—ফাইল চিত্র।
জোগানে ঘাটতি নেই। তা সত্ত্বেও রাজ্যের খুচরো বাজারে আলু কেন অগ্নিমূল্য, বুঝতে পারছেন না কেউই। সরকার পদক্ষেপ করছে। আলুর দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও বেশির ভাগ বাজারে গিয়ে হাত পুড়ছে ক্রেতার। কোথাও কেজিপ্রতি ৩৪ টাকা দাম দিতে হয়েছে। কোথাও আরও বেশি।
কেন? ব্যবসায়ী এবং চাষিদের অনেকেই দাবি করছেন, পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে যাওয়ার পথে দাম চড়ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আবার পাইকারি বাজারেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারি বাজারে আলুর দাম ২২ টাকা কেজিতে নামিয়ে আনার জন্য রাজ্য সরকার নির্দেশ জারি করেছে। কোন পথে তা সম্ভব হবে, জল্পনা শুরু হয়েছে নানা মহলে। কেউ কেউ মনে করছেন, মাঠ থেকে বাজার— আলুর এই যাত্রাপথে কোথাও কোনও নিয়ন্ত্রণ না-থাকার জন্যই দাম লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
রাজ্যের অন্যতম আলু উৎপাদক জেলা হুগলি। এখানকার নামী পাইকারি বাজার শেওড়াফুলি হাট। এখানে জ্যোতি আলু প্যাকেট-প্রতি (৫০ কেজি) দাম ১৪৩০ টাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। অর্থাৎ, কেজিপ্রতি দাম পড়ছে প্রায় ২৮ টাকা ৬০ পয়সা। চন্দ্রমুখীর দাম ১৫৫০ টাকা প্যাকেট। অর্থাৎ, কেজিপ্রতি ৩১ টাকা।
আরামবাগের ‘পুরাতন সব্জি বাজার’টিও পাইকারি বাজার। সেখানে জ্যোতি আলুর দাম প্যাকেট-প্রতি ১৩৩০ টাকা। অর্থাৎ, কেজিপ্রতি ২৬ টাকা ৬০ পয়সা। চন্দ্রমুখী ১৪৫০ টাকা প্যাকেট। অর্থাৎ, এক কেজি ২৯ টাকা।
এই শেওড়াফুলি হাট বা পুরাতন সব্জি বাজার থেকে কেনা আলু ক’টি হাত ঘুরে বাজারে আসছে, এরও কোনও উত্তর নেই কারও কাছে। আলুর দামের সরকারি পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘ক্রেতাদের থেকে এক শ্রেণির আলু ব্যবসায়ী যে অযৌক্তিক বেশি টাকা নিচ্ছেন, এটা ঠিক। এই প্রবণতাকেই আমরা ঠেকাতে চাইছি।’’
এখন যে আলু বাজারে বিকোচ্ছে, তা ফলেছে গত মার্চ-এপ্রিলে। হুগলির বহু চাষিই জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যবসায়ীদের বিক্রি করেছিলেন ১০-১১ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ, প্যাকেটপ্রতি ৫০০-৫৫০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা সেই আলু হিমঘরে রেখে বাজারে ছাড়েন।
আরামবাগের এক বড় ব্যবসায়ী জানান, হিমঘরে আলু রাখলে কেজিপ্রতি ১ টাকা করে দিতে হয় হিমঘর-মালিককে। বের করার সময় বাছাইয়ের কাজে খরচ হয় কেজিপ্রতি আরও ৫ টাকা। তিনি বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারে পাঠাতে এ বার পরিবহণ খরচ, মজুর খরচ মিলিয়ে লাভ রেখে কেজিপ্রতি ২৪-২৬ টাকা দাম নিচ্ছি। অন্যবার একটু কম থাকে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরো ব্যবসায়ীরা সাধারণত এক টাকা বেশি দামে আলু নিয়ে যান। তার উপরে তিন-চার টাকা লাভে বিক্রি করেন। কিন্তু এ বার তাঁরা ৯-১০ টাকা করে লাভ করছেন।’’
কিন্তু দু’টি পাইকারি বাজারে আলুর দামের ফারাকই বুঝিয়ে দিচ্ছে, অঙ্ক সহজ নয়। পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজার— এই পথেই দামের বিপুল ফারাক ঘটে যাচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের দাবি, সমস্যাটা মূলত এই অংশেই। তাই নজর দিতে হবে এখানেই।
আলু ব্যবসায়ী সমিতি-র সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় জানান, প্রতি মাসে এ রাজ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ টন আলু লাগে। এক লক্ষ টন আলু যায় ভিন্ রাজ্যে। রাজ্যের হিমঘরগুলিতে এখনও ২৮-২৯ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে। আগামী কয়েক মাসে তাই জোগানে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আলুর দামবৃদ্ধিতে তাই জোগানের স্বল্পতার যুক্তি খাটে না নেই বলেই মনে করছেন ওই ব্যবসায়ী। প্রচুর আলু মজুত থাকা সত্ত্বেও আলু কিনতে হাত পুড়ছে ক্রেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy