উচ্চাকাঙ্খাই কি কাল হল ভিকির? গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
গড়িয়াহাট জোড়া খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদার এখনও অধরা। সূত্রের খবর, বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, তিন ভাষাতেই চোস্ত ভিকি ছোট থেকেই সাফল্যের সহজ রাস্তা খুঁজতে মগ্ন। আর সেই শর্টকাটের নেশাতেই একের পর এক অপরাধ। যে অপরাধ সংগঠনে কখনও কখনও ছেলেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন মা মিঠুও।
কাঁকুলিয়া গেট এলাকার বাসিন্দা সুভাষের সঙ্গে বিয়ে হয় মিঠুর। কিন্তু তাঁদের দাম্পত্য কখনওই ‘সুখে’র ছিল না। অর্থনৈতিক টানাপড়েন থেকে শুরু প্রাথমিক সমস্যার। তার পর কালে কালে যা বটগাছের মতো শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে বিভিন্ন দিকে। এর মধ্যেই মিঠুর কোলে আসে বিলাস ও ভিকি। কিন্তু সন্তান এলেও, স্বামী-স্ত্রীয়ে বনিবনা ছিল না। সুভাষের সন্দেহ ছিল, স্ত্রী মিঠুর অন্য কারও সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী-র মধ্যে নিত্য অশান্তি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল বিলাস ও ভিকি। একটা সময় দুই ছেলেকে নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়েন মিঠু। বাড়ি ভাড়া নেন অন্য জায়গায়। মায়ের কাছে থেকেই বড় হতে থাকে দুই পুত্র। লোকের বাড়ি কাজ, জিনিস ফেরি করেও দুই সন্তানের পেট ভরার মতো যথেষ্ট উপার্জন করতে পারতেন না মিঠু। শেষ পর্যন্ত বিলাসকে রেখে আসেন বাপের বাড়িতে।
অন্য দিকে, মায়ের সঙ্গে থাকতে থাকতেই এক লাফে বড়লোক হওয়ার ছক কষতে শুরু করে ছোট্ট ভিকি। সেই শুরু।
ছেলেবেলা থেকেই দারিদ্র ভিকির নিত্যসঙ্গী। কিন্তু মনের মধ্যে সব সময় দপদপ করত, এক দিন বড়লোক হতে হবে। কিন্তু সে জন্য সোজা পথের কাজে তাঁর আপত্তি। তদন্তকারীদের ধারণা, এক লাফে বড়লোক হওয়ার এই নেশাই ভিকিকে টেনে আনে অপরাধের আঙিনায়। মাধ্যমিকের পর পড়া ছেড়ে দিয়ে শুরু পুরোমাত্রায় বড়লোক হওয়ার ‘সাধনা’। কখনও জমি-বাড়ির দালালি, আবার কখনও সরাসরি লোক ঠকানো, ভিকি তখন অর্থ-লোভে অন্ধ। এ ভাবেই এক দিন টাকার লোভে মা ও দাদার সঙ্গে মিলে বাবাকে খুনের চেষ্টা করেন ভিকি।
শোনা যায়, কাঁকুলিয়া রোড এলাকায় এক দিন বাবা সুভাষের সঙ্গে দেখা করতে আসেন ভিকি। কিন্তু তখন তাঁকে চেনার উপায় নেই। ধোপদুরস্ত জামাকাপড়, মানানসই মুখের ভাষা। সঙ্গে হাল আমলের গাড়ি। ভিকি বাবাকে জানান, তিনি ইঞ্জিনিয়ার, বিয়েও করেছেন, ফ্ল্যাট কিনতে চান। ঘটনাচক্রে, সেই সময়ই বাড়ি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন সুবীর চাকী। প্রথমে বাবার সঙ্গে বাড়ির একাংশ কিনতে চান ভিকি। কিন্তু সুবীর রাজি না হওয়ায় পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফের তিনি নাম এবং মোবাইল নম্বর বদলে যোগাযোগ করেন সুবীরের সঙ্গে। জোড়া খুনের কারণ হিসাবে লুঠপাট ছাড়া ভিকির আক্রোশের কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ভাষার উপর ছোট থেকেই দখল ভিকির। নিজে মাধ্যমিকের পর পড়া ছাড়লেও বড়লোক হওয়ার বাসনায় তিনি একাধিক ভাষা শিখেছিলেন যত্ন করে। শোনা যায়, হিন্দি ও ইংরেজিতে সমান দড় ভিকি পাড়ায় পরিচিতদের সঙ্গে কখনওই বাংলায় কথা বলতেন না। উল্টে তাঁর ভাষার উপর দখল ও সাবলীল শব্দ প্রয়োগ দেখে চোখ কপালে উঠত পাড়া প্রতিবেশীর।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, গড়িয়াহাটে জোড়া খুন ছাড়াও একাধিক অপরাধমূলক কাজে জড়িত ভিকি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এই সমস্ত ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনে সেই ব্যক্তির উচ্চাকাঙ্ক্ষা। যে আকাঙ্ক্ষাকে লালন করে রূপ দেওয়ার মতো শিক্ষা তাঁর কাছে নেই। সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষাই কি শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঠেলে দিল গাঢ় অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে? দারিদ্রের জাল ছিঁড়তে গিয়ে কি ভিকি নিজেই জড়িয়ে পড়লেন অপরাধের গোলকধাঁধায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy