—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পুরুষ কণ্ঠ: একটা প্রচার হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়, পুলিশ প্রশাসনের থেকে নাকি আপনাদের আর্থিক... টাকা নিয়ে এসে দিয়ে ধামাচাপা...!
মৃতার বাবা: কে বলল এই কথাটা? কী ভাবে বলল এই কথাটা?
পুরুষ কণ্ঠ: এইটাই তো হচ্ছে, টিভিতে...!
মৃতার বাবা: না না কী ভাবে বলল এইটা? আমাদের এই সব ধরনের কথা বলার দরকার কী, প্রয়োজন কী আছে? এই রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি।
পুরুষ কণ্ঠ: ছি ছি ছি
মৃতার মা: আমরা কাউকেই কিছুই বলিনি।
পুরুষ কণ্ঠ: তা হলে এটা পুরো সম্পূর্ণ একেবারে মিথ্যা গল্প, তাই তো?
মৃতার বাবা: হ্যাঁ। মিথ্যা গল্প বানিয়ে এই সমস্ত শুরু হয়েছে। আমরা বিচার চাইছি। যারা আমাদের সহযোগিতা করবে, তারা দেখুক, আমরা যাতে ন্যায় পাই।
পুলিশ বাড়ি এসে টাকার বান্ডিল নিয়ে দিতে চেয়েছে— আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার বাবা বৃহস্পতিবার রাতে এই অভিযোগ করার পরে শুক্রবার আসরে নামে রাজ্য সরকার। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা সাংবাদিক বৈঠক করে একটি ভিডিয়ো দেখান। তাতেই শোনা যায়, মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে এক পুরুষ কণ্ঠের এই কথোপকথন। এর পরে প্রশ্ন ওঠে, টাকা দিতে চেয়েছিল পুলিশ, এই কথা যদি মিথ্যা বলে বাবা দাবি করে থাকেন, তা হলে এখন আবার টাকা দিতে চাওয়ার অভিযোগ করছেন কেন? উত্তর দিতে গিয়ে মৃতার পরিবার বলেন, ‘‘চাপ দিয়ে ওই ভিডিয়ো করানো হয়েছিল। বোঝানো হয়েছিল, পুলিশকে রাগালে বিচার পেতে কষ্ট হবে।’’
কিন্তু কে বোঝাল? ভিডিয়োয় যে পুরুষ কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে, সেটি কার? কিছু কি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে? সেই কারণেই কি মৃতার পরিবারকে দিয়ে এই ভিডিয়ো করিয়ে রাখা হয়েছিল? মৃতার বাবা-মা এ ব্যাপারে শুক্রবার বলেন, ‘‘যা বলার সিবিআই-কে বলেছি।’’ বৃহস্পতিবার পুরনো ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে সিবিআই। সূত্রের খবর, নিজেদের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে নেমেছে কলকাতা পুলিশও। তাতেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। যা কলকাতা পুলিশের তরফে সরাসরি সিবিআই-কে পাঠানো হচ্ছে বলেও লালবাজারের শীর্ষ স্তর সূত্রে খবর। এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার মন্তব্য, ‘‘যা ঘটছে, সবই পুলিশ করেছে বলে চালানো হচ্ছে। অন্যের দোষের দায় না নিয়ে এ বার কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটা হবে।’’
দুই তদন্তকারী সংস্থা এ ব্যাপারে তদন্ত করে এখনও পর্যন্ত যা পেয়েছে, তা হল, ৯ অগস্ট সন্ধ্যায় ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ নিয়ে মৃতার বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে ঘণ্টা দেড়েক দেহ তাঁর বাড়ির দোতলায় শায়িত ছিল। এই সময় প্রশাসনিক ভাবে পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয় বার বার। এক নেতা টাকা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ‘পরে দেখা যাবে, ক্ষতিপূরণ চাই, কিন্তু টাকা নয়’ বলে ফেরানো হয় পরিবারের তরফে। এর পর মৃতদেহ দ্রুত দাহ করার জন্য উত্তর ২৪ পরগনার একটি শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই গোটা যাতায়াতের পথের সমস্তটাই ব্যবস্থা করেন প্রভাবশালী এক নেতা। তিনি নিজেকে মৃতার কাকু বলে দাবি করেছেন আগাগোড়া। শ্মশানে দাহকাজের নিয়ম অনুযায়ী, পরিবারের কারও সই লাগে। সেই সই করে দেন ওই ‘নেতা-কাকু’ই। এ নিয়ে বিতর্ক হয়।
তবে কি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এই ভাবে মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে তিনি দাহ করিয়ে ফেলেন? প্রশ্ন ওঠে। এর পর সামনে আসে, শুধু শ্মশানে সই করাই নয়, টালা থানায় বসে পরিবারের অভিযোগপত্রও নিজে হাতে লেখেন এই ‘কাকু’। অভিযোগ, ওই সময়ে মৃতার বন্ধুর পরিচিত আইনজীবী অভিযোগপত্র লিখতে চাইলেও ‘কাকু’ তা করতে দেননি। সেখানে মৃতার বাবার বয়ানে রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা থাকার কথাও লেখা হয়। প্রশ্ন ওঠে, সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাই সরকারের ভূমিকায় পরে প্রশ্ন উঠতে পারে ভেবেই কি লেখানো হয়েছিল এই বয়ান?
তদন্তে উঠে এসেছে, এর পর গত ১১ অগস্ট মৃতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান চিকিৎসকেরা। ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম ফর ডক্টর্স’-এর প্রতিনিধি সুবর্ণ গোস্বামী বেরিয়ে দাবি করেন, ‘‘মৃতার মা আমায় বলেছেন, পুলিশ তাঁদের টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’’ কিন্তু এই দাবি সম্প্রচার হওয়ার পরই রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁদের বাড়ি যান এক ব্যক্তি। তিনিই মৃতার বাবা-মাকে বোঝান, ‘পুলিশ-প্রশাসনকে রাগালে বিচার পেতে সমস্যা হবে’। এর পরে ওই ব্যক্তির ফোনেই ভিডিয়ো তোলানো হয়। এ ব্যাপারে এ দিন বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি মন্ত্রী শশী পাঁজা। রাত পর্যন্ত মেসেজেরও উত্তর দেননি তিনি।
তবে কলকাতা পুলিশ এবং সিবিআই সূত্রে দাবি, এই ব্যক্তি কোনও ভাবেই পুলিশের লোক নন। সূত্রের খবর, এক সময় বাম রাজনীতি করলেও পরে অন্য দলে নাম লেখান এই ব্যক্তি। বর্তমানে এক কাউন্সিলরের হয়ে মৃতার বাড়ি যে জায়গায়, সেই ‘এলাকা দেখার’ দায়িত্ব রয়েছেন তিনি। সেই সূত্রেই এই ঘটনায় প্রথম থেকেই ‘অতি সক্রিয়’ দেখা গিয়েছে তাঁকে। লালবাজার সূত্রের দাবি, সেই কারণেই এই ভিডিয়ো পুলিশের কাছে না পৌঁছে চলে গিয়েছে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের কাছে। মৃতার বাবা-ও বলেছেন, ‘‘এই ভিডিয়ো রাজনৈতিক দল পেল কী করে, ভেবে পাচ্ছি না।’’
ভিডিয়োয় শোনা যাচ্ছে যে গলা, সেটি কার? নানা ঘটনায় বার বার নাম জড়ানো সেই ‘প্রভাবশালী কাকু’ এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘সবাই বলছে ওটা নাকি আমার গলা। তবে সৌভাগ্যক্রমে আমি ওই দিন বিহারে ছিলাম। আগ বাড়িয়ে পরোপকারী হওয়া এবং একটু ভাল ব্যবহার পেলেই সকলকে ভরসা-বিশ্বাস করার জন্যই আমায় এখন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’ সূত্রের খবর, এই পরিস্থিতিতে ভিডিয়োর ওই পুরুষ কণ্ঠস্বরের অধিকারীকে নতুন করে নিজের ফোন নিয়ে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy