শিশুসন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে ভরে বাড়ি ফেরেন কালিয়াগঞ্জের এক ব্যক্তি। বিভিন্ন সময়ে দেহ নিয়ে ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে না পেরে পরিজনদের চরম ভোগান্তির ছবি সামনে এসেছে। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কাছে দাঁড়িয়ে শববাহী গাড়ি। শনিবার। ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের নির্দেশ, রোগীর মৃত্যু হলে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকেই। কিন্তু তার খরচ কে দেবে, জানেন না অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের প্রশ্ন, “বিষয়টি মানবিক হলেও এর জন্য কোন তহবিল থেকে খরচ করা যাবে, নীতি কী হবে, তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। তা হলে নির্দেশ কার্যকর হবে কী ভাবে?”
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিশুসন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে ভরে বাড়ি ফেরেন কালিয়াগঞ্জের এক ব্যক্তি। বিভিন্ন সময়ে দেহ নিয়ে ফেরার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে না পেরে পরিজনদের চরম ভোগান্তির ছবি সামনে এসেছে। যা নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্য তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মৃতদেহ সসম্মানে পরিজনদের হস্তান্তর করতে হবে। তখনই হাসপাতাল জেনে নেবে, শববাহী গাড়ি লাগবে কি না। যদি না লাগে, তা হলে তা লিখিয়ে নিতে হবে। গাড়ি লাগলে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। এর জন্য স্থানীয় পুরসভা ও পঞ্চায়েতের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে।
শববাহী গাড়ির চালকদের একাংশ টাকার জন্য কতটা জুলুম করেন, তা সকলেই জানেন। তাই সিংহভাগ মানুষই চাইবেন, হাসপাতাল গাড়ির ব্যবস্থা করে দিক। সে ক্ষেত্রে এত গাড়ি আসবে কোথা থেকে? কারণ, রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালেরই নিজস্ব শববাহী গাড়ি নেই। শহরের একটি সরকারি হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “পুরসভার থেকে গাড়ির ব্যবস্থা যদি করাও হয়, তার বিপুল খরচ দেবে কে? তহবিল কোথায়?” একটি জেলা হাসপাতালের এক আধিকারিক বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর তো নির্দেশিকা দিয়েই খালাস। পরিকাঠামো কোথায়?”
‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “প্রস্তাবটি খুব ভাল। কিন্তু আগে পরিকাঠামো তৈরির অর্থ বরাদ্দ হোক। অন্যথায় মানুষের সুরাহা হবে না।” কিছু হাসপাতাল নিজেদের তহবিল থেকে খরচ মেটানোর কথা ভেবেছে। যেমন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, যাঁদের সঙ্গতি থাকবে না, তাঁদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে। শিলিগুড়ি পুরসভা থেকে দু’টি শববাহী গাড়ি দেওয়া হবে। হাসপাতাল তেলের খরচ দেবে। কোচবিহার এমজেএন মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায় জানান, মা বা শিশু, হাসপাতালে কারও মৃত্যু হলে তা বহন করবে ‘মাতৃযান’। দিন দুয়েকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। যদিও অ্যাম্বুল্যান্সে মৃতদেহ বহন করা যায় না। আর রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতালে মা ও এক বছর বয়সি পর্যন্ত শিশুর জন্য জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের অ্যাম্বুল্যান্স আছে।
মর্গের অবস্থা ও শববাহী গাড়ি সম্পর্কে প্রতিটি হাসপাতাল থেকে তথ্য চেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। শহরের এক মেডিক্যাল কলেজের কর্তার মতে, হাসপাতালে একই সময়ে একাধিক রোগীর মৃ্ত্যু হতে পারে। শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে দিনে সাত-দশ জন করে মারা যান। তা হলে এতগুলি গাড়ি কি পুরসভার রয়েছে? ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “টাকার ব্যবস্থা না করে কী ভাবে শববাহী গাড়ির সমন্বয় হবে?”
আগে দরিদ্রদের জন্য ছিল ‘নিশ্চয়যান’ প্রকল্প। কিন্তু রাজ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা বিনামূল্যে হওয়ার পরে অধিকাংশ জায়গাতেই তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সই যেখানে নেই, সেখানে শববাহী গাড়ির পরিকল্পনা কি বাস্তবায়িত হবে? এক স্বাস্থ্যকর্তার অবশ্য দাবি, “সিদ্ধান্ত যখন হয়েছে, বাস্তবায়নের রূপরেখাও নিশ্চয়ই তৈরি হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy