বাড়িতে দীপের খেলনা আর পোশাক গুছিয়ে রাখছে মেজ ভাই শুভম ও এক পিসতুতো দিদি। ছবি: অমিত মোহান্ত।
বছর আটেকের বালক দীপ হালদারকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মুন্নি সিংহকে সোমবার সকালে বালুরঘাটের খাসপুর এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করল। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ধৃত মানস সিংহের মাসি মুন্নি, এলাকায় প্রভাবশালী বলে পরিচিত। ফলে একাধিক অপরাধ করে গেলেও মাসির যোগাযোগের সুবাদে মানস বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। অসহায় শিশুটিকে ঠান্ডা মাথায় খুন করতেও তাই সে দ্বিধা করেনি বলে বালুরঘাট শহরের একে গোপালন কলোনির বাসিন্দারা এ দিন এক বাক্যে জানান।
রবিবার সন্ধেয় ধৃত মানসকে জেরা করে পুলিশ তার বাড়ির পাশে আত্রেয়ী নদীর খাঁড়ি থেকে বস্তাবন্দি ওই বালকের দেহ উদ্ধার করতেই জনরোষে উত্তাল হয়ে ওঠে এলাকা। হামলার আশঙ্কায় রাতে মানসের বাবা, মা ও বোন বালুরঘাট থানায় আত্মসমর্পণ করেন বলে দাবি।
সোমবার সকালে সবার নজর এড়িয়ে পুলিশ ধৃত পাঁচ জনকে বালুরঘাট আদালতে পাঠিয়ে দেয়। বিক্ষোভের আশঙ্কায় এ দিন জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে ঢোকার রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড করে ঘিরে ফেলা হয়। একে গোপালন কলোনি ও লাগোয়া রাস্তার মোড়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে হাসপাতালের মর্গ থেকে দীপের চাদরে ঢাকা ছোট্ট দেহ নিয়ে এলাকাবাসীর শ্মশান যাত্রার মিছিল ছিল শান্তিপূর্ণ।
আদালতের এপিপি (সহকারী সরকারি আইনজীবী) জয়ন্ত মজুমদার জানান, ধৃত পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ ৩৬৩ (অপহরণ), ৩৬৫ (লুকিয়ে রাখা), ৩০২ (খুন), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট), ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) এবং ৩৪ (সকলে মিলে অপরাধ ঘটানো) ধারায় মামলা রুজু করে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজত চেয়েছিল। এ দিন ধৃতদের পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। আইনি পরিষেবা বিভাগ থেকে আইনজীবী সিদ্ধার্থ দে শুনানিতে যোগ দিয়ে ধৃতদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারকের কাছে জামিনের আবেদন করেন। বিকেলে সিজেএম কোর্টের বিচারক গৈরিক রায় ধৃতদের জামিন নামঞ্জুর করে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
জেলা পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, ‘‘বালককে অপহরণ ও খুনের পিছনে একাধিক অভিযোগের খবর মিলেছে।’’ এর পিছনে শিশু বিক্রির ছক থাকতে পারে বলেও মনে করছে পুলিশের একাংশ। ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হবে বলে জানা গিয়েছে। শনিবার রাতে ওই এলাকার একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পুলিশ জেনেছে, দীপকে এক মহিলা রাস্তা থেকে হাত ধরে নিয়ে যায় (এর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)।
এলাকার একটি উৎসব ভবনের চুক্তিভিত্তিক অফিস কর্মী মুন্নি দু’টি দামি গাড়ির মালিক বলে এলাকাবাসীর একাংশের দাবি। তাঁরা জানান, সেগুলি তিনি ভাড়ায় খাটান। শাসক দলের কয়েক জন নেতার পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যের কিছু লোকজনের সঙ্গে মুন্নির যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। এর সঙ্গে তৃণমূলের বা প্রভাবশালী কেউ যুক্ত থাকলে পার পাবেন না। পুলিশ প্রশাসনকে আমরা স্পষ্ট ভাবে তা জানিয়ে দিয়েছি। নিহতের পরিবারের পাশে দল রয়েছে।”
ঘটনার দিন, শনিবার নতুন ঘুড়ি কিনে দিয়ে ওড়ানোর জন্য ডাকতে প্রথমে দীপের বাড়ির সামনে যায় অভিযুক্ত মানস। সে সময় অপরিচিত আরও দু’জন মানসের সঙ্গে ছিল বলে ঠাকুমা দীপ্তি মোহান্ত পুলিশকে আগেই জানান। ওই দু’জন কারা, জিজ্ঞাসা করতে মানস তাঁকে বলেছিল, “ওরা শুয়োর কিনবে, তাই দেখতে এসেছে।” এর পরে অন্য শিশুদের দিয়ে মানস দীপকে ডাকতে পাঠায়। বাড়ি থেকে বার হয়ে মাঠে ঘুড়ি ওড়ানোর পরে সন্ধে থেকে দীপ নিখোঁজ হয়ে যায়।
একাধিক চুরির অভিযোগের পাশাপশি রাতে বাড়িতে ঢুকে এক মহিলাকে যৌননিগ্রহের অভিযোগে তিন মাস জেলও খেটেছিল মানস। জেল থেকে বার হয়ে সে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলে কলোনির বাসিন্দাদের অভিযোগ। নেশা করে দাদাগিরি দেখানো তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বালুরঘাটের খাসপুর এলাকায় প্রথমে বিয়ে হয় ধৃত মুন্নির। পরে বিহারের এক ব্যক্তিকে তিনি বিয়ে করেন বলে প্রতিবেশীরা দাবি করেন। ওই বিহার যোগের সুবাদে কার্যত অনাথ বালক দীপকে বিক্রির জন্য অপহরণ করা হয়েছিল বলেই অভিযোগ করেন তৃণমূলের ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিপুলকান্তি ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy