পদ্মসম্মান প্রত্যাখ্যান বুদ্ধদেবের। ফাইল চিত্র ।
কেন্দ্রের মোদী সরকারের দেওয়া পদ্মভূষণ সম্মান প্রত্যাখ্যান করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মঙ্গলবার রাতে তাঁর পারিবারিক সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে। বস্তুত, বুদ্ধদেবের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, বুদ্ধদেব শারীরিক ভাবে অশক্ত হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আগের মতোই দৃঢ়চেতা এবং সবল রয়েছেন। সে ভাবেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পদ্মসম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার।
রাতে বুদ্ধদেব নিজেও বিবৃতি দিয়ে জানান, ‘পদ্মভূষণ পুরস্কার নিয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে এ নিয়ে কেউ কিছু বলেনি। যদি আমাকে পদ্মভূষণ পুরস্কার দিয়ে থাকে, তা হলে আমি তা প্রত্যাখ্যান করছি।’ বস্তুত, বুদ্ধদেব যে ওই সম্মান প্রত্যাখ্যান করছেন, তিনি বিবৃতি দেওয়ার ঘন্টাখানেক আগেই তা জানিয়ে দিয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দেওয়া পদ্মসম্মান কি গ্রহণ করবেন আপাতত বাংলার শেষ কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী? মঙ্গলবার রাত থেকে সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। যে বিজেপি-র ‘বিপদ’ সম্পর্কে বারংবার রাজ্যকে অবহিত করেছেন বুদ্ধদেব, জীবনের উপান্তে এসে তিনি তাদের দেওয়া সম্মান নেবেন কি না, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বুদ্ধদেব নিজেই সেই জল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে তাঁর পরিবারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বুদ্ধদেবের বাড়িতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ফোন করা হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক প্রতিনিধি ফোনে জানান, বুদ্ধদেব পদ্মভূষণ পাচ্ছেন। তার পরেই ফোন কেটে যায়। রাতে বুদ্ধদেবের নাম পদ্মসম্মানের জন্য ঘোষণা করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তখনও বিষয়টি জানতেন না। পরে খবর জেনে পত্রপাঠ সম্মান প্রত্যাখ্যান করেছেন। মীরা স্বয়ং তাঁর সিদ্ধান্তের কথা আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন।
বুদ্ধদেবকে পদ্মভূষণ দেওয়ার কথা ঘোষণা হতে সাড়া পড়ে সিপিএমের অন্দরেও। দলের রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য জানান, বুদ্ধদেব পদ্মসম্মান নেবেন না। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের রাতে যাওয়ার কথা বুদ্ধদেবের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে। যদিও বুদ্ধদেবের পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়, তার আগেই বুদ্ধদেব ওই খেতাব প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, বুদ্ধদেবকে ওই সম্মান দেওয়া হচ্ছিল, ‘সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদান’-এর স্বীকৃতির কারণে। অন্তত তেমনই ঘোষণা করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। ঘটনাচক্রে, ইদানীং কেন্দ্রীয় সরকার পদ্মসম্মানের জন্য কারও নাম ঘোষণা করার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিত্বের সম্মতি নেয়। ঠিক যেমন মঙ্গলবারই বিকেলে ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে ফোন করে তাঁর সম্মতি চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। তিনি তাঁর অসম্মতির কথা জানিয়ে দেন।
সে ভাবেই বুদ্ধদেবের বাড়িতেও ফোন করা হয়েছিল বলে খবর। অসুস্থ বুদ্ধদেব ইদানীং শায়িতই থাকেন। বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ফোন এলে অন্য কেউ ধরেন। মঙ্গলবারও তেমনই ফোন এসেছিল। কেউ একজন ফোন ধরায় তাঁকে জানানো হয়, বুদ্ধদেব পদ্মভূষণ পাচ্ছেন। তার পরেই ফোন কেটে যায়। ‘সম্মতি’ নেওয়া হয়নি বলেই সূত্রের দাবি। এবং যেহেতু ফোনটি এসেছিল ল্যান্ডলাইনে, তাই ফোনকারীর পরিচয়ের সত্যাসত্যও যাচাই করা যায়নি।
কিন্তু রাতে তাঁর নাম ঘোষণার পর রাজ্য জুড়ে আলোড়ন পড়ে। তখনই বুদ্ধদেব সম্মান প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়ে দেন। কিছু পরে জারি করা হয় তাঁর বিবৃতিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy