উদয়নারায়ণপুরে বন্যা পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
ভেসে গিয়েছে চাষের জমি। জল ঢুকে গিয়েছে ঘরে। হুগলি, দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জল থইথই অবস্থা। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হাওড়া, বাঁকুড়া, বীরভূম জেলার অনেক এলাকায়। আর সেই বন্যার জন্য প্রতিবারের মতো এ বারেও শুরু হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য লড়াই। এই পরিস্থিতিকে প্রথম থেকেই ‘ম্যান মেড বন্যা’ অভিহিত করে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-কে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। না জানিয়ে ডিভিসি পাঞ্চেত এবং মাইথন বাঁধ থেকে বিপুল পরিমাণে জল ছেড়েছে অভিযোগ জানিয়ে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা। তবে সেই চিঠির আগেই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, তাদের অধীনে থাকা ডিভিসি আদৌ একার সিদ্ধান্তে জল ছাড়েনি। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, নিম্নচাপের দরুণ টানা বৃষ্টির জন্যই জল ছাড়তে হয়েছে। আর তার জেরেই বন্যা পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই মমতা ‘অসত্য’ বলছেন বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অন্য দিকে, ডিভিসি দাবি করেছে দায় তাদের একার নয়।
অতীতেও ডিভিসির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মমতা। আর প্রতি বারই ডিভিসির তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত। এই প্রসঙ্গে ডিভিসির এক প্রাক্তন চেয়ারম্যান আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি এখন অবসর নিয়েছি। কিন্তু এই অভিযোগ বার বার শুনতে হয়েছে দায়িত্বে থাকার সময়ে। কিন্তু এটা জানা দরকার যে, ডিভিসি একার সিদ্ধান্তে জল ছাড়তে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই সবটা ঠিক হয়।’’ সাধারণ ভাবে রাজ্যের পক্ষে সেচ দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়র কমিটিতে থাকেন। তবে এ নিয়ে রাজ্যের সেচ দফতরের কোনও কর্তা মুখ খুলতে রাজি হননি।
দামোদর অববাহিকায় বন্যার সমস্যা দীর্ঘকালের। আর সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্যই ডিভিসি তৈরি হয়েছিল। দামোদর নদের অববাহিকা বাংলা ও ঝড়খণ্ড (তখন বিহারের অংশ) মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিটিশ আমলেই বর্ধমানের মহারাজা এবং বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহাকে নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেখানেই ডিভিসি তৈরির পরিকল্পনা হয়। তাতে বড় ভূমিকা ছিল বিআর অম্বেডকরেরও। কাজ শুরু হয় ১৯৪৮ সালের ৭ জুলাই। সেই সময় থেকেই ডিভিসি কিছু নিয়ম মেনে চলে বলে জানান ওই প্রাক্তন চেয়ারম্যান। আর ডিভিসির এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর (সিভিল) অঞ্জনিকুমার দুবে বলেন, ‘‘ডিভিসি নয়, কখন এবং কতটা জল ছাড়া হবে সেটা ঠিক করে দামোদর ভ্যালি রিসার্ভার রেগুলেশন কমিটি। সেই কমিটিতে বাংলা এবং ঝাড়খণ্ড সরকারের প্রতিনিধি রয়েছেন। এ ছাড়াও ডিভিসি এবং সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের প্রতিনিধিত্ব থাকে। প্রতি মুহূর্তে সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে তবেই জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়।’’
কলকাতায় ডিভিসির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে এক কর্তা বলেন, ‘‘একটা কথা জানা দরকার যে সময় মতো জল ছাড়া না হলে কত বড় বিপর্যয় হতে পারে তা কল্পনাতীত। কোনও ভাবে কোনও জলাধার ভেঙে গেলে ভেসে যাবে অনেক জেলা। এখন যেখানে ঘরে জল ঢুকেছে, সেখানে ঘরই থাকবে না তখন।’’ তিনি এটাও জানান যে, প্রতিটি জলাধারেরই জলধারণের একটা সর্বোচ্চ ক্ষমতা রয়েছে। যেমন পাঞ্চেতের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ৪৪৫ ফুট। কিন্তু ৪১০ ফুট হয়ে গেলেই জল ছাড়তে হয়। আবার মাইথনের জলাধারে ৫০০ ফুট পর্যন্ত জল ধরতে পারে। কিন্তু নিয়ম বলছে, ৪৮০ ফুট পার হওয়ার আগেই জল ছাড়া শুরু করে দিতে হবে। অঞ্জনিকুমার বলেন, ‘‘কেউ জানেন না, এমন অভিযোগ করা যাবে না। কারণ, কমিটির সকলকে নিয়ে একটি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপ রয়েছে।’’
বিভিন্ন সময়ে পরিস্থিতি বদলের ফলে সিদ্ধান্ত বদলও হয় বলে জানিয়েছেন ডিভিসির ওই কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবারের কথাই ধরুন। সকালে যা পরিস্থিতি ছিল তাতে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে যথাক্রমে ১০ হাজার এবং ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল। রাতে দেখা যায় ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি কিছুটা কমেছে, ফলে পাঞ্চেত থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ১০ হাজার কিউসেক কমিয়ে দেওয়া হয়। সেটাও সকলকে জানিয়েই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy