Advertisement
E-Paper

পুলিশের ক্ষমতা বাড়িয়েও সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার কেন, প্রশ্ন

যদিও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ফোন করা হয়েছিল। মোবাইল-বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও জবাব মেলেনি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শিবাজী দে সরকার, চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০৭
Share
Save

ব্যবধান মাত্র আট দিনের। তার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিপুল ক্ষমতা জেলাশাসকদের থেকে নিয়ে পুলিশের হাতে দিয়েও তা প্রত্যাহার করল রাজ্য সরকার। তা ঘিরেই তীব্র কৌতূহল ছড়িয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। কারণ, পুলিশের ওই ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদ-কাণ্ডের শুরুতে। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৮ এপ্রিল, শুক্রবার থেকে। কিন্তু তার আগেই বৃহস্পতিবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার হয়েছে।

যদিও প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের থেকে গোটা বিষয়টি নিয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে ফোন করা হয়েছিল। মোবাইল-বার্তাও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও জবাব মেলেনি।

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভের কারণে গত ৮ এপ্রিল থেকে অগ্নিগর্ভ হতে শুরু করেছিল মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি। ৯ এপ্রিল রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর লিখিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়— ১৮ এপ্রিল থেকে পুলিশকর্তাদের একাংশ ‘বিশেষ এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট’ (স্পেশাল এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে নিযুক্ত হবেন। অন্য কাজের পাশাপাশি তাঁরা ‘এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে প্রধানত আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ করতে পারবেন। তাতে রাজ্য পুলিশের ডিজি, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা), পুলিশের জ়োন বা রেঞ্জের সব এডিজি, আইজি, ডিআইজি এবং সব পুলিশ সুপারের ক্ষমতা বাড়ত। তাঁরা প্রয়োজন অনুযায়ী ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারা (আগের ১৪৪ ধারা) প্রয়োগ করা ছাড়াও ‘প্রিভেন্টিভ ডিটেনশন’, বিএনএসএস-এর ১২৬, ১২৭, ১২৮ এবং ১২৯ ধারা প্রয়োগ করতে পারতেন।

প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, চলে আসা প্রথা অনুযায়ী, এই ক্ষমতাগুলি ‘এগজ়িকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট’ হিসেবে ছিল জেলাশাসকদের হাতেই। নবান্নের নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার থেকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার আরও একটি আদেশনামা প্রকাশ করে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর জানায়, পুলিশের ক্ষমতাবৃদ্ধি সংক্রান্ত আগের আদেশনামাটি প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এ ভাবে ক্ষমতা দিয়েও কেন তা প্রত্যাহার করা হল, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি পুলিশকর্তাদের অনেকেই।

অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জেলাশাসকেরাই প্রয়োজন মতো তাঁদের ক্ষমতার প্রয়োগ করেন। কলকাতায় কোনও জেলাশাসক না থাকায় এই ক্ষমতা রয়েছে সেখানকার পুলিশ কমিশনারের হাতে। তবে বাকি জেলাগুলিতেও এই পদক্ষেপের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ছিল অর্থবহ। পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, কলকাতা পুলিশের নগরপালের মতো ওই ক্ষমতা জেলা পুলিশের হাতে থাকলে যে কোনও জরুরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁরা নিজে থেকেই পদক্ষেপ করতে পারতেন। তাতে জেলাশাসকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকতে হত না।

প্রসঙ্গত, মুর্শিদাবাদ-কাণ্ডের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। জানিয়েছিলেন, সীমান্ত রক্ষার দায় বিএসএফের। ফলেতাদের ভূমিকা নিয়েও বড়সড় অভিযোগ তোলেন তিনি। তা ছাড়া ট্রেনে, বিমানে বা সড়কপথে এ দেশে কোনও মানুষ প্রবেশ করলে আগের মতো এখন আর সেই তথ্য রাজ্য প্রশাসনকে কেন্দ্র জানায় না বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। সেই দিক থেকে নবান্নের প্রথম সিদ্ধান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অবশ্য আধিকারিকদের অপর অংশ জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ-কাণ্ডের শুরুতে পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বদলে বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, নষ্ট হয়েছে ব্যক্তিগত এবং সরকারি সম্পত্তি। এমনকি, প্রাণ হারিয়েছেন তিন জন নাগরিক। ওই ঘটনার নেপথ্যে বাংলাদেশ-যোগের সন্দেহও করছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও সে প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রী বিএসএফ বা কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুললেও, কেন্দ্রের তরফে উচ্চপর্যায়ের কোনও তদন্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাতে মুর্শিদাবাদ-কাণ্ডের শুরুতে পুলিশকে ক্ষমতা দেওয়ার পরেও পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ কী ভাবে হল, সে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেই দিক থেকে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা নিয়েও চর্চা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Murshidabad West Bengal government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}