কেন্দ্রের চিঠিতে বলা হয়েছে, বিয়ের মরসুম, পুজো ইত্যাদি উৎসবের পর রাজ্যে কোভিড পরীক্ষার হার কমেছে।
কোভিড পরীক্ষার হার বাড়ানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার পরেই সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে কোভিড পরীক্ষার হার নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিয়ের মরসুম, পুজো ইত্যাদি উৎসবের পর রাজ্যে কোভিড পরীক্ষার হার কমেছে। ফলে সেই চিত্রটি স্পষ্ট ভাবে অনুধাবন করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কোভিড পরীক্ষা বাড়ানোর কথা বলে বাংলা-সহ দেশের অন্য আরও ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
ওই চিঠি আসার পর সরকারি মহলে রাজ্যে কোভিড পরীক্ষার হার নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকদের একাংশ আগে থেকেই বলা শুরু করেছিল যে, রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় কোভিড পরীক্ষার হার যথেষ্ট কম। কেন কম, তা নিয়েও ওই চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা ছিল। তাঁদের মতে, বিভিন্ন কারণে ওই হার কমিয়ে দেখাতে চাওয়া হয়েছে। যাতে রাজ্যে কোভিড রোগীর সংখ্যা না বৃদ্ধি পায়। সে কারণেই পরীক্ষার হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ কোনও সময়েই কোভিড পরীক্ষার দৈনিক সংখ্যা বাড়াতে পারেনি। সেখানে ওডিশা, অসম বা বিহারের মতো রাজ্য নিয়মিত দিনে ১ লক্ষের কাছাকাছি পরীক্ষা করিয়েছে। আবার কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য দিনে ২ লক্ষ কোভিড পরীক্ষাও করেছে। সেখানে বাংলায় গড়ে দৈনিক কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার। মাত্রই কয়েকটি ক্ষেত্রে তা দিনে ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু কখনওই নিয়মিত ভাবে কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা দিনে ১ লক্ষে পৌঁছয়নি।
কেন এমন হয়েছে, তার বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। একাংশের বক্তব্য, সরকারি আধিকারিকদের একটি গোষ্ঠী বেশি সংখ্যায় পরীক্ষা করাতে চাননি। তা হলে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে এবং তার পর ভবানীপুর-সহ অন্যান্য উপনির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারত। কোভিড প্রতিদিনই বাড়ছে— এই শঙ্কায় বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিতে আসতেন না। তা ছাড়া, উপনির্বাচন করানোও কঠিন হতে পারত। বস্তুত, রাজ্যের বিরোধীদল বিজেপি তো সেই দাবিই তুলেছিল!
ফলে সরকারি আধিকারিকদের ওই অংশ দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে চাননি। পাশাপাশিই, সরকারি আধিকারিকদের একটি অংশ ‘গ্রিন জোন’-এ পরীক্ষার উপর জোর দিয়েছিলেন। যেখানে এমনিতেই সংক্রমণের হার কম।
সরকারি মহলের একাংশের বক্তব্য, প্রথম থেকেই ‘গ্রিন জোন’-এ বেশি কোভিড পরীক্ষা করার দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা স্পষ্ট ছিল যে, তাতে সঠিক চিত্রটি পাওয়া যাবে না। তা সম্যক মুঝেই এক সিনিয়র সরকারি আধিকারিক সেই প্রক্রিয়ায় বদল ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনিও দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে পারেননি।
রাজ্যে এবং রাজ্যের বাইরে কোভিড চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমাদের দেশে কোভিড নিয়ে বৈজ্ঞানিক সাড়ার চেয়ে রাজনৈতিক সাড়াটা বেশি। সমস্ত রাজনৈতিক দল তার নিজের নিজের মতো করে কোভিডে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে গোলমাল করেছে।’’ ওই চিকিৎসকের আরও বক্তব্য, কোভি়ড নিয়ে সারা ভারতে সবচেয়ে খারাপ সাড়া তিনটি রাজ্যে— উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশ। তবে বাকি রাজ্যগুলিও সংখ্যা নিয়ে নিজেদের মতো করে বিভিন্ন খেলাধুলো করেছে। একমাত্র স্বচ্ছতা দেখিয়েছে কেরল। তবে তারাও আবার মৃতের সংখ্যা নিয়ে গোলমাল করেছে!’’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক পদস্থ আধিকারিকের আবার দাবি, এই পরিকাঠামো নিয়ে দৈনিক পরীক্ষা বাড়ানো সম্ভব নয়। তা যে একেবারে অযৌক্তিক দাবি, তা নয়। সত্যিই বিপুল পরিমাণ পরীক্ষা একদিনে করানোর মতো পরিকাঠামো রাজ্যে অপ্রতুল। কিন্তু আবার তার অর্থ এই নয় যে, দৈনিক ১ লক্ষের অনেক আগে থেমে যেতে হবে।
সে কারণেই রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ালে কোভিড রোগীর সংখ্যা দৈনিক কী বেরোবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। হয়ত দেখা যাবে, পরিস্থিতি মোটেই ‘অনুকূল’ নয়। সে কারণেই দৈনিক কোভিড পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy