ভোটে অস্ত্রের দাপট। রঘুনাথগঞ্জের দফরপুরে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
কোথা থেকে এল এত অস্ত্র-বোমা? প্রশ্নটা ঘুরছে জনমানসে।
শনিবার, পঞ্চায়েত ভোটের দিন সেই সব অস্ত্র নিয়ে দাপাদাপির ছবি ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। খোলা পিস্তল হাতে তাড়া করতে দেখা গিয়েছে যুবককে।
বীরভূমের বগটুই কাণ্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে খোলাখুলি পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাজ্যের যেখানে যত বেআইনি অস্ত্র-বোমা রয়েছে, তা অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। ১৫ মাস কেটে গিয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, হয় ইচ্ছা করেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করেনি পুলিশ। নয়তো অস্ত্র-বোমা বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রে কোনও ‘সমস্যা’ রয়েছে। পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে চিরাচরিত প্রশ্ন নতুন করে দেখা দিয়েছে।
পুলিশ কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, সীমানা পেরিয়ে ভিন রাজ্য থেকে ঢোকা অস্ত্র মূলত পৌঁছচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীদের হাতে। তাঁদের দাবি, কোথায়, কার কাছে অস্ত্র রয়েছে, কোথায় বোমা তৈরি হচ্ছে, সে সব তথ্য পুলিশের কাছে থাকলেও বাস্তবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন উত্তরবঙ্গের একটি থানার দায়িত্বে থাকা এক অফিসারের কথায়, ‘‘মাথা খারাপ নাকি! এ সব করতে গেলে কখন, কার বিরাগভাজন হব! তারপর কোথায় গ্যারেজ করে দেবে! আপস করেই নিজের পছন্দ মতো জায়গাতে থেকে যেতে চান সব অফিসার। আর তার সুবিধা নিয়েই দুষ্কৃতীর দল তাণ্ডব করে বেড়ায়। উপর থেকে লিখিত নির্দেশ পেলে তবেই এখন থানার অফিসারেরা রেড-এ যায়।’’ অভিযোগ, পুলিশের একাংশ রাজনৈতিক নেতাদের সুনজরেও থাকতে চান।
প্রসঙ্গত উঠে এসেছে থানায় নিয়োগ হওয়া সিভিক ভলান্টিয়ারদের একটি অংশের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট এই সিভিক ভলান্টিয়াররা রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকেন। ফলে, গোপনে থানা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চালানোর আগেই নেতার কাছে তার খবর পৌঁছে গিয়েছে, এমন উদাহরণও কম নেই, দাবি থানার অফিসারদের। অভিযোগ, রাজ্য পুলিশ বাহিনীতে থাকা প্রায় দেড় লক্ষ সিভিক ভলেন্টিয়ারের বেশিরভাগই নিয়োগই শাসক দলের মন্ত্রী-নেতাদের সুপারিশে হয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে আর এক থানার অফিসারের অভিযোগ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন গোলমালের সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তাদেরই ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। কার্যত তাঁদের সামনেই বোমা-গুলির লড়াই চলে। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘এই যদি অবস্থা হয়, নিচুতলার অফিসার-কর্মীরা কোন ভরসায় ব্যবস্থা নেবে বলতে পারেন!’’
অভিযোগ, নির্বাচন এলে এখন ঘরে ঘরে তৈরি হচ্ছে বোমা। পুলিশের দাবি, গৃহস্থের বাড়িতে বোমা তৈরি হলে, সেই খবর পুলিশ পর্যন্ত নাও পৌঁছতে পারে। অতটা গভীর নেটওয়ার্ক এখন আর পুলিশের নেই। পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে অস্ত্র ঢোকে রাজ্যে। নির্বাচনের আগেই ওই দুই রাজ্যের পুলিশ প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এ রাজ্যের ডিজি। অভিযোগ, তার আগেই তো যা অস্ত্র ঢোকার তা চলে এসেছে।
সস্তাও হয়েছে অস্ত্রের দাম। একটি সিঙ্গল-শটার পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায়। সেভেন এমএম পিস্তল বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকায়। গুলিও সহজলভ্য।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তার অবশ্য দাবি, নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে। ভোটের আগে প্রায় ২৫০-র মত বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে প্রচুর বোমা। তা হলে কেন এক দিনেই ১৮ জন গুলি-বোমার শিকার হল? তার উত্তর নেই তাঁর কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy