Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Firhad Hakim OSD

‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি চালু করার সময় থেকে টানাটানি! পুরনো ‘বিবাদে’ই কি অভিষেকের তিরে ববি?

দুর্নীতির ওই অভিযোগ পুলিশের কাছে পাঠানোর পিছনে অভ্যন্তরীণ বিরোধের ছায়া দেখছে শাসক শিবিরের একাংশ। তাদের মতে, ওএসডি-কে সামনে রেখে আসলে নিশানা করা হচ্ছে মেয়র ফিরহাদকেই।

(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং ফিরহাদের ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম এবং ফিরহাদের ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:০৮
Share: Save:

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ (ববি) হাকিমের ওএসডি-র বিরুদ্ধে সরাসরি থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকে। অভিষেকের নাম করে ওই ওএসডি কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় টাকা তুলেছেন, এমনই অভিযোগ করেছেন ওই দফতরের এক কর্মী। পুলিশ তার পরিপ্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ না-করলেও আলোড়ন শুরু হয়েছে শাসক দলের অন্দরে। সূত্রের খবর, দলীয় নেতৃত্বের কাছে ফিরহাদ এবং অভিষেক, দু’জনেই তাঁদের ক্ষোভ জানিয়েছেন।

দুর্নীতির ওই অভিযোগ পুলিশের কাছে পাঠানোর পিছনে অভ্যন্তরীণ বিরোধের ছায়া দেখছে শাসক শিবিরের একাংশ। তাদের মতে, ওএসডি-কে সামনে রেখে আসলে নিশানা করা হচ্ছে মেয়র ফিরহাদকেই। মেয়রের কাজকর্ম নিয়ে তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছে দলীয় স্তরে যে ‘খোঁজ-খবর’ শুরু হয়েছিল, তার সঙ্গে অভিযোগের যোগসূত্র দেখছে তারা।

কলকাতা পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে তৃণমূলের একাংশে অসন্তোষ আছেই। পরিষেবা পরিচালনা ও রাজস্ব সংক্রান্ত কাজ নিয়ে মেয়রের ভূমিকা বারবার আলোচনায় এসেছে। তাঁর ওএসডি-র বিরুদ্ধে অভিষেকের নাম করে টাকা তোলার অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়ায় বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তৃণমূলের পুর-দলের একটি সূত্রের খবর, মাসখানেক আগে থেকে মেয়রের ‘কাজকর্ম’ নিয়ে খোঁজখবর শুরু হয়। পরিষেবা সংক্রান্ত কাজে মেয়রের ভূমিকা, কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ প্রভৃতি নিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল কাউন্সিলরদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। দু’-এক জন কাউন্সিলর বিষয়টি মেয়রকে জানিয়েছেন। তার মধ্যেই মেয়রের ওএসডি কালীচরণের নামে অভিযোগ পেয়ে গত সপ্তাহে তা পুলিশের কাছে পাঠায় অভিষেকের দফতর। দলের অন্য একটি সূত্রের দাবি, গোটা রাজ্যেই পুর-প্রশাসনের পরিষেবা নিয়ে সমীক্ষা চলছে। কলকাতায় আলাদা কিছু হয়নি। তার সঙ্গে অভিযোগের সম্পর্ক নেই।

মেয়র ফিরহাদ অবশ্য বলেছেন, “আমি দলের শৃঙ্খলাপরায়ণ সৈনিক। দলকে সব জানিয়েছি।” ফিরহাদ ও অভিষেকের দফতরের এই ‘বিবাদ’ দলের মধ্যে যথেষ্ট অস্বস্তি তৈরি করেছে। সূত্রের খবর, তাঁর ওএসডি সম্পর্কে অভিযোগ সামনে আসার পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মেয়র। অভিষেকের দফতরের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ মেয়র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগের ইচ্ছা জানান। মেয়রের বক্তব্য ছিল, এমন ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগে আসলে তাঁকেই হেয় করতে চাওয়া হয়েছে। মমতা তাঁকে শান্ত করতে চাইলে ফিরহাদ পাল্টা বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের ওএসডি-র নামে অভিযোগ করা হলে তা তো মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই যায়! এই ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। তিনি আর মেয়র থাকতে চান না। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ফিরহাদের কথা মানতে চাননি। এবং এ ভাবে মেয়রকে এড়িয়ে তাঁর ওএসডি-র নামে সরাসরি পুলিশে অভিযোগ জানানোয় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রীও।

পুরসভায় মেয়রের ঘনিষ্ঠদের একাংশ বলেছেন, মেয়রের ওএসডি টাকা তোলার হলে মেয়রের নাম করেই তুলবেন। অভিষেকের নাম করে তুলবেন কেন? তিনি তো কোনও প্রশাসনিক পদে নেই। তা হলে কি এই অভিযোগ সামনে এনে এক দিকে যেমন মেয়রকে কোণঠাসা করার চেষ্টা হল, তেমনই দুর্নীতির প্রশ্নে অভিষেকের কঠোর অবস্থানের বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা হল?

মুখ্যমন্ত্রী-মেয়র কথোপকথনের পরে পুলিশের তরফে এখনও ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হয়নি। সূত্রের খবর, দলে অভিষেকও এই নিয়ে তাঁর ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। দলের অন্দরে তাঁর বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দলের মধ্যে থেকেই তা ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু দল বা প্রশাসনের তরফে কোনও নড়াচড়াই নেই! তা হলে জনমানসে কী বার্তা যাবে! দু’দিনের মধ্যেই বিদেশে যাওয়ার কথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। এই টানাপড়েন আপাতত জিইয়ে থাকবে বলেই শাসক শিবিরের ধারণা।

ঘটনাপ্রবাহে ক্ষুব্ধ হলেও তৃণমূল নেত্রীর নির্দেশে ফিরহাদ অবশ্য মালদহ থেকে ফিরে রবিবার কালীঘাটে ‘দিদির দরবার’-এ বসেছিলেন। সাধারণত সুব্রত বক্সীর সঙ্গে ওই আসরে থাকেন জয়প্রকাশ মজুমদার। বক্সী থাকতে পারবেন না জানিয়ে মমতা থাকতে বলেছিলেন ফিরহাদকে।

ফিরহাদ-অভিষেক টানাপড়েন তৃণমূলে নতুন নয়। দলে ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি চালু করার সময় থেকে এই টানাটানি চলছে। লোকসভা ভোটে কলকাতা পুরসভা এলাকায় দলের ফল খারাপ হওয়ায় তা আরও তীব্র হয়েছে। দলের একাংশের মতে, খারাপ ফলের কারণে পুরসভা ও পুর-নিগমে ‘মুখ’ বদলের প্রক্রিয়াও এই বিরোধে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee FirhadHakim KMC TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy