ধৃত দুই তরুণী। —নিজস্ব চিত্র
বিয়ের আগের রাতে হবু বৌয়ের ফোন। ‘কথা আছে’। সে হাতছানিতে সাড়া দিয়ে পৌঁছতেই ‘আব্দার’, কানামাছি খেলতে হবে। অদ্ভুত ঠেকলেও না করেননি কালনার যুবক চিরঞ্জিত পাল। কিন্তু চোখে রুমাল বাঁধা হতেই তাঁর গলায় যেটা ঠেকল, সেটা কাটারির ফলা।
চিরঞ্জিতের দাবি, চোখ থেকে রুমাল খুলে তিনি দেখেন, কাটারি উঁচিয়ে আছে হবু বৌয়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বান্ধবী নাসিমা খতুন। পাশে তাঁর পাঁচ বছরের প্রেমিকা তথা হবু বৌ দীপা পণ্ডিত। মুহূর্তে ফের আক্রমণ। হাত দিয়ে তা রুখে কাটারি কেড়ে ফেলে দেন ওই যুবক। চিৎকার শুনে লোক জড়ো হতে দুই বান্ধবীকে তাদের হাতে তুলে দিয়ে কোনও রকমে মোটরবাইক চালিয়ে থানায় পৌঁছন চিরঞ্জিত। রক্তাক্ত অবস্থাতেই অভিযোগ দায়ের করেন। গ্রেফতার হন দীপা ও নাসিমা। মঙ্গলবার কালনা আদালত তাঁদের ১৪ দিন জেল-হাজতে পাঠিয়েছে।
এই হামলার পিছনে পুলিশ দু’টি কারণ পেয়েছে। দীপা ও নাসিমার ‘ঘনিষ্ঠতা’— যা নিয়ে দুই পরিবারের ‘অস্বস্তি’ রয়েছে। তা ছাড়া, চিরঞ্জিত বলেছেন, ‘‘দীপাকে খারাপ পথে নামানোর চেষ্টা করছিল নাসিমা। বিয়ে হয়ে গেলে তা করতে পারত না। তাই দীপাকে প্রভাবিত করে ও আমাকে খুনের চেষ্টা করে।’’ বর্ধমানের এসপি কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘তদন্তে দুই তরুণী সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য হাতে এসেছে। তবে নিশ্চিত না হয়ে কিছু বলা উচিত হবে না।’’
বছর কুড়ির দীপা কালনার নিউ মধুবন এলাকার বাসিন্দা। পাশেই বাড়ি বছর তেইশের নাসিমার। পড়শিরা জানান, ছোট থেকেই দুই বান্ধবী অভিন্নহৃদয়। এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, ঘোরাফেরা। বছর পাঁচেক আগে ছবিটা বদলায়। এলাকার মুদির দোকানদার চিরঞ্জিতের সঙ্গে দীপার সম্পর্ক তৈরি হয়। মাস তিনেক আগে দীপার সিঁথিতে সিঁদুর দেন কালনারই শাসপুরের বাসিন্দা চিরঞ্জিত। সে বিয়ে না মেনে দুই পরিবার ঠিক করে সামাজিক অনুষ্ঠান করে মঙ্গলবার বিয়ে হবে।
কালনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চিরঞ্জিত। গলায় পড়েছে ১১টি সেলাই। চোট আছে হাতেও। তিনি জানান, সোমবার রাতে মোবাইলে ফোন করে নিজেদের বাড়ির পাশের মাঠে তাঁকে ডাকেন দীপা। সেখানে পৌঁছতেই দীপা কানামাছি খেলার আব্দার করেন। চিরঞ্জিত বলেন, ‘‘অবাক হলেও ভাবলাম, ওর ইচ্ছে হচ্ছে যখন, খেলি। দীপাই রুমাল দিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। তার পরে আচমকাই গলায় কোপ!’’
কাটারিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, জেরায় দীপা অবশ্য তাঁদের জানিয়েছেন, নাসিমা নয়, কাটারি ছিল তাঁর হাতে। চিরঞ্জিত সঙ্গে আপেল এনেছিলেন। তা কাটতেই তিনি বাড়ি থেকে কাটারি নিয়ে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত কিছু ব্যাপার নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। আচমকা পা পিছলে চিরঞ্জিত কাটারির উপরে পড়ে যান। আদালত চত্বরে এ দিন নাসিমা দাবি করেন, ‘‘রাতে চেঁচামেচি শুনে মাঠে যাই। অথচ, আমাকেই খুনের চেষ্টার অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়া হল!’’
এ দিন নিউ মধুবন এলাকায় গিয়ে দীপা বা নাসিমার পরিবারকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, দীপার মা মিনু পণ্ডিত তাদের জানিয়েছেন, দীপা আর নাসিমাকে বারবার আলাদা করতে চেয়েও পারেননি তিনি। কিন্তু কেন মেয়েকে নাসিমার থেকে আলাদা করতে চেয়েছিলেন তা ভেঙে বলেননি। নাসিমার পরিবারের এক সদস্য আবার পুলিশকে বলেছেন, ‘‘পারলে সারাক্ষণ এক সঙ্গে থাকত ওরা। একে-অন্যকে খুব বেশি ভালবাসত।’’
হামলা, বিশেষ করে দীপার কথা উঠলেই মুখ-চোখের রং বদলে যাচ্ছে চিরঞ্জিতের। বললেন, ‘‘পাঁচ বছরের সম্পর্ক আমাদের। খুব কাছ থেকে দেখেছি দীপাকে। ঘা খেয়ে বুঝলাম, চোখ বন্ধ করে ভরসা করার জায়গাটা তৈরি হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy