গোপালের মূর্তি নিয়ে করমণ্ডলে চাপলেন কোন্নগরের লক্ষ্মী দাস সরকার। —নিজস্ব চিত্র।
করমণ্ডল এক্সপ্রেস খড়্গপুর স্টেশন পৌঁছতেই বার দুয়েক দু’হাত জোড় করে প্রণাম করলেন বধূ। আসনের সামনে নীলরঙা ভাঁজ করা ছোট্ট টেবিলে রাখা গোপাল ঠাকুরের মূর্তি। ফোনে কাউকে একটা বললেন, এখন কোন স্টেশন পেরোলেন। তিনি লক্ষ্মী দাস সরকার। রেল দুর্ঘটনার ১১৬ ঘণ্টা পর বুধবার দুপুরে শালিমার থেকে ছেড়ে যাওয়া আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী তিনি। যাবেন চেন্নাই। মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে। শুক্রবারের দুর্ঘটনার কথা তুলতেই লক্ষ্মী বললেন, ‘‘উনি যখন চাইবেন যাব। আসলে আমার তো যাওয়ার কথা ছিল ২ জুন, শুক্রবারই।’’ বলেই সামনে রাখা গোপালমূর্তির দিকে তাকালেন লক্ষ্মী।
গত ২ মে, শুক্রবার চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস ওড়িশার বাহানগা স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৮৮ জন। আহত বহু। ওই দিনই হুগলির কোন্নগরের নবগ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীর চেন্নাই যাওয়ার কথা ছিল। মেজো মেয়ে থাকেন ওখানে। বুধবারের করমণ্ডলে বসে তিনি বললেন, ‘‘২ জুন ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু ওই দিন আমার কলেজপড়ুয়া ছোট মেয়ের একটি অনুষ্ঠান ছিল। ও কিছুতেই ওই দিন যেতে দিল না।’’
শুক্রবার ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দুই মেয়ের মধ্যে ফোনে কথা হয়। মা এই খবর পেলে আতঙ্কিত হতে পারেন ভেবে কেউই তাঁকে কিছু বলেননি। তবে এত বড় ঘটনা কী আর কারও চোখ এড়ায়। লক্ষ্মী খবর পেয়েছিলেন ঠিকই। ছোট মেয়ে ২ জুনের টিকিট বাতিল করে ৪ জুনের টিকিট কেটে দিয়েছিলেন। কিন্তু করমণ্ডল দুর্ঘটনার পর সে দিন আর যাওয়া হয়নি। তাই ৫ দিন পর শালিমার থেকে ছাড়া প্রথম আপ করমণ্ডলের সওয়ারি হয়েছেন লক্ষ্মী একা।
লক্ষ্মী জানান, স্বামী কাজে আটকে রয়েছেন। এখন চেন্নাই যেতে পারছেন না। ছোট মেয়ের পড়াশোনা আছে। তাই একা মেজো মেয়ের কাছে যাচ্ছেন। কথায় কথায় লক্ষ্মী এ-ও জানালেন, তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েই থাকেন ভিন্রাজ্যে। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে মাঝেমাঝেই তিনি একা যান। তবে সঙ্গে থাকে এই গোপালমূর্তি। লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘চার-পাঁচ দিনের বেশি কোথাও যেতে হলে গোপালকে সঙ্গেই নিয়ে যাই। এ বারও নিয়ে যাচ্ছি। আমি তো মেয়েকে বলেছিলাম, উনি যে দিন নিয়ে যেতে চাইবেন সে দিনই যাব। ২ তারিখ হয়তো উনি যেতে চাননি। তাই যাওয়া হয়নি।’’
মেয়ের কাছে মাসখানেক থাকার ইচ্ছে লক্ষ্মীর। সে কথা জানিয়েই আবার গোপালের দিকে তাকালেন তিনিই।
(এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় লক্ষ্মী দাস সরকার মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে লেখা হয়েছিল। যা ঠিক নয়। তিনি তাঁর অবিবাহিত মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চেন্নাই যাচ্ছেন। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy