আদালতে শাহজাহান শেখ। বৃহস্পতিবার সকালে। ছবি: সংগৃহীত।
সন্দেশখালির ‘নিখোঁজ’ তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ ৫৫ দিন পর গ্রেফতার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্য পুলিশের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, মিনাখাঁ থানার বামনপুকুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শাহজাহানকে। এই গ্রেফতারির জন্য পরোক্ষে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতিত্ব দিচ্ছে শাসক তৃণমূল। তবে এই নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করতে ছাড়ছে না বিরোধী দলগুলি।
বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাটে পৌঁছেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং বসিরহাটের প্রাক্তন বাম বিধায়ক নিরাপদ সর্দার। বেলায় ন্যাজাটেই সভা করবে বামফ্রন্ট। সেখান থেকেই সেলিম শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বলেন, “তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থাকা, জমি লুটেরা শাহজাহানকে মানুষের চাপে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ। অজস্র মামলা থাকলেও এত দিন পুলিশ তাকে স্যালুট করেছে।” নিরাপদের গ্রেফতারি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সেলিমের সংযোজন, “ক্রিমিনালদের সাজানো মামলায় নিরাপদকে জেলে থাকতে হয়েছে। আজকে সেই শাহজাহান লকআপে। বুক চিতিয়ে নিজের এলাকায় ফিরবেন নিরাপদ।’’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি অবশ্য শাহজাহানের গ্রেফতারিতে তাদের আন্দোলনের ‘জয়’ দেখছে। একই সঙ্গে তারা সন্দেশখালির ‘নির্যাতিতা’ মহিলাদের আন্দোলনকেও কুর্নিশ জানিয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছে বিজেপির লাগাতার আন্দোলনের ফলে। সন্দেশখালির মা-বোনেদের লাগাতার আন্দোলনের ফলে।” একই সঙ্গে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ বলেন, “সরকার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানতে চাইছিলেন না, এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে। আমরা বলেছিলাম তৃণমূল সরকারকে বাধ্য করব শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে।”
“আমি গত কালই আপনাদের বলেছিলাম যে, সন্দেশখালির দুর্বৃত্ত শেখ শাহজাহান মমতা পুলিশের নিরাপদ আশ্রয়ে আছে।” তার পরই শাহজাহানের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক লেখেন, “পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে শাহজাহানের এই তথাকথিত গ্রেফতারি এখন ঘোষণা করা হল। কারণ শাহজাহান এবং মমতা পুলিশের মধ্যে পুলিশ লকআপ এবং থানায় সুযোগসুবিধা সংক্রান্ত বোঝাপড়া শেষ হয়েছে।”
বুধবার সকালে এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে পুলিশের ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ রয়েছেন শাহজাহান। শাহজাহানকে জেলে পাঁচ তারা সুযোগসুবিধা দেওয়া হবে এবং শুধু তাঁর জন্যই উডবার্ন ওয়ার্ডে একটি শয্যা খালি রাখা হচ্ছে বলেও দাবি করেন শুভেন্দু।
বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ সূত্র মারফত শাহজাহানের গ্রেফতারির খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ লেখেন, “আদালতের বাধা ছিল, পুলিশ কাজ করতে পারেনি।” তার পরেই তিনি লেখেন “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে আদালত বাধা সরিয়েছে। পুলিশ যা করার করেছে।”
পরে কুণাল বলেন, “আমাদের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, মহামান্য হাই কোর্টের রায়ের একটি অংশের জন্যই পুলিশের হাত-পা বাঁধা হয়ে গিয়েছে। পুলিশ এ সংক্রান্ত (শাহজাহান সংক্রান্ত) মামলায় কোনও পদক্ষেপ করতে পারছে না।” তার পরই কুণালের সংযোজন, “অভিষেক বিষয়টি প্রকাশ্যে আনার পর আদালত সেই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে এবং পুলিশকে কাজ করার ছাড়পত্র দেয়।’’ পরে এক্স হ্যান্ডলে আরও একটি পোস্ট করে বিজেপিকেও আক্রমণ করেন কুণাল। লেখেন, “রাজ্য পুলিশ তো কাজ করল। এ বার সিবিআই নারদ মামলায় সিবিআইয়ের এফআইআর-নাম থাকা শুভেন্দু অধিকারী এবং অ্যালকেমিস্ট চিটফান্ডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর মিঠুন চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করুক।”
সম্প্রতি অভিষেক জানিয়েছিলেন, কোর্টই পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। না হলে রাজ্য সরকারের পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারে। গত সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট জানায়, তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করতে পারবে রাজ্যের পুলিশ। কোনও স্থগিতাদেশ তাতে দেওয়া হয়নি। হাই কোর্টের শেখ শাহজাহান সংক্রান্ত নির্দেশ এবং প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের পরে শাসক তৃণমূল সোমবার আবার দাবি করে, আদালতের কারণেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারেনি রাজ্য পুলিশ। ‘জট’ কেটেছে। সাত দিনের মধ্যে শাহজাহান গ্রেফতার হবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy