সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি মৃতদেহ। শুক্রবার, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: সুমন বল্লভ
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পর পর চাদর ঢাকা দু’টি দেহ। এক জনের দেহ সাদা চাদরে ঢাকা। একটা শাঁখা-পলা পরা হাত ঝুলছে সেই সাদা চাদরের ফাঁক দিয়ে। পাশে দাঁড়িয়ে দেওয়ালের দিকে মুখ করে কেঁদে চলেছেন এক তরুণী আর এক মধ্যবয়সী মহিলা। তাঁরা কচুয়াধামের দুর্ঘটনায় মৃত অপর্ণা সরকারের দিদি চন্দনা মণ্ডল আর বোন সুপর্ণা মণ্ডল।
শুক্রবার ভোরবেলা দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কোনওরকমে আগরপাড়া আর বনগাঁ থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে এসেছেন দু’জনে। বৃহস্পতিবার দুপুরে বছর আটেকের ছেলে দীপ আর স্বামী তারক সরকারের সঙ্গে কচুয়ায় জল ঢালতে দত্তপাড়া থেকে বেরিয়েছিলেন বছর সাতাশের অপর্ণা সরকার।
তাঁরা যখন মন্দির থেকে কয়েক মিটার দূরে, তখনই হুড়মুড়িয়ে পাঁচিল ভেঙে পড়ে। তার তলায় চাপা পড়েন অপর্ণা। তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে এল মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। যদিও অপর্ণার স্বামী আর ছেলে কোথায় রয়েছে সেই খোঁজ তখনও পাননি দুই বোন। পরে জানা যায়, তাঁরা ধান্যকুড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি।
অপর্ণার সঙ্গেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় হাসনাবাদ আমলানির বাসিন্দা তরুণ মণ্ডলকে। তিনি বাড়ির কাছে একটি বেসরকারি রক্ত পরীক্ষা কেন্দ্রে কাজ করতেন। বাড়িতে বছর দেড়েকের মেয়ে আর স্ত্রী রয়েছে। বৃহস্পতিবার তরুণবাবু ছোটভাই রাজু আর এক শ্যালককে নিয়ে কচুয়া ধামে গিয়েছিলেন জল ঢালতে। দুপুরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি গাড়ি করে তাঁরা তিন জনে মিলে বসিরহাটে পৌঁছন। সেখান থেকে জল নিয়ে হাঁটা শুরু করেন কচুয়া ধামের দিকে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। মন্দিরে পৌঁছনোর আগেই পাঁচিলের তলায় চাপা পড়ে যান তরুণবাবু। তাঁর ভাই রাজুও জখম হন। তবে শ্যালকের কোনও ক্ষতি হয়নি। শুক্রবার সকালে তরুণবাবুর জ্যেঠতুতো ভাই বাপ্পা মণ্ডল ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জানান, সকালে তরুণবাবুর মেজভাই তাপসের মোবাইলে দুর্ঘটনার খবর জানান রাজু। রাজু শুধু ফোনে বলেছিল, ‘‘তোমরা চলে এসো। দাদা গুরুতর আহত।’’ কিন্তু তাঁরা যখন ন্যাশনাল মেডিক্যালে পৌঁছন, দেখেন রাজুর চোখে-মুখে আতঙ্ক। গোটা গায়ে কাদা মাখা। কোনওরকমে সে জানায় ‘‘দাদা নেই।’’ তার পর থেকে একপ্রকার ট্রমায় রয়েছেন রাজু।
এ দিকে সকালেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় তাদের ওখানে দু’জনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। আরও দু’জনকে ঘটনাস্থল থেকে পাঠানো হয়েছে এসএসকেএমে। পরে এসএসকেএমে সেই দু’জনের মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যার পরে সেই দু’জনের মধ্যে মহিলাকে হাসনাবাদের সনকা দাস বলে শনাক্ত করে মাটিয়া থানার পুলিশ। তারা জানায়, ওই মহিলা নিখোঁজ ছিলেন বলে থানায় খবর এসেছিল। আর সেই ছবি মিলিয়েই সন্ধ্যার পরে তাঁকে শনাক্ত করে পুলিশ। তবে অপর যুবকের পরিচয় রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। তাঁর বয়স আনুমানিক ৪০ বছর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy