(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্মলচন্দ্র রায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজনীতিতে সাধারণ ধারণা, উপনির্বাচনে জেতে শাসকদলই। কিন্তু বাংলায় সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের হার সেই ধারণা ভেঙে দিয়েছিল। বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়েই কি ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে প্রার্থীচয়নে বাড়তি গুরুত্ব দিল তৃণমূল? জলপাইগুড়ি জেলার রাজনীতির সঙ্গে অবহিত অনেকেরই বক্তব্য, ধূপগুড়ি ‘পুনরুদ্ধারে’ অঙ্ক কষেই প্রার্থী দিয়েছে শাসক তৃণমূল।
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে তৃণমূলের হার, সংখ্যালঘু ভোটের বাক্সবদল ইত্যাদি, প্রভৃতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। কিন্তু ফলপ্রকাশের তিন মাসের মধ্যে বামেদের সমর্থনে জেতা কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাসের তৃণমূলে যোগদান সেই আলোচনাকে অনেকটাই স্তিমিত করে দিয়েছিল। কেন একটি উপনির্বাচনে শাসকলকে বিরাট ব্যবধানে হারতে হয়েছিল, তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও আলোচনা কম ছিল না। নেতাদের অনেকেই ঘরোয়া আলোচনায় বলেছিলেন, প্রার্থী বাছাই সঠিক না হওয়ার কারণেই সাগরদিঘিতে হারতে হয়েছে তৃণমূলকে। তবে তার উল্টো অভিমতও ছিল। অনেকে বলেছিলেন, বাইরন জিতেছেন তাঁর নিজের প্রভাবে। তার সঙ্গে দলীয় স্তরে প্রার্থী বাছাইয়ের কোনও সম্পর্ক ছিল না।
মন্ত্রী সুব্রত সাহার মৃত্যুর কারণে সাগরদিঘিতে উপনির্বাচন করতে হয়েছিল। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে লড়েছিলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। দেবাশিস ঘটনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাই। কিন্তু তাঁকে কয়েক বছর আগে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। পরে যদিও ফিরে এসে ব্লক সভাপতি পর্যন্ত হয়েছিলেন তিনি। ভোটের লড়াইয়ে দেবাশিসকে হারিয়ে দেন রাজনীতিতে ‘আনকোরা’ বাইরন।
সাগরদিঘি এখন অতীত। তবে তা থেকে শিক্ষা নিয়েই ধূপগুড়ির নির্বাচনে ‘অতি সতর্ক’ তৃণমূল। সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে ইতিহাসের অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়কে।
কে নির্মলচন্দ্র? তাঁর পরিচয় কি শুধুই অধ্যাপক?
ঘটনাচক্রে, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে দলের বিরুদ্ধেই ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছিলেন নির্মল। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন এই অধ্যাপক। যদিও পরে তিনি দলীয় নেতৃত্বের কথাতেই তা প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গিয়েছিল, তৃণমূলের মিতালি রায়কে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। এখন যাঁর মৃত্যুর কারণে অকালভোট হচ্ছে ধূপগুড়িতে।
এ বার প্রার্থী হতে পেরে তৃপ্ত নির্মল। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি তো ২০২১-এ দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই কারণেই কি এ বার আপনাকে জোড়াফুল প্রতীকে দাঁড় করাল দল? নির্মল বললেন, ‘‘যুদ্ধ ঘোষণা করিনি। ওটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল। মিটে গিয়েছে।’’ তৃণমূলের তরফে উত্তরবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘উনি আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী। এমন একটাও মিটিং-মিছিল নেই যেখানে উনি যান না। সে সব দেখেই দল তাঁকে টিকিট দিয়েছে।’’
তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, ধূপগুড়ি নিছক একটা উপনির্বাচন নয়। রাজনৈতিক ভাবে বেশি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। লোকসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের মাটিতে বিজেপির জেতা আসন ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এই ভোটকে দেখছে শাসকদল। তা ছাড়া ধূপগুড়ি রাজবংশী মহল্লা। সেখানে তৃণমূল জিতলে লোকসভার আগে সামগ্রিক ভাবে উত্তরবঙ্গের রাজবংশী অধ্যুষিত এলাকায় বার্তা যাবে বলেই মনে করছেন শাসকদলের অনেকে।
২০১৬ সালে ধূপগুড়ি দখল করেছিল তৃণমূল। সেবার ভোটে জয়ী বিধায়ক মিতালিকেই ২০২১-এর ভোটে শাসকদল দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু এ বার তিনি টিকিট পাননি। সে কারণে মিতালির অনুগামীরা ভোটে বাগড়া দেবেন না তো? ভোটের লড়াইয়ে নামা নির্মল অবশ্য বলছেন, ‘‘মিতালিকে নিয়ে ওসব ভাবার অবকাশ নেই। ও খুব ভাল মেয়ে। ধর্ম-কর্ম নিয়েই থাকে।’’
এ কথা ঠিক যে, অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে জোড়াফুল শিবিরের প্রার্থী বাছাইয়ে একটা অন্য নকশা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজ্যসভা ভোটেও প্রার্থী বাছাইয়ে সেই ছাপ দেখা গিয়েছিল। যে তালিকায় ছিলেন না কোনও তথাকথিত বিশিষ্টজন। বরং দলীয় রাজনীতির বৃত্তের বাইরে থাকা সামিরুল ইসলামের মতো মুখকে সংসদের উচ্চকক্ষে পাঠিয়েছে শাসকদল। অভিষেকের ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতেও গোপন ব্যালটে দলের নেতাকর্মীদের ভোট নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছিল তৃণমূল। দলের একটি অংশের বক্তব্য, আগামী বছরের লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই ধূপগুড়ির উপনির্বানকে দেখতে চাইছে তৃণমূল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy