Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Hanskhali

নির্যাতিতার পরিবার কি পাকা বাড়ি পাবে

দুই দিদি বিবাহিত। বাবা-মায়ের সঙ্গে এই ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকত বছর চোদ্দোর মেয়েটি। গত ৪ এপ্রিল স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ছেলের জন্মদিনের পার্টিতে তাকে মদ খাইয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।

গণধর্ষণে মৃতার ভাঙাচোরা সেই বাড়ি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

গণধর্ষণে মৃতার ভাঙাচোরা সেই বাড়ি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৯
Share: Save:

ছ’মাস কেটে গেল, এখনও প্রশাসন কথা রাখল না। পাটকাঠির দেওয়ালের মাথায় টিনের চালটা বেশ কয়েক জায়গায় ফুটো। সেখান দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ে। রোদ উঠলে মেঝেতে এসে পড়ে। রাতে ঢোকে জ্যোৎস্না।

পুজো আসছে। নতুন জামাকাপড় তো দূর, ঘরের জন্য নতুন টিন কেনার ক্ষমতাও নেই বাসিন্দাদের। এই আধছাওয়া ঘরকে তাঁরা এখনও ‘বাড়ি’ বললেও তা আসলে চট, ত্রিপল আর পাটকাঠি মিলিয়ে কোনওমতে মাথা গোঁজার ঠাই। পাটকাঠির দেওয়াল বর্ষার জলে পচে খসে পড়েছে জায়গায় জায়গায়। বস্তা ঝুলিয়ে সেই সব ফাঁক ঢাকার আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু একটা ‘হাঁ’ এতই বড় যে, তা দিয়ে রাস্তা থেকে ঘরের ভিতরটা দেখা যায়।

ঘরের ভিতরে ডান দিকে কাঠের চৌকি। ওই চৌকিতে শুয়েই সারারাত প্রবল রক্তক্ষরণে মারা গিয়েছে বাড়ির কিশোরী মেয়েটি।

দুই দিদি বিবাহিত। বাবা-মায়ের সঙ্গে এই ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকত বছর চোদ্দোর মেয়েটি। গত ৪ এপ্রিল স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ছেলের জন্মদিনের পার্টিতে তাকে মদ খাইয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরেও সে এই বাড়িতেই ফিরে এসেছিল। কিন্তু রাত পার করতে পারেনি। চাইল্ড লাইনের হস্তক্ষেপে পাঁচ দিন পরে মেয়েটির মা পুলিশে অভিযোগ করেন। তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, মেয়ে মারা যাওয়ার পর মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে গাঁয়ের শ্মশানে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। এই ঘটনায় হাই কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তে নামে। আট জন গ্রেফতার হয়ে আপাতত জেলে।

কিন্তু ঘরের চেহারা সেই একই আছে। আজ পর্যন্ত সরকারি আবাস যোজনায় ঘর পায়নি পরিবারটি। মেয়েটির এক দিদি বলে, “সরকার ঘর দেয়নি। আর মনে হয় পাব না।” ঘটনার পর থেকে শয্যাশায়ী অসুস্থ বাবা। মা বিড়ি বেঁধে সংসার টানেন। বাবা বলেন, “হাতে যা টাকা ছিল, তা দিয়ে ওই ভিতটুকুই গাঁথতে পেরেছিলাম।”

কেন এই পরিবার ঘর পেল না? স্থানীয় এক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের বক্তব্য, “ওই পরিবারের নাম স্থায়ী তালিকায় ছিল না।” কেন ছিল না, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। বিডিও রত্না চক্রবর্তী বলছেন, “কেন ওই পরিবারের নাম ছিল না, তা খতিয়ে দেখা হবে।” তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “আমরা আবাস প্লাস তালিকায় নতুন করে ৩৪৯২টি ঘর পেয়েছি। তার মধ্যে ওই পরিবারের নাম আছে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি ঘর করে দিতে পারব।”

পুজো আসছে। এখন মেয়ে চলে যাওয়ার কষ্টকে আঁকড়ে বসে আছেন মা। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি বলেন, “আমার এই ভাঙা ঘরের সব কিছু জুড়ে সে রয়ে গিয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Hanskhali Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy