গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
এ বার কি বেসুরো জিতেন্দ্র তিওয়ারি? রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বিস্ফোরক চিঠি পাঠালেন আসানসোল পুরবোর্ডের প্রশাসক। একই সঙ্গে সোমবার আসানসোলের দু’টি কলেজের পরিচালন বোর্ড থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন জিতেন্দ্র। আর তার পরেই তাঁকে ঘিরে তীব্র জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। একই সঙ্গে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল। জিতেন্দ্রকে কড়া ভাষায় পাল্টা আক্রমণ করে ফিরহাদের বক্তব্য, ‘কারও যাওয়ার থাকলে চলে যেতে পারেন’।
আসানসোল পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন জিতেন্দ্র। কিন্তু নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনিই এখন পুর প্রশাসক বোর্ডের প্রধানের পদে রয়েছেন। আসানসোলকে সিটি ঘোষণা করলেও রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছ থেকে সেই প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা না নেওয়ায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ জিতেন্দ্র। তাঁর সেই ক্ষোভের কথা জানিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখে পাঠালেন জিতেন্দ্র।
কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পশহর আসানসোল। স্মার্ট সিটির তালিকায় নথিভুক্ত হলে সেই শহরের উন্নয়নে ২০০০ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই টাকা নেয়নি। এই নিয়েই বেজায় ক্ষুব্ধ জিতেন্দ্র। ফিরহাদকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘আসানসোলের কাউন্সিলর ও পুরসভার কর্মী-আধিকারিকরা কঠিন পরিশ্রম করে যে উন্নয়ন করেছে, তার জন্য কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি মিশনে জায়গা পেয়েছে আসানসোল। সেই প্রকল্পের টাকা টাকা নিলে আসানসোলের সামগ্রিক উন্নয়নে বিরাট কাজে লাগত। কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে সেই প্রকল্পের টাকা পাওয়া এবং এবং অন্য়ান্য সুবিধা নেওয়া হচ্ছে না।’’
ফিরহাদকে পাঠানো জিতেন্দ্র তিওয়ারির চিঠি।
এর পাশাপাশি কেন্দ্রের কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেটাও রাজনৈতিক কারণে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন জিতেন্দ্র। জিতেন্দ্রর আরও ক্ষোভ, কেন্দ্রের এই সব প্রকল্পের বদলে নবান্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রাজ্য সরকারই উন্নয়নের টাকা দেবে আসানসোল পুরসভাকে। কিন্তু সেই টাকা তাঁরা পাননি বলেও চিঠিতে তোপ দেগেছেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক।
আরও পড়ুন: পার্টি থেকে ফেরার সময় গড়ফায় পথচারীকে পিষে মারলেন মদ্যপ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া
পুরমন্ত্রীকে চিঠির পাশাপাশি সোমবার রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজ এবং রানিগঞ্জ গার্লস কলেজের গভর্নিং বডি থেকে ইস্তফার চিঠি পাঠিয়েছেন উচ্চ শিক্ষা দফতরকে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘ব্যক্তিগত ব্যস্ততা’।
চিঠি দেওয়ার পর জিতেন্দ্র তিনি বলেন, ‘‘আমি এর আগে এই রকম ৭টি চিঠি দিয়েছি। সেগুলি সামনে আসেনি। আমি আমার মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। সেই চিঠি কী ভাবে সংবাদ মাধ্যমে গেল, তা খতিয়ে দেখতে হবে।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র দিক বা রাজ্য, সেটা বড় কথা নয়। আমি চাই আসানসোলের উন্নয়ন।’’
আরও পড়ুন: খবর পড়ে শোনানো হচ্ছে বুদ্ধদেবকে, ছুটি হতে পারে দু’তিন দিনে
চিঠির প্রসঙ্গে ফিরহাদ পাল্টা জিতেন্দ্রকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘জিতেন্দ্র এটা নিয়ে আমার সঙ্গে কোনওদিন কথা বলেননি। আজ কেন চিঠি দিয়েছে আমি জানি না। বহুবার কথা হয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে কোনওদিন কথা হয়নি।’’ পাশাপাশি তিনি বলেন, ‘‘কেন চিঠি দেবে? এক জন বিধায়ক হিসেবে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারত। কারোর যদি যাওয়ার থাকে চলে যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দিয়েছেন, সবার জন্য দরজা খোলা আছে। যে যাবে চলে যেতে পারেন, কিন্তু অর্থহীন কথা বলা অনুচিত।’’ বিজেপির কেউ জিতেন্দ্রকে ভুল বোঝাচ্ছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন ফিরহাদ।
আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় দীর্ঘদিন ধরে প্রায় একই অভিযোগ করে আসছিলেন। জিতেন্দ্রর চিঠির পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, কেন্দ্রের টাকা না নেওয়ায় আসানসোলের উন্নয়ন হচ্ছে না। এ বার সেই কথাই বললেন জিতেন্দ্র।’’
বিধানসভা ভোটের মুখে জিতেন্দ্রর এমন বিস্ফোরক চিঠি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চিঠিতে ‘রাজনৈতিক কারণে টাকা না নেওয়া’র অভিযোগ করায় জল্পনা আরও জোরদার। আগামী দিনে তাঁর অবস্থান কী হয়, তার দিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy