Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

Dengue: ডেঙ্গির মশা মারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র ‘কামান’ সাইক্লোপডিয়া, অপেক্ষায় রাজ্য

ডেঙ্গির মশা মারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-এর সাম্প্রতিক দাওয়াই জলজ প্রাণী সাইক্লোপডিয়া। হালে তাদের কদর বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা আদর করে ডাকছেন ‘সাইক্লপস্’।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:০০
Share: Save:

নিতান্তই ছোট, খান কয়েক শুঁড়, লিকপিকে গোটা দশেক পা আর মাথার উপরে নামমাত্র একটি চোখ — কামান নয়, ডেঙ্গির মশা মারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’-এর সাম্প্রতিক দাওয়াই জলজ প্রাণী সাইক্লোপডিয়া। হালে তাদের কদর বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা আদর করে ডাকছেন ‘সাইক্লপস্’।
কোভিডের দাপটে ডেঙ্গির চোখ রাঙানোকে তেমন আমল না দেওয়াই দস্তুর হয়ে উঠেছিল। কিন্তু করোনার ধার ঈষৎ কমতেই ফের কপালে ভাঁজ ফেলছে ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা। এ বার তাদের নাশ করতে ফের নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর। আর সেই সূত্রেই খোঁজ পড়েছে সাইক্লপসের।
পুকুর-ডোবা-স্রোতহীন বিল, গ্রাম বাংলার পরিচিত জলায় বিস্তর দেখা মেলে এই জলজ প্রাণীদের (প্ল্যাঙ্কটনিক অ্যানিমাল)। তবে, সাইক্লোপডিয়ার মতো নিছকই এলেবেলে জলজ কীটের যে কোনও উপকারিতা রয়েছে, জীববিজ্ঞানীরা এত দিন তা ঠাওর করতে পারেননি। ‘হু’-এর বিজ্ঞানীরা এখন নিদান দিয়েছেন— টপাটপ এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা গিলে সাইক্লোপডিয়া এখন ডেঙ্গির যম হয়ে উঠেছে। ভিয়েতনাম থেকে কাম্বোডিয়া, লাওস থেকে বালি, ইন্দোনেশিয়া কিংবা বোর্নিও দ্বীপ জুড়ে প্রায় মহামারির চেহারা নেওয়া
ডেঙ্গি রুখতে সম্প্রতি এই সাইক্লোপডিয়াই হয়ে উঠেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সেরা বাজি।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে এই নব্য পথ্যে সাফল্য মেলায় এ বার হু-এর বিশেষজ্ঞরা সাইক্লোপডিয়া’র দাওয়াই ছড়িয়ে দিতে চাইছেন এ দেশেও। হু-এর অধিকর্তা (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) পুনম ক্ষেত্রপাল সিংহ বলছেন, ‘‘কলকাতা-শিলিগুড়ি-আসানসোলের মতো শহরাঞ্চলে ডেঙ্গি যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সে খবর আমাদের কাছে রয়েছে। ওই সব এলাকায় হু-এর বিশেষজ্ঞরাও ঘুরে এসেছেন। দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অনুমতি নিয়ে ওই সব এলাকায় সাইক্লোপডিয়া প্রয়োগ করে দেখতে চাইছেন আমাদের বিশেষজ্ঞরা।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জলজ প্রাণী বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ মিলার দীর্ঘদিন ধরেই ডেঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁর গবেষণার সূত্র ধরেই ভিয়েতনাম থেকে মুছে গিয়েছিল ডেঙ্গি। এলিজাবেথ বলছেন, ‘‘সাইক্লোপডিয়ার রকমফের আছে। তাদের উপকারিতাও ভিন্ন। মেসো সাইক্লপস লঙ্গিসেটাস এবং ম্যক্রো সাইক্লপস অ্যালবিডাস-এর পাতে এডিশ মশার লার্ভা পড়লে আর রক্ষা নেই। এক থেকে দুই মিলিমিটার লম্বা এই সাইক্লপডিয়া মিনিটে ৪০ থেকে ৯০টি লার্ভা খেয়ে তারা নিমেষে মশককুলের বংশনাশ করতে পারে। তবে এদেরই আবার মুখে রোচে না এনসেফ্যালাইটিসের উৎস, কিউলেক্স বিশনোই মশার লার্ভা।’’ তিনি জানান, তাদের ‘শায়েস্তা’ করতে পারে পাতি হাঁস বা মাসকভি ডাক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের এক সচিব পর্যায়ের এক কর্তা জানান, হু-এর পরামর্শ মেনে ইতিমধ্যেই ওই দাওয়াই অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার কয়েকটি ডেঙ্গি কবলিত এলাকায় প্রয়োগ করা হয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গেও ওই সাইক্লোপডিয়া ব্যবহারের নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।’’ হু-এর এই নতুন শলা কি প্রয়োগ করে দেখবে স্বাস্থ্য দফতর? রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘বিশেষজ্ঞরা ভাল বুঝলে ব্যবহার করে দেখতেই পারেন।’’ কলকাতা পুরসভার এক কর্তা মানছেন, ‘‘পুরসভার ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ হু-এর নির্দেশ মেনেই চলে। ফলে তারা নতুন কোনও প্রতিষেধক বাতলালে আমাদের বিশেষজ্ঞরা তা ভেবে দেখবেন।’’
সাইক্লোপডিয়া যে এডিশ মশার যম, জীববিজ্ঞানী স্বপন শুরের এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতা রয়েছে। বলছেন, ‘‘গ্রামের ডোবা-পুকুরে এই ধরণের জলজপ্রাণী অনায়াসে মেলে। পুকুরে এক বিশেষ ধরণের ছত্রাকের আশপাশেই এদের বসবাস। জাল ফেলে এদের সংগ্রহ করতেও তেমন ঝকমারি নেই।’’ সেই সঙ্গে লেবু এবং গোলমরিচের তেল ছড়িয়েও এডিশ মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকানো যায় বলে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘‘শহরের জমা জলে কিংবা ঝোপঝাড়ে এই তেল স্প্রে করলেও ফল মিলবে।’’
এর আগে সাধারণ ভাবে মশার লার্ভা ধ্বংস করতে গাপ্পি মাছের ব্যবহার হয়েছে। তবে, সেটি অতি প্রাচীন পদ্ধতি এবং ডেঙ্গি মশার লার্ভার ক্ষেত্রে গাপ্পি কতটা কার্যকরী, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে।
ডেঙ্গির মশা মারতে এ বার তাই সাইক্লপসের কামান দাগার অপেক্ষাতেই রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক!

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE