ব্যস্ত সময়সূচি নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছেন ইডির প্রধান সঞ্জয় মিশ্র। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে কলকাতায় পৌঁছেছিলেন। তার কয়েক ঘণ্টা পর শুক্রবার ঠিক সকাল ১০টায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে চলে এলেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর প্রধান সঞ্জয় মিশ্র। রাজ্যে ইডির সদর দফতর সিজিওতে। কলকাতায় পৌঁছে সঞ্জয় যে সেখানেই প্রথমে যাবেন, তা স্বাভাবিক। তবে জল্পনা শুরু হয়েছে তাঁর সময় নষ্ট না-করা তৎপরতা নিয়ে। ইডি সূত্রে খবর, কিছুটা ব্যস্ত সময়সূচি নিয়েই এ রাজ্যে এসেছেন সঞ্জয়। তিনি কত দিন রাজ্যে থাকবেন, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
রাজ্যে এই মুহূর্তে অনেকগুলি মামলার তদন্ত করছে ইডি। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ‘হাই প্রোফাইল’ মামলা স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির। ইতিমধ্যেই মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধায়ক, সরকারি পদাধিকারী এবং শাসকদলের বেশ কিছু অধুনা বহিষ্কৃত নেতা গ্রেফতার হয়েছেন এই মামলায়। গ্রেফতার হয়েছেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’ও। তার পর থেকেই নিয়োগের তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে বলে মনে করছে ইডি। সুজয় এক সময়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অফিসে কাজ করতেন। অভিষেককে এখনও ‘সাহেব’ বলে ডাকেন তিনি। ইডির দাবি, এই ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়োগ মামলার ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র’ হতে পারেন। সেই সুজয় গত মঙ্গলবার রাতে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানী দিল্লি থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছেছেন ইডির প্রধান সঞ্জয়। ইডি সূত্রে খবর, সঞ্জয়ের ব্যস্ত সময়সূচির অনেকটা জুড়েই রয়েছে এই সব তদন্ত নিয়ে বৈঠক। এমনকি, শুক্রবার বিকেলেই নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠকেও বসতে চলেছেন সঞ্জয়।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও সঞ্জয় বৈঠক করবেন রাজ্যে ইডির স্পেশ্যাল ডিরেক্টরের সঙ্গে। সঞ্জয়ের বৈঠকে থাকার কথা কলকাতা-সহ পূর্বাঞ্চলে ইডির বিভিন্ন জোনের কর্তাদেরও। স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি ছাড়াও রাজ্যে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার পেয়েছে ইডি। হাতে রয়েছে আমির খানের বিপুল টাকা উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত এবং আরও বেশ কিছু মামলার তদন্তভার। তবে এই মুহূর্তে স্কুলে নিয়োগের দুর্নীতির তদন্তটিই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তদন্তকারীরা এখন খুঁজছেন, এজেন্টদের হাত ধরে নিয়োগের কালো টাকা কি মন্ত্রী ছাড়াও আরও কারও কাছে পৌঁছত? সেই টাকা কি যথাস্থানে পৌঁছে দিতেন ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়ই? এক সময় অভিষেকের অফিসের কর্মী হলেও বর্তমানে প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক সুজয়। এমনকি, বেহালায় পার্থের পাড়ায় তাঁর নির্মাণ ব্যবসাও রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে! ইডি যখন এই তথ্যের খোঁজে সুজয়কে হেফাজতে নিয়ে জেরা করছেন, তখনই সিজিওতে পৌঁছেছেন সঞ্জয়।
যদিও ইডি সূত্রে খবর, রাজ্যের ইডির হাতে থাকা তদন্তের কাজ কত দূর এগিয়েছে, কোনটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানতেই কলকাতায় এসেছেন ইডি প্রধান। পাশাপাশি, রাজ্যে যে সমস্ত তদন্তকারী দল তদন্ত করছে, তারা প্রয়োজনীয় সমস্ত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন কি না এবং রাজ্যে ইডির পরিকাঠামোগত কী কী অভাবপূরণের প্রয়োজন, তারও তত্ত্বতালাশ করার কথা সঞ্জয়ের।
তবে সঞ্জয় নিজেও এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। নিয়ম বদলে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার তাঁর মেয়াদ তৃতীয় বারের জন্য বৃদ্ধি করেছিল গত নভেম্বর মাসে। নতুন নিয়মে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ইডির প্রধান হিসাবে দায়িত্বে থাকবেন তিনি। যদিও তাঁর এই মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। হয়েছে মামলাও। ২০১৮ সালে, কেন্দ্রে মোদী সরকার দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় আসার আগের বছরেই দু’বছরের জন্য ইডির প্রধান হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল সঞ্জয়কে। ২০২০ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর মেয়াদ। কিন্তু তার পর থেকে প্রতি বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে সঞ্জয়ের। ২০২০ এবং ২০২১ সালের পর শেষ বার ২০২২ সালে আরও এক বছরের জন্য ইডি প্রধান হিসাবে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে সঞ্জয়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy