Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Joint Entrance Examination

রাজ্য জয়েন্টে সংসদকে সাত গোল জোড়া দিল্লি বোর্ডের, কেন পিছিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পডুয়ারা?

এ বার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ৫২.৯৮% পড়ুয়া র‌্যাঙ্ক পেয়েছেন। সিবিএসই বোর্ডের ২৮.৯২% এবং সিআইএসসিই বোর্ডের ২.২১% পরীক্ষার্থী আছেন সেই তালিকায়।

JEE topper

বাবা শামিম আখতারের সঙ্গে রাজ্য জয়েন্টে প্রথম সিবিএসই বোর্ডের ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুলের সাহিল আখতার। শুক্রবার কসবায় বাড়ির কাছে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ০৬:৩২
Share: Save:

সাফল্যের খোঁজে দূরবিন না-লাগুক, রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্সে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের পরীক্ষার্থীদের ফল বিশেষ উজ্জ্বলও নয়। সংসদের পরীক্ষার্থীরা এ বারেও দুই দিল্লি বোর্ডের পিছনে। রাজ্য জয়েন্টে প্রথম দশে রয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের মাত্র তিন জন পড়ুয়া। বাকি সাত জনের মধ্যে ছ’জন সিবিএসই এবং এক জন সিআইএসসিই বোর্ডের শিক্ষার্থী। সংসদের পড়ুয়াদের পিছিয়ে থাকার কারণ কী? শিক্ষা শিবিরের বৃহৎ অংশের অভিযোগ, সংসদের বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ্যক্রম অত্যন্ত গুরুভার এবং এখানকার বইয়ের মানও খুব উঁচু নয়। ভাল ফল করতে দিল্লি বোর্ডের ধাঁচে পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেও তার রূপায়ণে ক্রমাগত বিলম্বকেই দুষছে তারা।

জয়েন্টে শূন্যের বেশি পেলেই র‌্যাঙ্ক মেলে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ৫২.৯৮% পড়ুয়া র‌্যাঙ্ক পেয়েছেন। সিবিএসই বোর্ডের ২৮.৯২% এবং সিআইএসসিই বোর্ডের ২.২১% পরীক্ষার্থী আছেন সেই তালিকায়। বাকি ১৫.৮৯% র‌্যাঙ্ক করেছেন অন্যান্য বোর্ড থেকে। শুক্রবার ফল প্রকাশ করে রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহা বলেন, ‘‘৯৭,৫২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে র‌্যাঙ্ক করেছেন ৯৬,৯১৩ জন। পশ্চিমবঙ্গের ৬৯,৫৬০ জন এবং ভিন্‌ রাজ্যের ২৭,৫৪৩ জন র‌্যাঙ্ক পেয়েছেন। র‌্যাঙ্ক করেছেন অন্য রাজ্যের এক জন রূপান্তরকামীও।’’ গত বছর ৮১,৩৯৩ জন পরীক্ষা দিয়ে র‌্যাঙ্ক করেন ৮০,১৩২ জন। এ বার পরীক্ষার্থীর সঙ্গে সঙ্গে র‌্যাঙ্ক পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যাও বেড়েছে।

রাজ্য জয়েন্টে প্রথম হয়েছেন সিবিএসই বোর্ডের ডিপিএস রুবি পার্ক স্কুলের ছাত্র মহম্মদ সাহিল আখতার। দ্বিতীয় ওই স্কুলেরই সোহম দাস। উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল বাঁকুড়া বঙ্গ বিদ্যালয়ের সারা মুখোপাধ্যায় তৃতীয় স্থানে আছেন। চতুর্থ উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (পশ্চিম মেদিনীপুর) সৌহার্দ্য দণ্ডপাট। পঞ্চম সিবিএসই বোর্ডের দুর্গাপুরের হেমশিলা মডেল স্কুলের অয়ন গোস্বামী। ষষ্ঠ উত্তর ২৪ পরগনার নারায়ণ স্কুলের অরিত্র দত্ত, সপ্তম রাজস্থানের কোটার মা ভারতী সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলের কিন্তন সাহা, অষ্টম উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের বাঁকুড়া জেলা স্কুলের সাগ্নিক নন্দী, নবম রাজস্থান কোটার দিশা দিল্লি পাবলিক স্কুলের রক্তিম কুণ্ডু এবং দশম হয়েছেন সিআইএসসিই বোর্ডের কাটোয়ার ঘোষহাটের হোলি এঞ্জেলস স্কুলের শ্রীরাজ চন্দ্র।

প্রশ্ন উঠছে, জয়েন্টের দৌড়ে বাংলার সংসদের পরীক্ষার্থীরা বার বার দিল্লি বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের কাছে হেরে যাচ্ছেন কেন? তা হলে কি উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান পাঠ্যক্রম জয়েন্ট এন্ট্রান্সের বৈতরণী উত্তীর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে ততটা সহায়ক হচ্ছে না?

উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য স্বীকার করে নিচ্ছেন, সিবিএসই বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্স, অ্যাডভান্স জয়েন্ট এন্ট্রান্স, রাজ্য জয়েন্ট পাশ করার পক্ষে অনেক বেশি সহায়ক। চিরঞ্জীব বলেন, “আমি সংসদের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিজ্ঞান বিষয়ক যাবতীয় পাঠ্যক্রম সিবিএসই-র মতো করার কথা বলেছিলাম। কিন্তু কোভিড আসার পরে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। পাঠ্যক্রম পাল্টানো যায়নি। দ্রুত উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞানের পাঠ্যক্রম সিবিএসই-র মতো করা হবে।’’

শিক্ষা শিবিরের অভিযোগ, বহু কাল ধরেই পাঠ্যক্রম বদলের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টিকে যথোচিত গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর পর্যবেক্ষণ, উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান পড়ুয়ারা সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সংসদের যে-সব পাঠ্যবই পড়তে বাধ্য হন, তার কলেবর বিশাল। ‘‘অথচ এই পাঠ্যবইগুলোর তুলনায় অনেক উচ্চ মানের সংক্ষিপ্ত পাঠ্যবই রয়েছে এনসিইআরটি-র। সেই সব বই অনুসরণ করেন সিবিএসই বোর্ডের পড়ুয়ারা। সেগুলো পড়েই সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় ওঁরা অনেক ভাল ফল করেন,’’ বলেছেন ওই শিক্ষক-নেতা।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের মলয়েন্দু জানান, ৩০ জুনের আগে কাউন্সেলিং হবে না। কারণ, কাউন্সেলিংয়ের জন্য তাঁদের তিনটি সর্বভারতীয় সংস্থা— অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন, কাউন্সিল অব আর্কিটেকচার এবং ফার্মাসি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার উপরে নির্ভর করতে হয়। তাদের যা ‘অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার’ বা পঠনপঞ্জিকা, তাতে ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন বলছে, ৩০ জুনের আগে ছাড়পত্র মিলবে না। কাউন্সিল অব আর্কিটেকচার, ফার্মাসি কাউন্সিলের ছাড়পত্র দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ জুন। তাই ৩০ জুনের পরেই কাউন্সেলিং হবে। মলয়েন্দু বলেন, ‘‘কাউন্সেলিংয়ের ক্ষেত্রে আগে যে-ব্যবস্থা ছিল, সেটাই বহাল থাকবে। একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেটিই কাউন্সেলিংয়ে ‘গাইড’ বা পথপ্রদর্শকের কাজ করবে। বোর্ডের ওয়েবসাইটও দেখতে হবে নিয়মিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy