সুনসান বাহালনগর। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
গ্রামের অদূরে নিশ্চুপে শুয়ে আছে কবর। মাটি শুকোয়নি। বাহালগ্রামের শোকে এখনও বুঝি তা ভিজে। ঘুরে ফিরে সেই কবরের কাছে শুক্রবারও মানুষের আনাগোনা। ফুল, চাদর, ধূপের স্তূপ।
গ্রামে ফেরা পাঁচ মৃত শ্রমিকের সেই সার দেওয়ার কবরের উপরে এ দিনও মোনাজাত। দূর থেকে প্রার্থনা। স্বজনের কান্নার মতো গুনগুন আক্ষেপ। শোক যেন ভুলতে পারছে না বাহালনগর।
এ দিন, গ্রামের মসজিদে নমাজে যাওয়া মানুষদের মধ্যেও তাই বার বার উঠে এসেছে একই কথা— এ ভাবে এক সঙ্গে পাঁচ পাঁচটি প্রাণ অকালে চলে গেল! এমন মৃত্যু আগে দেখেনি বাহালনগর। মৃতদের পরিবারকে চাকরির আশ্বাস, ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। তবুও বাহার আলি বলছেন, ‘‘টাকা দিয়ে কি শোক ভোলানো যায়!’’
প্রবীণ নাদের শেখ, সেই শোক ভুলতে না পেরেই বোধহয় এ দিনও গুটিগুটি পায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গোরস্থানে। গিয়েছেন আজিমুদ্দিন শেখও। ২০১০ সালে এক বার কাশ্মীরে গিয়েছিলেন আপেলের বাগানে কাজ করতে। ৩৩ দিন ছিলেন। আর কখনও যাননি। বলছেন, “পরিবারগুলো শেষ হয়ে গেল। মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তো অনেকেই। কিন্তু স্বজনদের সেই সব মুখ কি ভোলা যায়!’’
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যখন বশিরুল সরকারকে নিয়ে গ্রামে ঢোকে পুলিশের কনভয়, দূরে মুরসালিমের বাড়ি থেকে তখনও ভেসে আসছে কান্নার রোল। মা-স্ত্রীর বুকফাটা আর্তনাদ শুনে থমকে পড়েছিলেন বশিরুলও। এর মধ্যেই দাবি উঠেছে বাহালনগরে কাতরাসুর ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের।
মৌলানা বাণী ইসরাইল বলছেন, “ জানি মৃত মানুষগুলো আর ফিরবে না। কিন্তু তাদের পরিবারের কি হবে? কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা হয়নি। কে মারল, কেন মারল, কোন আক্রোশে মরতে হল নিরীহ শ্রমিকদের তা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানো উচিত তাদের।’’
কথাটা তাঁর একার নয়, তামাম এলাকার লোকজনেরও বক্তব্য, ‘‘যাঁরা গেলেন তাঁরা ফিরবেন না। কিন্তু সত্যিটা জানা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy