Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

কেটে গিয়েছে পাঁচটা বছর, পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাত মনে পড়ে তাঁর? শুনল আনন্দবাজার অনলাইন

পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে পুড়ে-মরা দম্পতির পুত্র এখন সফল আইনজীবী। শনিবার আবার পঞ্চায়েত ভোট। শুক্রবার ভোটের আগের দিন। শুক্র-রাত পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতও বটে।

এই বাড়িতেই পুড়িয়ে মারা হয়েছিল দীপঙ্করের বাবা-মাকে।

এই বাড়িতেই পুড়িয়ে মারা হয়েছিল দীপঙ্করের বাবা-মাকে। —নিজস্ব চিত্র।

শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ২০:৫০
Share: Save:

পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতটা তাঁর মনে আছে?

মনে আছে। কিন্তু মনে করতে চান না তিনি! তিনি— দীপঙ্কর দাস। পেশায় আইনজীবী।

পাঁচ বছর আগে পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাতে নারকীয় ঘটনা ঘটেছিল কাকদ্বীপে। সিপিএমের ‘সক্রিয় কর্মী’ হিসাবে পরিচিত এক দম্পতিকে বাড়ির মধ্যেই জীবন্ত পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁদেরই পুত্র দীপঙ্কর। পাঁচ বছর পর শুক্রবার আরও একটা পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাত। কী ভাবছেন দীপঙ্কর? কিছু ভাবছেন না। বলছেন, ‘‘ওই রাত যেন আর কারও জীবনে না আসে। আমি আর ওই রাতের কথা মনে করতে চাই না।’’

ভোটের রাজনীতির ‘বঙ্গীয় ঐতিহ্য’ মেনে পাঁচ বছর পরেও বাংলা জুড়ে মৃত্যু অব্যাহত। গত এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। শনিবার ভোটের দিন কী হবে, তা নিয়েও উদ্বেগ এবং আশঙ্কা রয়েছে। আর ভুক্তভোগী দীপঙ্কর বলছেন, ‘‘আমি চাই না কেউ কারও বাবা-মাকে হারাক। ভোট কেন এ রকম হবে? যে ভোট মানুষ কেড়ে নেয়, সেই ভোটের মানে কী?’’

দেবু দাস ও ঊষারানি দাস

দেবু দাস ও ঊষারানি দাস —নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩-১৪ মে’র মাঝরাত। ক্যাটারিংয়ের কাজ সেরে কাকদ্বীপের বুদাখালি গ্রামে ফিরছিলেন বছর কুড়ির তরুণ দীপঙ্কর। বাড়ি পৌঁছনোর কিছুটা আগে থেকেই পোড়া গন্ধ নাকে আসছিল তাঁর। বাড়ির কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন, তাঁদের ঘর পুড়ে ছাই। আরও কিছুটা এগিয়ে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বেলে দেখতে পান, দুটো মাংসপিণ্ড দলা পাকিয়ে পড়ে রয়েছে। একটি দীপঙ্করের বাবা দেবু দাসের। অন্যটি মা ঊষারানির। যাঁর জন্য দীপঙ্কর আইসক্রিম নিয়ে ফিরছিলেন। জোরে প্যাডেল করছিলেন। কারণ, মা আইসক্রিম খেতে চেয়েছিলেন। ঠিক সময়ে বাড়ি পৌঁছতে না-পারলে আইসক্রিম গলে যাবে! সে আইসক্রিমের অবশ্য আর প্রয়োজন পড়েনি। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে স্বামী দেবুর সঙ্গেই গলে গিয়েছিল ঊষারানির দেহ।

গত পাঁচ বছরে মাতলা নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বুদাখালি ছেড়ে এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যত্র এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন পিতৃমাতৃহীন দীপঙ্কর। এর মাঝে বিকাশ ভট্টাচার্যদের সহযোগিতায় আইন পাশ করেছেন। শুক্রবার যখন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন, তখন তিনি সুপ্রিম কোর্টে। একটি মামলার কাজে গিয়েছেন।

বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা, খুন, সন্ত্রাসের ইতিহাস লম্বা। অনেকের মতে, রক্তস্নাত ভোটই বাংলার ‘ঐতিহ্য’। কিন্তু দীপঙ্করের মতো মানুষের কাছে সেই ‘ঐতিহ্য’ বহন করে আনে অসহনীয় স্মৃতি। গত পাঁচ বছরে বার দু’য়েক বুধাখালি গিয়েছিলেন দীপঙ্কর। দেখেছেন, যে বাড়িতে তাঁর বাবা-মা জীবন্ত অবস্থায় ঝলসে যাওয়া মাংসপিণ্ড হয়ে গিয়েছিলেন, সে বাড়ি আরও ভেঙে গিয়েছে। গা বেয়ে উঠেছে গুল্মলতা। শুক্রবার দীপঙ্কর বলছিলেন, ‘‘বাড়িটার সামনে যেতে পারি না! বুকটা ফেটে যায়!’’ বলছিলেন, ‘‘বাবা আমায় সমস্ত ফাইনাল পরীক্ষায় সেন্টারে পৌঁছে দিতে যেত। আমি বলতাম, বড় হয়েছি। তুমি যেও না। শুনত না৷ ল-এর ফাইনাল পরীক্ষার সময়ে তাই বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল।’’ বাবা-মায়ের ‘খুনি’কে শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েই ওকালতি পড়েছেন দীপঙ্কর। মাঝে কলকাতা হাই কোর্ট আইপিএস দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠনেরও নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে মামলা করেছে রাজ্য সরকার। দীপঙ্কর এ দিন জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন-সহ অন্যান্য মামলার কারণে প্রধান বিচারপতির এজলাসে সেই মামলার শুনানি এখনও হয়নি। অন্য দিকে সিটও তদন্ত এগোয়নি।

পাঁচ বছর পর আবার শনিবার পঞ্চায়েত ভোট বাংলায়। যেখানে নিরূপিত হবে গ্রামীণ রাজনীতির হারজিত। কী মনে হয়, এই রাজনীতিই কি বাবা-মাকে তাঁর থেকে কেড়ে নিয়েছে? দীপঙ্কর বলেন, ‘‘নাহ্৷ রাজনৈতিক সমাজবিরোধীরাই এটা করেছে। তাতে রাজনীতির পবিত্রতা নষ্ট হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2023 kakdwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy