তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কেশপুরে এখন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দলীয় নেতৃত্বের অন্যতম চিন্তার বিষয়। আজ, শনিবার কেশপুরের সভা থেকে সেই দ্বন্দ্ব সামলাতে দলকে কী বার্তা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সে দিকেই নজর থাকবে সকলের। পাশাপাশি, কাঁথি ও রানাঘাটের মতো তিনি যাওয়ার পথে কোথাও দাঁড়ান কি না, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে দলের মধ্য।
তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি যে ক’টি জায়গায় সভা করেছেন অভিষেক, সেগুলি বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি, এবং দলীয় দ্বন্দ্বে নাজেহাল। ডুয়ার্স, কাঁথি, রানাঘাট— তিন জায়গাতেই গিয়ে তিনি স্বচ্ছতার বার্তা দিয়েছেন। ‘এক ফোনে অভিষেক’-এর ফোন নম্বরও দিয়ে এসেছেন। মনে করা হচ্ছে, কেশপুরেও ব্যতিক্রম হবে না। কেন? দলের অনেক কর্মীই জানাচ্ছেন, দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব জেলা নেতৃত্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেশপুরের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের কথা মাথায় রেখেই তাঁরা চাইছেন, অভিষেক এই নিয়ে বার্তা দিন।
১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠিত হওয়ার পরে উপ-নির্বাচনে সিপিআইয়ের গুরুদাস দাশগুপ্তকে পাঁশকুড়া (অধুনা ঘাটাল) লোকসভা কেন্দ্রে হারিয়ে দেন ঘাসফুলের আনকোরা প্রার্থী বিক্রম সরকার। কেশপুর এই কেন্দ্রের অন্তর্গত। তার পরেই সেখানে এলাকা দখলে ঝাঁপায় বামেরা। বার বার রক্তাক্ত হয় এলাকা। উত্তপ্ত হয় বোমা-গুলিতে। ২০০১ সালে বিধানসভা ভোটে সিপিএম প্রার্থী নন্দরানি ডল পান ৯০ শতাংশের বেশি ভোট। তৃণমূল কেশপুর দখল করে ২০১৬ সালে। শিউলি সাহা পান ৭০ শতাংশের বেশি ভোট। দল সূত্রে বলা হচ্ছে, কিন্তু ২০২১ সালে এসে শিউলির প্রাপ্ত ভোট ৫১ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এক লক্ষ এক হাজার ভোটের ব্যবধান কমে হয়ে যায় মোটে ২০ হাজার। দেখা যায়, সিপিএমের ভোট তখন প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এবং ৪০ শতাংশের থেকে বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি।
দল সূত্রে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি সিপিএম নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টায় নেমেছে। জামশেদ আলি ভবন-সহ দলের বিভিন্ন কার্যালয় আবার নিয়ম করে খুলছে। লাল-পতাকার সভায়, মিছিলে লোক জমছে ফের। তার উপরে তৃণমূলের কোন্দলে দাঁড়ি পড়েনি। গত কয়েক মাসেও তৃণমূলের দুই শিবিরের মধ্যে একাধিক বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। দাবি, এর এক দিকে আছেন দলের ব্লক সভাপতির ঘনিষ্ঠরা, অন্য দিকে তিন ব্লক সহ-সভাপতির অনুগামীরা।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, এই আবহে আজকের সভা থেকে সাংগঠনিক বার্তাই দেবেন অভিষেক। এর আগে ২০১৬ ও ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের প্রচারেও কেশপুরে এসেছিলেন অভিষেক। তাঁর এ বারের সফর নিয়ে বিরোধীরা অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না। ক’দিন আগেই জেলায় এসে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ ছিল, ‘‘যুবরাজ আসবেন। ৮ হাজার পুলিশ থাকবে। ওঁর ধারেপাশে কেউ ভিড়তে পারবে না।’’ সিপিএমের প্রাক্তন মন্ত্রী নন্দরানি আবার বলছেন, ‘‘জোর করে সমর্থন আদায় কিছু দিনের করা যায়। তবে বেশি দিন যায় না।’’
গোষ্ঠী কোন্দলের কথা অবশ্য প্রকাশ্যে মানতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার ব্যাখ্যা, ‘‘বড় সংসার হলে টুকটাক নিজেদের মধ্যে কিছু বিতর্ক হয়েই থাকে।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতির আবার বলছেন, ‘‘কেশপুরে দীর্ঘদিন মৃত্যু হয়নি, আগুন জ্বলেনি। শুধু কোথাও কোথাও খুনসুটি হয়েছে। সেটাও আর হবে না।’’
ভোটের আগে তা নিশ্চিত করতেই কি অভিষেকের আগমন? জোর চর্চা তৃণমূলের ঘরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy