঙ্গানা পারলেও পশ্চিমবঙ্গে এখনও দূর অস্ৎ। শুধুমাত্র মহিলা সওয়ারিদের জন্য, মহিলা চালকের ‘শি ট্যাক্সি’ চালু হয়ে গিয়েছে হায়দরাবাদেও। মহিলাদের সুরক্ষা বাড়াতে উদ্যোগী হয়ে এই প্রকল্প চালু করেছে তেলঙ্গানা সরকার। এ রাজ্যে সরকারি স্তরে এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনাই তৈরি হয়নি। অথচ গত বছর জুলাই মাসে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানিয়েছিলেন, এ রাজ্যেও চালু হবে ‘শি ট্যাক্সি’। কিন্তু ওই পর্যন্তই!
মহিলা-চালিত প্রতিটি ‘শি ট্যাক্সি’তে ফোন থাকে। ট্যাক্সির খোঁজে কোনও মহিলা যাত্রী নির্দিষ্ট একটি নম্বরে ফোন করতে পারেন। নম্বরটি কন্ট্রোল রুমের। শহরের কোথায়, কী অবস্থায় শি-ট্যাক্সি রয়েছে, তার তথ্য রাখে তারাই। ফলে যাত্রীর অবস্থান বা ঠিকানা অনুযায়ী নিকটবর্তী ট্যাক্সিটিকে পাঠিয়ে দিতে পারবে কন্ট্রোলরুম।
শি ট্যাক্সির সরকারি বিজ্ঞপ্তির পরে সম্প্রতি হায়দরাবাদে ওয়েবসাইটে আবেদন করেছেন ৪৭ জন। নির্বাচিতেরা প্রশিক্ষণের পরে পর্যায়ক্রমে রাস্তায় নামছেন। ট্যাক্সি কেনার জন্য রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর তাঁদের ৩৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে। ব্যাঙ্কঋণ মিলছে ৫৫ শতাংশ। এর আগে ২০১৩ থেকে ‘শি ট্যাক্সি’ চালু হয়েছে তিরুঅনন্তপুরমে, ২০১৪-র জুন থেকে চেন্নাইয়ে। কেরলে সরকার প্রকল্পটি ঘোষণা করলে ৫৭ জন আবেদন করেন। ১৪ জনকে বাছাই করে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেয় প্রশাসন।
অল্প সময়ের ব্যবধানে কলকাতায় ট্যাক্সিতে শ্লীলতাহানির একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন এ শহরেও ‘শি ট্যাক্সি’ চালু হবে না?
দীর্ঘদিন ডিসি (ট্রাফিক)-এর দায়িত্ব সামলেছেন প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমমোহন চক্রবর্তীর জবাব, “অবশ্যই হওয়া উচিত। মহিলা-নিয়ন্ত্রিত এ রকম ‘রেডিও ট্যাক্সি’ চালু হলে সুফল মিলতে পারে। আর সুফল মিলছে বলেই দক্ষিণ ভারতের কিছু শহরে ‘শি ট্যাক্সি’ বাড়ছে!”
গত জুলাইয়ে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেছিলেন, “কলকাতায় এক হাজার ‘শি ট্যাক্সি’ নামাব। নিখরচায় চালক-প্রশিক্ষণ এবং লাইসেন্স মাসুলের অর্ধেক ছাড় দেবে সরকার।” সেই কাজ কতটা এগোলো? পরিবহণ উপসচিব চপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব এখনও আসেনি। প্রকল্পটি রূপায়িত হলে নিশ্চয়ই ভাল হয়। ট্যাক্সির পারমিট ও বাণিজ্যিক গাড়ির জন্য তো বেশ কিছু মহিলা আবেদনও করেছেন!” তবে তাঁদের কত জন নিজে ট্যাক্সি বা গাড়ি চালাবেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন চপলবাবু।
কিন্তু রাতে ‘শি ট্যাক্সির’ চালকের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবেন? তেলঙ্গানা সরকারের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “সার্বিক ভাবে ‘শি ট্যাক্সি’ এবং তার চালকদের নিরাপত্তার বিষয়টা খতিয়ে দেখতে আমাদের দু’টি কমিটি হয়েছিল। বিপদ যুঝতে ‘পেপার স্প্রে’ এবং ট্যাক্সিতে আপৎকালীন বোতামের ব্যবস্থা হয়েছে। ওই বোতাম টিপলেই সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কেত চলে যাবে কন্ট্রোল রুম এবং পুলিশের কাছে।”
এক দশক ধরে কলকাতায় এসি ট্যাক্সি বা গাড়ি চালাচ্ছেন স্নাতক পাপিয়া গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “আমি তো এক বারও বিপদে পড়িনি। লঙ্কাগুঁড়োর স্প্রে না থাকলেও ক্ষতি নেই। সাহস আর আত্মবিশ্বাসটাই আসল।” প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার গৌতমবাবু বলেন, “মহিলা চালক যশবন্ত কৌর দীর্ঘদিন এ শহরে ট্যাক্সি চালিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আমার নানা সময়ে দেখা হয়েছে। তিনিও কখনও সমস্যা বা জটিলতার কথা বলেননি।”
এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি একটি পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছেন বছর বিয়াল্লিশের পাপিয়া। বেশ কয়েক বছর ‘এসি ক্যাব ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক ছিলেন। তাঁর কথায়, “সরকার না করলে হবে না, এই ভাবনাটাও ঠিক নয়। ‘শি ট্যাক্সি’ মহিলাদের উপার্জনের একটা নিশ্চিত এবং সম্ভাবনাময় পেশাও হয়ে উঠতে পারে। আমি নিখরচায় প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দেব। বেঙ্গালুরুতেও এ রকম একটি প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy