Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

Coronavirus in West Bengal: কেন অপেক্ষা, কেনই বা ছাড়

ওমিক্রনের মোকাবিলায় বিলম্ব দেখে তাঁরা এমনই প্রশ্নের প্রহেলিকায় পড়ে গিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক শিবিরের একটি বড় অংশ।

বিধিভঙ্গ: রাজ্যে ওমিক্রন স্ট্রেনের চোখরাঙানি এবং কোভিডের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও নিউ মার্কেট চত্বরে উপচে পড়া ভিড়। বহু জনের মুখেই নেই মাস্ক, উধাও দূরত্ব-বিধি। বুধবার।

বিধিভঙ্গ: রাজ্যে ওমিক্রন স্ট্রেনের চোখরাঙানি এবং কোভিডের বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও নিউ মার্কেট চত্বরে উপচে পড়া ভিড়। বহু জনের মুখেই নেই মাস্ক, উধাও দূরত্ব-বিধি। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৩
Share: Save:

বাঘ পড়লে বুদ্ধি বাড়ে? না, ফস্কা গেরোর ফাঁকে চোর পালালে বজ্র আঁটুনি কোনও কাজ দেয়? করোনার নতুনতর দাপট, বিশেষত ওমিক্রনের মোকাবিলায় বিলম্ব দেখে তাঁরা এমনই প্রশ্নের প্রহেলিকায় পড়ে গিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক শিবিরের একটি বড় অংশ।

বিলম্বের অভিযোগ উঠছে কন্টেনমেন্ট জ়োন-সহ কড়াকড়ির বিষয়ে ৩ জানুয়ারি থেকে চিন্তাভাবনা করার কথা ওঠায়। ওই সব চিকিৎসক ও অতিমারি বিশেষজ্ঞের প্রশ্ন, কেন ৩ তারিখের অপেক্ষা? এখনই নয় কেন? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, এর আগে বিধিনিষেধে ছাড় দেওয়ার ফল কী হয়েছে, তা জানা সত্ত্বেও ফের নৈশ বিধিতে শৈথিল্য কেন? চিকিৎসকদের অনুযোগ, জনতার একাংশ মাস্ক পরা, দূরত্ব-বিধি মানার তোয়াক্কা না-করে রাস্তায় নেমে মাতামাতি করছেন। একই ভাবে উৎসবের নামে যখন-তখন বিধি শিথিল করা হচ্ছে। যখন কড়া হাতে রাশ ধরা দরকার, তখনই আমোদে মেতে ওঠার রাস্তা করে দিয়ে ছাড় দেওয়া হচ্ছে কোভিড বিধিনিষেধে। দুর্গাপুজো থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো, ভোটপুজো থেকে বড়দিনে সেই শৈথিল্যের ফল কতটা বিষময় হয়েছে, করোনার রেখচিত্রই তার প্রমাণ। কিন্তু টনক কতটা নড়েছে, বর্ষশেষ ও বর্ষবরণে নৈশ নিয়ন্ত্রণে ছাড়ই সেই বিষয়ে সংশয় বাড়াচ্ছে।

মাত্র কয়েক দিন আগেও করোনার দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৪০০ থেকে ৫০০-র ঘরে ছিল। মঙ্গলবার (বিগত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে) এক লাফে সেই সংখ্যা ৭০০-র ঘরে ঢুকেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার তা পৌঁছেছে এক হাজারের ঘরে। উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এখনই কঠোর হাতে রাশ ধরার বদলে কলকাতায় ওয়ার্ড-ভিত্তিক কন্টেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ এলাকা চিহ্নিত করার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করার বিষয়টি ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ঠেলে দেওয়ায় স্বাস্থ্য শিবিরের বড় অংশ

বিস্মিত। তাঁদের প্রশ্ন, করোনা সংক্রমণ ফের কার্যত দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে এবং পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ওমিক্রনের দাপট। তা হলে অবিলম্বে কন্টেনমেন্ট জ়োন নয় কেন? কেন ফের কয়েক দিন নৈশ বিধি শিথিল করা হচ্ছে? বর্ষশেষ ও বর্ষবরণে যথেচ্ছ ভিড় জমতে দিয়ে বিপদকে বাড়তে দেওয়ার জন্য? কেন্দ্র সতর্ক করে চলেছে। অনেক রাজ্য পুনরায় বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবু বাংলায় শৈথিল্য কেন? বর্ষশেষের মুখে পার্ক স্ট্রিট জমজমাট। থিকথিকে ভিড় চিড়িয়াখানায়, বিভিন্ন মলে এবং অবশ্যই রাস্তায়। ট্রামে-বাসে-মেট্রোয় বাদুড়ঝোলা ভিড়। পুরভোটে তো বিধিনিষেধ জলাঞ্জলি দিয়েছিল কলকাতা। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নতুন করে করোনার বাড়বাড়ন্তের কারণ এগুলোই। তৃতীয় ঢেউ নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও বিধিনিষেধ শিকেয় তুলে দাপাদাপির মূল্য আরও যে কত দিতে হবে, ভেবে শিউরে উঠছেন চিকিৎসকেরা।

প্রশ্ন উঠছে, সংক্রমণের রেখচিত্র যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটা যখন ২৯ ডিসেম্বরেই জানা গেল, তা হলে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার কী? এই দেরির ফলে বছরের শেষের ক’টা দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দু’দিন উৎসবমুখর জনতাকে বেলাগাম ছেড়ে দিলে সংক্রমণের হার কোথায় পৌঁছতে পারে, তা ভেবে চিকিৎসকেরা উদ্বিগ্ন। চিকিৎসকদের একাংশের প্রশ্ন, গত বছর এই সময়ে লকডাউন ছিল। মানুষ বাধ্য হয়ে গৃহবন্দি ছিলেন। এ বার যখন ফের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী স্কুল-কলেজ, আন্তর্জাতিক উড়ান, লোকাল ট্রেন বন্ধ করা প্রয়োজন কি না, তা ভেবে দেখতে বলছেন, তখন সবার আগে নৈশ বিধি পুনরায় পুরোপুরি বলবৎ হবে না কেন? এই অবস্থায় পুরভোট করা কতটা যুক্তিসঙ্গত, সেই প্রশ্ন তুলছে বিজেপি-সহ বিরোধী শিবিরও।

চিকিৎসকদের অভিযোগ, নৈশ বিধি শিথিলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে কোভিড বিধি উড়িয়ে উৎসব-উন্মত্ততা দেখেছে মহানগর। ৩১ ডিসেম্বর বর্ষবরণের রাত এবং ১ জানুয়ারি নতুন বছরের প্রথম দিন উদ্‌যাপনে বিধি আরও কতটা ভাঙা হবে, তা ভাবতেও শিউরে উঠতে হচ্ছে সচেতন মানুষজনকে। ডেল্টা প্রজাতির থেকেও ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ-ক্ষমতা পাঁচ গুণ বেশি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ দিন পর্যন্ত রাজ্যে ১১ জন ওমিক্রন-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। কিন্তু শহর কি নিয়ম মানছে? বাস্তব চিত্র বলছে, একেবারেই নয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘মাস্ক পরা, করোনা বিধি মানা ও জমায়েত এড়ানোর বিষয়ে মানুষকে আরও সতর্ক হতেই হবে। কঠোর হতে হবে প্রশাসনকেও। করোনা বিধি অবহেলা করলে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী।’’ শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘অতিমারির নতুন তরঙ্গ যে আছড়ে পড়তে শুরু করেছে, সেই বিষয়ে সংশয় নেই। কিন্তু সবই প্রশাসন কিংবা অন্যেরা করে দেবেন আর আমরা কোভিড বিধি উড়িয়ে বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াব— এটা হতে পারে না। সাধারণ মানুষকেও সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় দিতে হবে।’’

চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, পুরভোটে কলকাতার প্রায় সর্বত্রই করোনা বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। তার কুফল ধীরে ধীরে ফলছে। এক সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘এখনও বড়দিনের উন্মাদনার ফল কিন্তু আসেনি। এলে হয়তো দেখা যাবে, দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা আরও বেশি। এখন যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, সকলেরই যে উপসর্গ রয়েছে, তা নয়। তাই চোরাগোপ্তা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা সব থেকে বেশি।’’ স্বাস্থ্য শিবিরের আরও আশঙ্কা, এ-সবের সঙ্গে বর্ষবরণের উৎসব যুক্ত হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবেই। তার পরে ২২ জানুয়ারি চার পুরসভার ভোটকে কেন্দ্র করে প্রচার ও সভার ফলে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছে চিকিৎসকেরা।

সব মিলিয়ে সংশয় একটাই— রাশ টানতে দেরি হয়ে যাচ্ছে না তো!

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy