গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
‘সিঙ্গুরের মাটিতে প্রথম সর্ষে বীজ ছড়িয়েছিলেন কে?’ সিঙ্গুর গোলাপ মোহিনী মল্লিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। সমাজমাধ্যমে ওই প্রশ্নপত্র ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। স্কুলের প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অনেক অভিভাবকই। স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে রাজনীতির ছোঁয়া দেখছে বিজেপি। তৃণমূল বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে নারাজ। আর স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সিলেবাস অনুযায়ীই প্রশ্ন করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অষ্টম শ্রেণির একটি পাঠ্যবইয়ের নাম ‘অতীত ও ঐতিহ্য’। ওই ইতিহাস বইয়ের একটি অধ্যায় হল, ‘কৃষি জমির অধিকার, সিঙ্গুর গণ আন্দোলন’। সেখানে হুগলির সিঙ্গুরে টাটা গাড়ির কারখানাকে কেন্দ্র করে জমি অধিগ্রহণ, কৃষকদের আন্দোলন থেকে জমি ফেরত দেওয়ার পর্ব-সহ আন্দোলনের নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে কেন সিঙ্গুর আন্দোলনের কথা আছে, এ নিয়ে অতীতে শিক্ষামহলে বিতর্ক হয়েছে। এ বার সিঙ্গুর গোলাপ মোহনী মল্লিক উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বার্ষিক ইতিহাস পরীক্ষার প্রশ্ন ঘিরে আবারও শুরু হল নতুন বিতর্ক। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তির্যক মন্তব্য।
২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে সিঙ্গুরে কারখানা করার জন্য যে ভাবে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তাতে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি ছিল। ঘটনাক্রমে রাজ্য সরকারকে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ বলে বর্ণনা করে রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল। সিঙ্গুরের ওই জমিতে কৃষিকাজ শুরুর প্রতীকী হিসাবে ২০১৬ সালেরই ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্ষে বীজ ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু ওই প্রশ্ন কেন পরীক্ষায় এল এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। সিঙ্গুরের বিজেপি নেতা মধুসূদন দাসের দাবি, পাঠ্যপুস্তকে সিঙ্গুর আন্দোলনের ইতিহাসটাই ভুলে ভরা। তাঁর কথায়, ‘‘ভুল ইতিহাস শিখিয়ে পড়ুয়াদের পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। ইতিহাসে যাঁদের নাম আছে, তাঁদের অনেকে দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী থেকে সচিব— সবাই জেলে। আর নীচে নামার জায়গা নেই! রাজ্যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা দাসদাসীতে পরিণত হয়েছেন। শাসকদল যা বলবেন, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তা করতে বাধ্য থাকবেন।’’ তবে পাল্টা সিঙ্গুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি গোবিন্দ ধাড়ার ব্যাখ্যা, ‘‘সিঙ্গুরের জমি ফেরত পাওয়ার পর ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম টাটার মাঠে সর্ষে ছড়িয়েছিলেন। এটা তো পাঠ্যপুস্তকের সিলেবাসে আছে এবং সেখান থেকেই প্রশ্ন হয়েছে।’’ তৃণমূল নেতার দাবি, বিজেপি এ নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
যে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সেই সিঙ্গুর গোলাপ মোহিনী মল্লিক উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বনানী চৌধুরী জানান, অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে ‘সিঙ্গুর আন্দোলন’ বলে একটি অধ্যায় আছে। ওই অধ্যায় থেকে একটি এক নম্বরের ছোট প্রশ্ন করা হয়েছিল। পাশাপাশি শিক্ষিকা একটি ভুল আছে বলেও মেনে নিচ্ছেন। তাঁর কথায়, প্রশ্নটা যদি ‘২০১৬ সালে সিঙ্গুরের মাটিতে কে প্রথম সর্ষের বীজ ছড়িয়েছিলেন?’— এমন হত, তা হলে এই বিতর্ক থাকত না।
উজ্জ্বল চক্রবর্তী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, তাঁদের বাড়ির মেয়ে ওই স্কুলে পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুর গোলাপ মোহিনী স্কুল খুবই নামী স্কুল। মাধ্যমিকে মেধাতালিকায় স্থান করে নেয় ছাত্রীরা। সেই স্কুলে এমন প্রশ্ন করার কোনও মানে হয় না। আমি নিজে এ নিয়ে প্রধানশিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলেছি। আগামিদিনে প্রশ্ন তৈরি করার বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy