দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ও বিমান বসু।
পুরনো বিতর্কই আবার নতুন মোড়কে! বিহারে মহাজোটের ফল বাংলায় বাম শিবিরে যেমন উৎসাহ বাড়িয়েছে, তেমনই টেনে এনেছে একাধিক বিতর্কও। কংগ্রেসের সঙ্গে কোন অঙ্কে আসন ভাগ হবে, সেই প্রশ্ন যেমন মাথা চাড়া দিয়েছে। তেমনই বাংলায় বৃহত্তর প্রতিপক্ষ বিজেপি না তৃণমূল, সেই বিতর্কও ইন্ধন পেয়েছে। বিহারে বামেদের মধ্যে সব চেয়ে সফল সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন তৃণমূলের প্রতি তুলনায় ‘নরম’ হয়ে বিজেপিকেই মূল নিশানা করার পক্ষপাতী। কিন্তু সিপিএম এই তত্ত্বের সঙ্গে একমত নয়। তাদের জোটসঙ্গী কংগ্রেসও বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ফারাক খুঁজতে চায় না।
অতীতে সর্বভারতীয় স্তরেই বাম শিবিরে বিতর্ক ছিল বিজেপি না কংগ্রেস, কে মূল প্রতিপক্ষ, সেই প্রশ্নে। কয়েক দশক আগে কেরল-সহ অন্য রাজ্যের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা টেনে প্রয়াত এক সিপিএম নেতার মন্তব্য ছিল, ‘‘বাংলার কমরেডরা সাম্প্রদায়িকতার বিপদ বুঝতে পারছেন না!’’ সময় এবং পরিস্থিতির পরিবর্তনে এখন কংগ্রেস বামেদের রাজনৈতিক সঙ্গী। এ রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলকে একসঙ্গে নিশানা করেই বাম ও কংগ্রেস আন্দোলনে আছে, ভোটের কৌশলও সাজাচ্ছে। কিন্তু বিহারে ১২টি বিধানসভা আসন পাওয়ার পরে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের মন্তব্যে সেই কৌশল নিয়ে বাম মহলে ফের চর্চা হচ্ছে।
দীপঙ্করবাবুর মতে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের গণতন্ত্র-বিরোধী আচরণ বা দুর্নীতির বিষয়গুলি আছে। তবুও আমি বলব, বাংলাতেও বিজেপিকে পয়লা নম্বর প্রতিপক্ষ হিসেবে বামপন্থীদের নিতে হবে। ত্রিপুরা বিজেপি পেয়েছে, অসমে বিজেপি আছে, বিহারে বিজেপি ফিরে এল। পশ্চিমবঙ্গেও লোকসভা ভোটের পর থেকে কী ভাবে বিজেপির দাপট বেড়ে চলেছে, তা বাংলার মানুষ দেখছেন।’’ দীপঙ্করবাবুরা মনে করেন, বিষয় ভিত্তিতে তৃণমূলের বিরোধিতা অবশ্যই হবে। কিন্তু মূল নিশানা করতে হবে বিজেপিকেই। যারা গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন কিছুই মানে না! ঘটনা হল, বাংলায় বামফ্রন্ট ও সহযোগী মিলিয়ে ১৬ দলের মধ্যে লিবারেশন এবং পিডিএস এই তত্ত্ব আগেই পেশ করেছিল। এখন বিহারে তাদের সাফল্যের পরে লিবারেশন সেটা আরও জোরালো ভাবে বলছে।
সিপিএম অবশ্য মনে করে, বাংলায় তৃণমূল সম্পর্কে ‘নরম’ নীতি নিতে গেলে দলটাই উঠে যাবে! এই প্রশ্নে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট থেকে শুরু করে সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু বা মহম্মদ সেলিম— কারওরই দ্বিমত নেই। তাঁদের যুক্তি, বিজেপি যে বড় বিপদ, তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।
কিন্তু এ রাজ্যে সরকারে আছে তৃণমূল। তাদের ‘ছাড়’ দিয়ে বিজেপিকে আলাদা করে নিশানা করার অবকাশ নেই। নীতির প্রশ্নে দু’দলের বিরুদ্ধেই একসঙ্গে সরব হওয়া বরং বাস্তবসম্মত। মালদহ ও রায়গঞ্জে গিয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘বাংলা ও বিহারের পরিস্থিতি আলাদা। এখানে তৃণমূল ও বিজেপি, দুই শক্তিই রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। বিজেপি সাম্প্রদায়িক। তৃণমূলের অনেক কার্যকলাপও তা-ই। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতি নরম বা সমঝোতার কোনও প্রশ্নই নেই!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বামেরা বিজেপি ও তৃণমূল, দু’দলের বিরুদ্ধেই লড়াই করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy